মার্গে অনন্য সম্মান শংকর ব্রহ্ম (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৯৩
বিষয় – জগন্নাথের স্নান যাত্রা

দারুব্রহ্ম

রুক্মিনী দেবী একদিন দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, – “হে স্বামীন,
হে প্রিয়তম, আমরা আপনার সেবিকা-প্রেয়সী আপনার সেবা করে ধন্য হই। কিন্ত রাতে ঘুমের ঘোরে আপনি প্রলাপ বকেন ও ক্রন্দন করেন, তা শুনে আমরা আশ্চর্য হয়ে যাই। তার মর্ম বুঝতে পারি না। তাই আপনাকে জিজ্ঞাসা করি – কে সেই নন্দরাজ, নন্দরানী যাদের আপনি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে খোঁজেন? আবার সে-ই বা কে যাকে আপনি রাধারানী রাধারানী বলে ডাকেন?
আরও নাম শুনি ললিতা, বিশাখা, সুবল, সুদাম, শ্রীদাম, এরা কারা? এতদিন জানতাম, আমরাই আপনার সেবিকা-প্রেয়সী। অথচ আজ দেখছি, তারাই ধন্য , রাতদিন আপনি যাদের কথা চিন্তা করেন,যাদের আপনি ভালবাসেন। স্বপ্নের মধ্যেও তাদের দেখেন। আজ আপনাকে সমস্ত ব্যাপারটা খুলে বলতে হবে, প্রভু।
এই প্রশ্ন শুনে, শ্রীকৃষ্ণ বললেন, দেখ আমি এখন সুধন্বা সভায় যাচ্ছি, ফিরে এসে সমস্ত কথা বলবো।
কিন্তু রুক্মিনী দেবী ছাড়ার পাত্রী নন, তখনই তার শোনা চাই ।
তার পীড়া-পীড়িতে তখন শ্রীকৃষ্ণ বললেন, তাহলে রোহিনী মাতাকে জিজ্ঞাসা করো, তিনি সব কথা বলবেন। বলে, কৃষ্ণ বেরিয়ে গেলেন।
রুক্মিনী, সত্যভামা, জাম্ববতী প্রমুখ আট মহিষী রোহিনী মায়ের কাছে গেল। তারা বলল, ম্নেহময়ী মা আমাদের বলুন, স্বামী কৃষ্ণ ঘুমের ঘোরে কাদের খোঁজেন, কাদের জন্য আকুলি বিকুলি করে কাঁদেন? আমরা কিছুই বুঝতে পারি না। আপনি এই গোপন রহস্য আমাদের বলুন।
রোহিনী মা বললেন, তোমাদের সব কথাই বলবো, কিন্তু তার আগে একটা গোপন ঘরে চলো, আর দরজায় পাহারা রাখ, না হলে এই লীলার কথা বলতে আরম্ভ করলে, মন্ত্রমুগ্ধ সাপের মতো কৃষ্ণ বলরাম এসে হাজির হবে এখানে। তখন আর বলা যাবে না। রানীরা মিষ্টি কথায় সুভদ্রাকে বললেন,
সু্ভদ্রে তুমি এই দরজায় দ্বারী হয়ে পাহারা
দাও, দেখবে তোমার দাদারা যেন ঘরে ঢুকতে না পারেন। তোমাকে খুব সুন্দর মতির মালা আর পট্টবস্ত্র দেবো। সুভদ্রা রাজী হয়ে গেল তাদের কথায়, দরজা আগলে দাঁড়িয়ে রইল।
রোহিনী দেবী ব্রজের সৌন্দর্যের কথা বর্ণনা করে ব্রজবাসীর মহিমা কীর্তন শুরু করলেন।
সেই মহামাধুর্যময় ব্রজপুরের সমুদ্রসম অতুল ঐশ্বর্যের কাছে দ্বারকার বৈকুন্ঠ সম্পদ একফোঁটা বারি মাত্র।
সেখানে কোটি কোটি মাধুর্যবতী কৃষ্ণপ্রিয়াগণ পরম পুরুষোত্তম কৃষ্ণের কান্তা রূপে বর্তমান। সেই মাধুর্যমন্ডিত বৃন্দাবনের লীলা স্মরণ করেই কৃষ্ণ বিলাপ করেন। ব্রজের মাধুর্য আর গোপীনাথ শ্যামের মাধুর্যের তুলনা কোথায়ও নাই।
ব্রজভূমির আর ব্রজবাসীর মাধুর্যের কথা আশ্চর্য হয়ে রানীরা পরম বিস্ময়ে শুনছেন। এমন সময় কৃষ্ণ ও বলরাম এসে দরজায় হাজির। সুভদ্রা দুই হাত দিয়ে তাদের দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্ত ব্রজলীলা শুনে তারা প্রেমে আকুলি বিকলি করছে। মহাভাব তাদের শরীরে প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে দুই হাত আর পা’দুটি ক্রমশ শিথিল হয়ে আসছে তাদের। চোখদুটি বিস্ফারিত হয়ে উঠছে। সুভদ্রার অবস্থাও সে’রকম।
এমন সময় নারদ এসে হাজির দরজায়, তাদের এই ভাবাবেশে প্রেমময় মূর্তি দেখে মুগ্ধ এবং উভয়ের মধ্যে সুভদ্রা দেবীকে দেখলেন। তখন মহানন্দে নারদ স্তব শুরু করলেন। নারদের স্তব শুনে কৃষ্ণ বলরাম পুনরায় সহজ সুন্দর মূর্তি ধারণ করলেন। তখন নারদ প্রার্থনা করে বললেন, হে প্রভু এমন অপূর্ব প্রেমময় মূর্তি আর কখনও তো দেখিনি। নীল শৈলে লবন জলধি তীরে নীলাচল ক্ষেত্রে এই অপূর্ব মূর্তি প্রকাশিত হোক। কৃষ্ণ বলরাম তথাস্তু বলে তার প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন।
কৃষ্ণের এই মহাপ্রেমময় মূর্তি, নীলাচল ক্ষেত্রে –
ভক্তিমান উৎকল রাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন, মহারানী
গুপ্তিচা দেবী, শবররাজ বিশ্বাবসু , ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রধানমন্ত্রী বিত্যাবতীকে উপলক্ষ্য করে লবন সমুদ্রতীরে দারুব্রহ্ম রূপে প্রকাশিত হয়ে আছেন আজও, দৃঢ়-বিশ্বাস কৃষ্ণ ভক্তদের।
সেই উপলক্ষে আজও প্রতিবছর জগন্নাথের স্নানযাত্রা পলিত হয় মহাসমারোহে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।