কবিতায় স্বর্ণযুগে সুব্রত ভট্টাচার্য (ঋক তান) (গুচ্ছ কবিতা)

১| বসন্ত ফিরে গেলো
রাত দুটো
রাই , আমি লজ্জাবতীর শরীর ছুঁয়ে দুষ্টু ভ্রমর হয়ে
ভাবনা ছিলো মনের ভেতর
রং দেবো আজ তোমায় বাঁধন বেনী খুলে।
রং ধনু আঁকবো তোমার শরীর একটু তিলে তিলে —
সাত রঙা রং জুড়ে !
আমার ভালোবাসায় তুমি সিক্ত হবে শীতল শরীর
ধূসর সরণী বেয়ে।
সময়ের কাঁটা ধরে
প্রেমের প্রদীপ জ্বালাও আপন নিঃশেষে
অন্ধ বিশ্বাসে ভালোলাগার
মন তরীখানি ভাসাও প্রতিটি প্রাণকোসে।
বলতে পারো?
অমন করে আছো কেন দূরে ?
আজও নিয়ম করে বসন্তর ঢেউগুলো নিয়ে
তুমি নাও যে আমার খোঁজ —
তাই কি খুঁজি বলো প্রিয়া
অমন করে রোজ।
ভাগ্য আমার ঐ দূর আকাশে, তোমার ভালোবাসায় জেনো।
আমার অশ্রু, ঝড়ের ভাঙন নীল জলরাশি
বেলা শেষে তোমায় মুছতে হবে যেনো।
আমার জীবন কি আষাঢ় ঝরা কান্না?
মোমবাতির মতো পুড়ে যায়
একটু একটু করে আমার সকল ভাবনা।
দোল পূর্ণিমার অন্তরীক্ষে অনচ্ছ বারিধির অবিশ্রান্ত সঞ্চার?
নাকি একমুঠো হৈমন্তী শিশিরের হাহাকার?
নাকি প্রিয়া, মনমরা পলাশ ঝরে পড়ে যায় রাঙা মাটির উপর—
জমছে শুধু বুকের ভেতর
নীলচে অভিমান;
কোন পলাশের একলা ডালে
রাত জাগা পাখি গাইলো গান।
নিঃসঙ্গতার একমুঠো করুণা ভেজা বর্ষার?
মনের রুদ্ধ বন্ধদ্বারে আলো এসে ফিরে গেলো শেষে
বসন্ত – এলো ও ফিরে গেলো
থেকে গেল আঁধার।।
২| রাই আমার প্রেমিকা
রাই আমার প্রেমিকা!
আমি তার খবর না নেওয়া পর্যন্ত, তার কোনো খোঁজ পাইনা! নিখোঁজ হয়ে থাকে, যেনো হারিয়েছে দূর—বহুদূরে!
রাই আমার ব্যস্ত প্রেমিকা,
সারাদিন তার নিদিষ্ট কোনো কাজ না থাকলে-ও,আমাকে সময় দেবার মতোন সময় তার থাকে না! হয়তো বা ইচ্ছেও করে না!
ও আগ্রহ নিয়ে কখনো বলে না,
তুমি কেমন আছো? কি করছো?তোমার শরীরটা ভালো আছে তো? ওষুধ ঠিক মতো খেয়েছো তো?
রাই আমার প্রেমিকা
সে এখন অনেক দূরে,
কেনো দূরে ! ও এখন পাহাড়ের কোলে কিংবা মেঘের আড়ালে বা বরফের দেশে, এ শহর ছেড়ে অন্য শহরে।বন্ধুদের নিয়ে ঘোরাঘুরিতে আনন্দে আত্মহারা। আমি একা, ওর কাছে আমার একা – টা কিছুই নয়, আমি তো ওর আপন হতে পারি নি !
রাই আমার প্রেমিকা,
বকুল ফুলের মালা, লাল টকটকে গোলাপ ফুল তার পছন্দ না! সন্ধ্যা নামার আগে রাস্তা ধরে, আমার সঙ্গে অনেকটা পথ হাঁটতে তার ভালো লাগে না!
রাই আমার প্রেমিকা,
একটুখানি পাশে বসে দু’চারটা কথা বলা কিংবা তার কথা শোনার মতোন সময় সহজেই হয়ে ওঠে না! সহসাই তার দেখা পাইনা, অনেক দিন পর হয়তো অল্প কিছুক্ষণ হয় দেখা; নয়তোবা না!
রাই আমার প্রেমিকা,
আমার কথা তার মনেই থাকে না; আমাকেই বার বার মনে করিয়ে দিতে হয় আমি তার প্রেমিক ! শতাব্দী পর কখনো যদি তার মনে টানে, দুই-এক বার ভালোবাসি বলে; নয়তোবা না!
রাই আমার প্রেমিকা,
হ্যাঁ, ও আমার প্রেমিকা তবে — ও আমার হৃদয়ে জায়গা করতে পারেনি কিংবা আমি পারিনি! এমনো-তো হতে পারে তার হৃদয়ে আমাকে জায়গা দেবার মতো কোনো জায়গা আর অবশিষ্ট নেই – তার বুকের মধ্যে নিয়মিত তার প্রিয়জনের যাওয়া আসা!
রাই আমার প্রেমিকা, —
সে আমার প্রেমিকা, যার সঙ্গে আমার শুধু মুখে মুখেই সম্পর্ক — তার আর কোনো কিছুতে আমি থাকিনা! না থাকি তার আগ্রহে, না থাকি তার ভালোবাসাতে, না থাকি তার অনুভূতিতে, না থাকি তার শরীর জুড়ে!
রাই আমার প্রেমিকা,
তাকে আমি এখন নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারি, সে আমার মৌখিক প্রেমিকা! ও আমার প্রেমিকা; ও আমার মৌখিক প্রেমিকা!
৩| একটা উত্তরের অপেক্ষা
সব প্রশ্নের উত্তর হয় না,
সব প্রশ্নের উত্তর জানা যায়না,
সব কথা বলা হয় না,
আজ বহুদিন আমি আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখি,
শেষ রাতে কেন এত প্রশ্ন আসছে কেনো মনে?
প্রশ্নগুলো জমা হয়
ওতো আসবে বলেছিল
ক্ষণিকের তরে একান্ত আপন হয়ে
সেদিন সব প্রশ্ন করবো তাকে
সেদিন সব উত্তর পাবো।
উচাটন মনকে নাড়া দিয়ে বললাম
একটু কি পাশে এসে বসবে আমার?
তোমার ঐ আলতো ছোঁয়ায় ঘুমিয়ে যেতাম আবার।
বলল,কেন এত রাত জেগে আছো, অপেক্ষা না উপেক্ষা,
আমাদের মধ্যে কথা হোক
আমাদের আবার দেখা হোক —
সদর দরজা খোলা আছে
পথ পানে চেয়ে থাকি
যদি সে আসে একবার,
এই মায়াবী রাতে হালকা বাতাসে উড়l চুল গুলো
কতোটা মোহময়ী করে তাকে।
কতোটা ভাবিয়ে তোলে আমায়
দীর্ঘ রজনী,দীর্ঘশ্বাস ফেলে
প্রহের পর প্রহর জমা হয় অশ্রুসিক্ত সজল নয়ন —
আমার এই জলে ভেজা চোখ,
একটু ও কি ভাবায় না তাকে ?
হয়তো কোন এক শ্রাবণে,
বর্ষার মেঘমালা হয়ে খুজব, নিজেকে আড়াল রেখে।
ঝর্ণার বারি ধারার মতোই,
আমি দেখব ।
কিন্তু সেদিন জীবনের বাস্তবতার সব কিছুর প্রশ্নের
উত্তর আমি পেয়ে যাবো।