মার্গে অনন্য সম্মান শংকর ব্রহ্ম (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৮৪
বিষয় – গুড ফ্রাইডে

গুড ফ্রাইডে মাহাত্ম্য

গোটা বিশ্বে ১০ই এপ্রিল-২০২২, দিনটা পালিত হয়েছে ‘গুড ফ্রাইডে’ হিসাবে। এই দিনেই ক্যালভেরিতে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন যীশু। দিনটা ‘গড ফ্রাইডে’, ‘হোলি ফ্রাইডে’, ‘গ্রেট ফ্রাইডে’ বা ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নামেও পরিচিত।
রোমানিয় সৈন্যদের দ্বারা ওই দিনেই ক্রুশে বিদ্ধ করে যীশুকে হত্যা করা হয়। দিনটা দুঃখ ও শোকের দিন।
তাহলে একে গুড কেন বলা হয়?
তাঁদের বিশ্বাস যীশু তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মানুষের মঙ্গলের জন্য। যীশুর ক্রুশবিদ্ধ-মৃত্যু ও সমাধিমন্দির থেকে তার পুনরুজ্জীবনের স্মরণে দিনটি পালিত হয়।
খ্রীষ্টানরা দিনটি স্মরণ করে বেদনার সঙ্গে, যীশুর প্রতি অবিচারের কথা ভেবে।
একটি গোষ্ঠী মনে করে এই উদযাপন আসলে পাপের বিরুদ্ধে পুণ্যের জয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়কে স্মরণ করে পালিত হয়। গুড ফ্রাইডের ‘গুড’ শব্দটি আদতে চিহ্নিত করে ঐশ্বরিক শব্দটিকে, এটি আসলে ‘গড’স ফ্রাইডে’-র পরিবর্তিত রূপ। অনেক গোষ্ঠী আবার দাবি করেন প্রাচীন ইংরেজিতে ‘গুড’ শব্দটি ব্যবহার হল পবিত্র বা হোলি হিসাবে-সেই থেকেও এইরকম নামকরণ হতে পারে।

বাইবেলের বিবরণে সুসমাচার অনুযায়ী, যীশুর শিষ্য যীহুদা ইসকারিয়োতের সাহায্যে রোমানিয় সৈন্যরা গেৎশিমানি উদ্যাগে যীশুকে গ্রেফতার করে। যীহুদা রক্ষীদলকে বলে রেখেছিলেন তিনি যাঁকে চুম্বন করবেন তিনিই হবেন যীশু। যীশুকে এরপর হাননের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়ায় হয়, পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রধান পুরোহিত কায়াফারের কাছে। সেখানেই বসেছিল প্রাচীন ইজরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত সানহেড্রিয়ানের বিচারসভা। প্রধান পুরোহিত, কাযাফার, যীশুকে ঈশ্বরনিন্দার দায়ে অভিযুক্ত করলেন, এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল।
পরদিন রোমান রাজ্যপাল পন্টিয়াস পিলাতের বিচারসভায় যীশুর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহ, সিজারকে রাজস্বদানে বাধা ও নিজেকে রাজা ঘোষণা করার অভিযোগ আনা হয়। যীশু গালিলের লোক জেনে তিনি গালিলের শাসক রাজা হেরোদের উপর যীশুর বিচারের ভার ছেড়ে দিলেন। কিন্তু তিনি যীশুকে পাঠিয়ে দিলেন পিলাতের কাছে। পিলাত সমস্যা সমাধানের জন্য যীশুকে শুধুমাত্র চাবুক মেরে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব রাখলেন কিন্তু প্রধান পুরোহিত তখন যীশুর বিরুদ্ধে ঈশ্বরদ্রোহিতার নতুন অভিযোগটি আনলেন। শেষমেষ নিজের চাকরি রক্ষা করতে পিলাত যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার নির্দেশ দেন।
কথিত আছে, ছয় ঘণ্টা যীশু ক্রুশে যন্ত্রণাভোগ করেন। শেষ তিনঘন্টায় গলগোথার গোটা অঞ্চলে অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল। যিশু প্রাণত্যাগের পর ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল জেরুজালেম। ভেঙে গেল সমাধিপ্রস্তর।
সানহেড্রিয়ানের সদস্য তথা যীশুর গোপন অনুগামী আরিমাথিয়ার জোসেফ পিলাতের নিকট যীশুর দেহ চেয়ে নেন। তিনি যীশুর দেহ পরিষ্কার ক্ষৌমবস্ত্রে মুড়ে ক্রুসবিদ্ধকরণক্ষেত্রের অদূরে একটি বাগানে তার নিজের জন্য নির্মাণ করা প্রস্তরখোদিত সমাধিমন্দিরে রেখে দিলেন। ইহুদী সৎকার প্রথা অনুযায়ী তাঁকে সমাধিস্ত করা হয়। এরপর তৃতীয় দিন, রবিবার, যীশু পুনরুজ্জীবিত হলেন।
এইদিনটি কোনও সেলিব্রেশন নয়, আলোকসজ্জা নয়, চার্চে গিয়ে গণ প্রার্থনা নয়, বরং রাত্রিজাগরণ, উপবাস, একান্তে প্রার্থনা এবং ভিক্ষাপ্রদানের মধ্যে দিয়েই ‘গুড ফ্রাইডে’ উদযাপিত হয়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।