T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় শংকর ব্রহ্ম

ঘুড়ির নেশা
এক সময় আমার খুব ঘুড়ি উড়াবার নেশা ছিল। ঘর থেকে বেরলেই ছিল, দিগন্ত প্রসারিত উদার মাঠ, যেন হাতছানি দিয়ে ডাকতো –
“আয় আয় ছুটে আয় চলে
ঘর দোড় সব রেখে ফেলে।”
সে’সব মাঠ এখন প্রমোটারের থাবায় উধাও। এখন ঘুড়ি উড়াতে ইচ্ছে হলে, ছাদই ভরসা। তাতে বিপদের সম্ভবনা বেড়ে যায় অনেক। ছাদ থেকে পড়ে মারা যাওয়ার সম্ববনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সে’সময় ঘুড়ির কত নাম ছিল, এখনও সে সব নাম আছে কিনা জানি না অবশ্য।
যেমন – ময়ূরপঙ্খী, চাঁদিয়াল, মুখপোড়া,
পেটকাট্টি, চন্দ্রমুখি , চাপরাশী, সতরঞ্জী,
মোমবাতি, কড়িটানা, চৌরঙ্গী প্রভৃতি আরও কতসব।
বিশ্বকর্মা পূজার সাতদিন আগে থেকে
ঘুড়ি উড়ানো শুরু করতাম। শেষ হতো পূজার সাতদিন পর। সে যে কী মজায় দিনগুলো কাটতো, তা বলে বোঝানো যাবে না ঠিক মতো। ভাষা ভাবকে বহন করতে অক্ষম।
আমি কাগজ কিনে, বাঁশ চিড়ে কাঠি বের করে নিতাম। তারপর নিজের হাতে ঘুড়ি তৈরী করে নিতাম বাড়িতে। সে ঘুড়ি উড়াবার মজাই ছিল আলাদা। সে সব এখন স্মৃতির ঝাঁপি বন্দী।
বিশ্বকর্মা পূজার দিন তো সারা আকাশ জুড়ে ঘুড়ির মেলা বসে যেত সে’সময়। আর আজকাল আকাশে তাকালে সে’রূপ ঘুড়ি উড়তে দেখা যায় না। চোখে পড়ে না সে-রকমটা আকাশে। হৃদয় উদাস হয়ে যায় তা দেখে , মনটা ভরে ওঠে রুক্ষতায়।
” মুঠোবন্দী মন
আরো একটি গোধূলি এলো গেল।
চরাচরজুড়ে নীল রাত নামছে,
অথচ সন্ধ্যায় আমাদের হাত-ধরাধরি হাঁটাই হলো না।
আমি জানালা দিয়ে দেখলাম
অনেক দূরের পাহাড়চূড়ায়
সূর্যাস্তের উৎসব বসেছে।
কখনো কখনো আমার হাতের তালুতে
মুদ্রার মতো
একটুকরো সূর্য পুড়তে থাকে।
মনটা বিষণ্ণ –
তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল
যে মনের কথা তুমি ছাড়া বেশি কে জানে!
তুমি কোথায় ছিলে তখন?
সাথে আর কে ছিল?
কী কথা তাহার সাথে?
যখন মনটা খুব খুব খারাপ থাকে
টের পাই, তুমি অ-নে-ক-দূ-রে,
বলো তো তখন হঠাৎ সব ভালোবাসা আমাকে পেয়ে বসে কেন?
গোধূলি এলে আমার পড়ার বন্ধ বইটা হাত থেকে পিছলে পড়ে,
চোট পাওয়া কুকুরের মতো আমার নীল সোয়েটারটি
আমারই পায়ের কাছে গড়াগড়ি যায়।
প্রতিটি দিন সন্ধ্যা এলে
তুমি সন্ধ্যাকে পেছনে ফেলে
স্মৃতির মূর্তি মুছে ক্রমশ এগোতে থাকো গোধূলি-দিকে।”
– পাবলো নেরুদা।