সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ১)

বেড়াতে চলুন বল্টুদার সঙ্গে – ১

ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী বাঙালি বল্টুদা। বল্টু বিশ্বাস। এমনিতে বিশ্বাসযোগ্য, তবে তাঁর দুটো সত্তা।  একহাতে ঘুষ খান, অন্য হাতে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন। বাবা ছিলেন আদর্শবাদী, শ্বশুর ঘুষখোর। দুজনেই স্বর্গে গেছেন, একজন ঘুষ দিয়ে, অন্যজন পূন্যের ফলে, অন্তত বল্টুদা র তাই বিশ্বাস। কাঁচা টাকা বাঙালিকে লুজ ক্যারেক্টার বানিয়ে ছাড়ে। বল্টুদারও তাই। মালের নেশা খুব। তবে শুধু ওটুকুই। গন বিবাহের মত গন বোন ফোঁটা নেন বল্টুদা। বৌদি তাই নিশ্চিত।

বল্টুদার বাড়ির ড্রইংরুমে বাবা এবং শ্বশুরের ছবি পাশাপাশি। যেদিন ঘুষ না খেয়ে বাড়ি ঢোকেন, বাবার ছবিতে প্রণাম করেন। ঘুষ খেলে ঠিক তার উল্টো। বাবার দিকের চোখটা বুঁজে, এক চোখ খোলা রেখে শ্বশুর মশাইকে প্রণাম করেন বল্টুদা।

এহেন বল্টুদা তার নানান রকম কাজকর্মে বেশ পরিচিতও বটে। বাংলা ঠেকের উদ্বোধনের দিন বল্টুদাকে বিশেষ অতিথি রুপে নিয়ে যাওয়া হয়। বল্টুদা কাঁপিয়ে বক্তৃতা দেন।

চারপাশের যা অর্থনৈতিক অবস্থা, তাতে শুধু চাকরি করে বল্টুদার আর চলছে না। কিছু একটা চাই। অন্য ইনকাম। চপের দোকান টোকান ট্রাই করেছিলেন বটে, সে তো লাভের গুড় শ্বশুর বাড়িতেই খেয়ে নিলো। অফিস করে এসে চপ ভাজেন বল্টুদা, বৌদি কেনেন। কিছুটা দূরেই বল্টুদার শ্বশুর বাড়ি, সেখানে চপ কিনে পাঠিয়ে দেন বৌদি। সহজ সরল বল্টুদা খুব খুশী। চপ বিক্রি হচ্ছে। বল্টুদার বৌ প্রায় প্রতিদিন অনেক চপ কিনে নিচ্ছেন বল্টুদার দোকান থেকে। বেশ কিছুদিন পর বল্টুদা যখন আয় ব্যয়ের হিসেব করতে বসলো, আয়ে সব ফাঁকি। চপের হিসেবে লাভ হলো বটে, কিন্তু নিজের জমা টাকা, যেটার উপর বৌদির সেই ডাইনোসরের সময় থেকে অধিকার, সে টাকা শর্ট অনেকটা। অবশেষে যখন আসল যোগ বিয়োগের হিসেবটা মাথায় এলো বল্টুদার, লোকশান হয়েছে অনেকখানি সুতরাং চপ ভাজা বন্ধ, ব্যবসা বন্ধ।

এহেন বল্টুদা সাইড বিজনেজ হিসেবে কিছু একটা করবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন। কী করা যায়, কী করা যায়। বল্টুদা বেড়াতে খুব ভালোবাসেন। হঠাৎ করে বুদ্ধিটা এসেই গেলো মাথার মধ্যে। যদি ট্রাভেল এজেন্সি খোলা যায়, কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ। বল্টুদা নাম দিয়ে ফেললেন তার ট্রাভেল এজেন্সির..

“বল্টুদার ভ্রমণ-সঙ্গী”….আর কী অবস্থা ওই একটা সামান্য হাইফেনেই কি সব খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়ে গেলো। মধ্যবয়সী, হাল্কা টাক, নাদুসনুদুস ভুড়িওয়ালা বল্টুদা আত্মগ্লানিতে ভুগতেন। নিমেষে সব হাওয়া। নিজের এত ক্রেজ বুঝতেই পারেননি। পঁচিশ থেকে পঞ্চান্ন মহিলারা বল্টুদার ভ্রমণ সঙ্গী হতে চাইছেন। বল্টুদার মাল খাবার স্বভাব যতই থাকুক না কেন, এসব ব্যপারে চরিত্র পাটকাঠির মত সোজা। কিছুতেই বাঁকানো যাবে না।

সে যাই হোক প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে বল্টুদা খুলেই ফেললেন ট্রাভেল এজেন্সি। একটু ঘুরিয়ে নামটাও দিলেন পাল্টে…”বেড়াতে চলুন বল্টুদার সঙ্গে।”

পুরী নিয়ে যাচ্ছেন বল্টুদা। বিজ্ঞাপন দিয়েছেন শহরের সর্বত্র। বাস,ট্রাম,ট্রেন থেকে শুরু করে রাস্তার ধারের বিনি পয়সার পাবলিক টয়লেট পর্যন্ত।

পুরী নিয়ে যাচ্ছেন বল্টুদা। বাসযাত্রা। বিজ্ঞাপন দেবার সাতদিনের মধ্যে বাসের সব সিট ফুল।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।