কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে স্বপঞ্জয় চৌধুরী (পর্ব – ২)

সায়লব গোয়েন্দা সিরিজের গল্প

এথলেটসের ডায়েরি

২.

বিকেল বেলায় সায়লব, রাচী, ভূষণ ও নম্রতা নিহত তরুণের বাড়ি গেলেন। হলুদ রঙের আটতলার এ্যাপার্টমেন্ট। তরুণরা থাকেন একদম আটতলাতেই। কলিংবেল চাপা হলো। একটা অদ্ভূত শব্দ ভেসে আসলো কলিং বেলের শব্দে। কিছুটা হরর মুভির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো। তরুণের ছোট বোন নিহা দরজা খুললো। দরজা খোলা মাত্রই ন¤্রতাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল যেন। পুত্রশোকে পাথর হয়ে আছে মা। যেন বিধ্বস্ত স্ট্যাচুর মতো গৃহকোনে পড়ে আছে। বাবা তার আবেগ সামলে নিয়ে কথা আরম্ভ করে।
– এতো প্রাণোচ্ছ¡ল, চঞ্চল ছেলে আমার এই গত ছয়মাসে কীভাবে পরিবর্তন হয়ে গেলো। দেশের জন্য যে এতো বড় অর্জন বয়ে আনলো তার এই করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছিনা বাবা।
– তরুণ কোন রুমটাতে থাকতো? আমরা একটু যেতে চাই ওর রুমে।
সবার হাতেই হ্যান্ড গ্লাভস। ঘড়ের প্রতিটি জিনিস খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা হচ্ছে। তরুণের গিটার, পানি খাওয়ার গ্লাভস, স্কিপিং এর দড়ি কিছুই বাদ যাচ্ছে না। কিন্তু সন্দেহ করার মতো কোন কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। বিছানার চাঁদর সরাতেই রাচী চমকে উঠলো। একটা রক্তমাখা ব্লেড সাদা কাগজ দিয়ে মোড়ানো।
-স্যার, এই দেখুন।
– এটা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান।
-আচ্ছা তরুণ ইউনিভার্সিটির কোন কোন বন্ধুর সাথে মিশতো।
– তরুণের বাবা মাথা চুলকে চিন্তা করছে। ওর বন্ধু বলতে তেমন কেউ ছিল না। তবে ওর এক বান্ধবী ছিল।
মাঝে মাঝে আসতো আমাদের বাসায়। খুব বেশিদিনের পরিচিত বান্ধবী না।
-ওর বান্ধবীর ভেতর কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছেন কখনো?
– না তেমন কোন অস্বাভাবিকতা দেখিনি। তবে একটা বিষয় অদ্ভূত লাগতো। ও যখনই আসতো। তরুণের জন্য
একটা আপেল নিয়ে আসতো। তরুণ আপেল খেতে পছন্দ করতো।
-একটা আপেল। ডায়েরিতো নোট করে নিচ্ছে নম্রতা ।
– ভূষণ শেষ খাটের তলায় বুক ডাউনের ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। একবার উঠছে, আরেকবার নামছে।
– সায়লব একটু বিরক্তির স্বরে বলছে, ভূষণ বাবু এটা আপানার বুক ডাউন দেয়ার জিমনেসিয়াম না।
– ভূষণ বাবু বুক ডাউন থামিয়ে উঠি দাঁড়ায়। যেটাকে আপনি বুক ডাউন ভাবছেন বস। সেটা আসলে
ইনভেস্টিগেসন নট বুক ডাউন।
-খাটের তলায় দেখুন একটা আধা খাওয়া আপেল আর তার একটু দূরে একটা ছেড়া কাগজ।
তরুণদের বাসার কাজের মেয়ে মায়া ঝাড়– নিয়ে আসে। খাটের তলা থেকে কাগজের টুকরো আর আধা খাওয়া আপেলের টুকরো বের করে একটা ঝুড়িতে ভরে।
সায়লব চোখের ইশারায় রাচীকে কাজের মেয়েকে ফলো করতে বলে। রাচী মায়াকে ফলো করে রান্না ঘরে যায়। মায়া দেশলাই ঘষে আগুন ধরিয়ে কাগজটি পুড়ে ফেলতে চাচ্ছে। রাচী থাবা মেড়ে কাগজটি মায়ার হাত থেকে নেয়। ময়লার টুকরি থেকে আধা খাওয়া আপেলের টুকরোটিও একটি সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নেয়। কাগজটি সায়লবের হাতে দেয়া হয়।
কাগজটিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল – I am not rapist.. সায়লব কাজে দু’ আঙ্গুলের টোকা দিয়ে বলে ইয়েস দিস ইজ দ্যা ক্লু। কাগজটি কোনো ডায়েরি থেকে ছেড়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কাগজের উপরের অংশটিতে ছাপার অক্ষরে তারিখ দেয়া আছে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। আপাতত এই আলামতগুলো সাথে নিয়ে সায়লব এর ডিটেকটিভ টিম তরুণদের বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।