গল্পেরা জোনাকি তে সুজিত চ্যাটার্জি

প্রেম যুগে যুগে

রাক্ষস টা তখনই এলো যখন ওরা দু’জন দু’জনকে খুব খুব ভালবাসছিল।
সমস্ত জগৎ কে ভুলে একেবারে নিবিড় আলিঙ্গন আর চুম্বনে ভরিয়ে তুলছিল নিজেদের দেহ আর মন কে।
রাক্ষস টা এলো পাষণ্ড হিংস্র মন আর দন্ড নিয়ে। বললো,,

কী করছ তোমরা এখানে এসব,,!

তার কর্কশ গলার আওয়াজে কেঁপে উঠল নানান রংবাহারি ফুলে ছাওয়া বিশাল সবুজ ঘাসের গালিচা বাগান টা।
কামরাঙা গাছের মাথায় বসে থাকা বউ কথা কও পাখি টা একটু চমকে উঠে পুচ্ছ দুলিয়ে ঘুরে তাকালো একবার তারপর আপন খেয়ালে ডেকে উঠলো,,
বউ কথা কও,,,,,
রাক্ষসের গায়ের উৎকট গন্ধে ফুলেদের সুমধুর সুবাস লজ্জায় মুখ ঢেকে রাখলো।
সে এসব কিছুর তোয়াক্কা না ক`রে পুনরায় গর্জন করলো,,,

কি হলো ? জানতে চাইছি তোমরা কী করছো এখানে ?

ভালবাসার আলিঙ্গন আর চুম্বনের আবেশে ডুবে আছি দুজনায় দু’জনের মধ্যেই ।

অতি মোলায়েম স্বরে জবাব দিলো ওরা।
রাক্ষসের দৃষ্টিতে আগুন। কঠিন দন্ড মহা আক্রোশে মাটিতে ঠুকে তীব্র স্বরে চিৎকার করে বললো,,,

থামো অর্বাচীন নির্লজ্জ। আলিঙ্গন ? চুম্বন ? বেয়াদব দুরাচারী যুবক যুবতী । নিয়ম লঙ্ঘনকারী পাপিষ্ঠ,,, তোরা কি জানিস না এই পবিত্র স্থানে ঐসব বেলেল্লাপনা চুম্বন টুম্বন একেবারেই নিষিদ্ধ ?

ভালবাসাও নিষিদ্ধ ? হা হা হা হা
ভালবাসা নিষিদ্ধ স্থান পবিত্র,,, হায়,, এ কেমন বিচিত্র কথা !!

এখনো কন্ঠে অবাক মিশ্রিত মোলায়েম সুর।
রাক্ষসের আক্রোশ গেল বেড়ে।
আগুন ঝরা চোখে তাকিয়ে বললো,,,

ভালবাসা ? হা হা হা হা হা,,,,
সেসব বস্তাপচা প্রাচীন অকেজো আবেগ নিষিদ্ধ এবং বিতাড়িত হয়েছে অনেক আগেই ।
তোমরা নির্ঘাত ভিন গ্রহের বাসিন্দা তাই সংবাদ রাখার দায় নেই তোমাদের।
এখানে ভালবাসা একটা পণ্যদ্রব্য।
বিকিকিনির বাজারে দেদার বিকোচ্ছে অক্লেশে।
বাজারজাত পণ্যের অনুমোদিত বাজারে রাজকর মিটিয়ে ভালবাসার অবাধ লেনদেন।
কোনো বাধা নাই তাতে। রাজকর মেটালেই সব পাপ মাফ।

তাহলে প্রেম ? সে-ও কী নিষিদ্ধ ?
সে-ও কী বিকিকিনির বাজারের পণ্যদ্রব্য ?

অবশ্যই । সে সবই এখন চুক্তি ভিক্তিক নিক্তি মাপা পণ্য , এমনকি তোমাদের ওই আদুরে চুম্বনও হা হা হা হা হা,,,,

ঠিক তখনই নীল নির্মল আকাশ থেকে উড়ে এলো আট টা সাদা ঘোড়ায় টানা এক বিশাল পুষ্পকরথ।
তাতে দন্ডায়মান এক সুবেশ সমর্থ রাজকুমার। তার দীপ্ত কিরণে ঝলমলিয়ে উঠছিল সমগ্র চরাচর।
পাখিরা উঠলো গান গেয়ে , ফুলেরা দুলেদুলে করলো তাকে অভিবাদন। বাতাসে এলো বসন্তের কুহুতান।
সেই সুকান্তি যুবক একলহমায় প্রেম যুগল কে তুলে নিলো তার রথে।
আর তখনই চারিদিক ভরে গেল ঘন কালো অন্ধকারে। কেউ কিছু বোঝবার আগেই রাক্ষস টা তীব্র আর্তনাদ করে উড়ে গেল আকাশে, তার সারা শরীরে তখন আগুনের লেলিহান শিখা।
মাত্র কিছুক্ষণ। তার পরেই সব শান্ত।
ঘন অন্ধকার গেল ঘুচে। সাতরঙা আলোকে ভরে উঠলো ভুবন।
সুরেলা পাখির গান আর রঙিন ফুলের সুবাসে মাতোয়ারা আমোদিত হলো চরাচর।
বাজলো আলোর বেণু । কে যেন চিৎকার করে বলে উঠলো,,,
” জয় ভালবাসার জয় ” ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।