সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ২৫)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ২৫

পুরীতে ভোর মানেই সমুদ্র পাড়। সূর্য ওঠার অপরূপ দৃশ্য। আজ সবাই শেষ রাতে উঠে গেছে ঘুম থেকে। তারপর সবাইমিলে সমুদ্রের পাড়। আজ নিয়ে পুরীতে তৃতীয় দিন। আর একটাদিন থেকেই সকলের ফিরে আসা কাজের শহর কলকাতায়। ফিরে আসার একটা মনখারাপ থাকে, কিন্তু বাকী সময়টা যতটা পারা যায় আনন্দ করার ইচ্ছে জমা হয়। দুদিন পুরীর সমুদ্রতট আর গেস্ট হাউজে আড্ডা দিয়ে এবং একের পর অদ্ভুত কিছু ঘটনার সন্মুখীন হওয়ার ফলে সময়টা যেন আরো দ্রুতগতিতে চলে গেলো। এদিন গুলো কখনো ভুলবার নয় কারো। আর কিছুক্ষন পরে ওরা বেরবে সাইট সিনে। খুব ভোরে সবাই মিলে সমুদ্রতটে। সমুদ্রের হাওয়া লাগিয়ে নেওয়া আর কি। একেবারে ভোরের পুরীর সমুদ্রতট অন্যরকম। অন্যান্য জায়গায় শেষ রাতের ক্লান্তি থাকে সমুদ্রপাড়ে, রাতে বীচ নোংরা হয় বেশী। সারা বিকেল এবং রাতে শয়ে শয়ে লোক খাওয়া দাওয়া করে অবিবেচকের মত সমুদ্রতট নোংরা করে। কিন্তু পুরী একেবারেই অন্যরকম। প্রায় প্রতি দুঘন্টা পরপর সমুদ্রতট পরিস্কার করা হয়। যেমন মিউনিসিপালিটির লোকজন থাকেন, সেই সঙ্গে স্থানীয় বিক্রেতারা নিয়মিত হাত লাগান পরিছন্নতার কাজে। তারফলে নোংরা কখনো জমে থাকে না সমুদ্রতটে। শেষরাতে সমুদ্রতট ঝকঝকে, কারন আগের রাতের ক্লান্তি নেই তট জুড়ে। পরিচ্ছন্ন, মন ভালো করা সমুদ্রের পাড়ে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ওরা সবাই ফিরে এলো গেস্ট হাউজে। এর মধ্যেই কয়েকজন সমুদ্রে স্নানও করে নিয়েছে। আজ যেহেতু সাইট সিন, তাই আর স্নান করার সুযোগও পাবে না। ওদিকে যারা সমুদ্রে স্নান করতে ভালোবাসে তারা একটা দিনও মিস করতে চান না।
যাই হোক গেস্ট হাউজে ফিরে এসে চা, হাল্কা জলখাবার। লুচি আর কালোজিরে দিয়ে আলুর তরকারি। খুব প্রিয় অনেকের কাছে। সবাই যে যার মত প্রস্তুত হয়ে সাড়ে সাতটার মধ্যে ডাইনিংএর জায়গায় নেমে এসেছে। সকালের খাওয়া দাওয়া করে ৮ টার মধ্যে বেরতে হবে। বেশী দেরি করলে সব ভালো করে ঘোরা যায় না। সবাই তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া করে যে যার মত হাঁটতে শুরু করলো রাস্তার দিকে। বাসস্ট্যান্ডের থেকে বাসটাকে সমুদ্রের পাড়ের রাস্তায় নিয়ে আসা হয়েছে। এবার এক এক করে সবাই উঠে পরলেই গাড়ি স্টার্ট দেবে। স্টিয়ারিংএ কানাই। হেল্পার সিট পরিস্কার করে নিচ্ছে। বলা হয়নি আগে, এ বাসটিকে ভাড়া নিয়েছিলো বল্টুদা এক ট্রাভেল কোম্পানির কাছ থেকে। এই হেল্পার ছেলেটি নাকি বহু পুরনো, অনেকদিন এই কোম্পানিতে আছে। ড্রাইভার কানাই একেবারে সদ্যই যোগ দিয়েছে। শুধু তাই নয় এই ট্যুরটাই কানাইয়ের প্রথম ট্যুর। বেশ ভালো গাড়ি চালায় কানাই, আর সবার সঙ্গে মিশেও থাকে। এ কয়েকদিনে অনেকের প্রিয় হয়ে উঠেছে সে।
আস্তে আস্তে সবাই বাসে উঠে গেছে। বাসের সিটের ব্যবস্থা প্রথম দিন থেকে এক। বাসের সিট আর গেস্ট হাউজের ঘর লটারির মাধ্যমে করে নেওয়া হয়েছিলো। তবে বয়স্কদের বাসের মাঝামাঝি বসাবার ব্যবস্থা হয়েছে। পিছনের দিকে ঝাঁকিটা বেশী হয়, বয়স্কদের অসুবিধে হতে পারে। বাসে টুকটাক খাওয়াদাওয়ার জন্য সবাই কিছু না কিছু শুকনো খাবার নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বল্টুদার কোথাও ফাঁকি নেই। নিজেও কেক,বিক্সিট, কোল্ড ড্রিংক, চিপস এসবের প্যাকেট কিনে রেখে দিয়েছে বাসে। মাঝেমধ্যে খেতে খেতে এ পথে পাড়ি জমানো।
বাস শুরু করে দিয়েছে চলতে। খুব সুন্দর রাস্তা। বাস শহর ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কখনো আবার সমুদ্রতট ধরেছে। চন্দ্রভাগা বিচ। কি সুন্দর। উটের সঙ্গে দারুন সব ছবি তুললো ওরা। চন্দ্রভাগার সঙ্গে কৃষ্ণর ছেলে শাম্বর মাইথোলজিকাল যোগ রয়েছে। বলা হয় শাম্বর কুষ্ঠ মুক্তি হয়েছিলো সূর্যের আশীর্বাদে চন্দ্রভাগার তীরে। পুরীর থেকে তিরিশ কিলোমিটার চন্দ্রভাগা বিচ, এবং কোনারক সূর্য মন্দির থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার। ভারতের অন্যতম সেরা ক্লিন বিচের সম্মান পেয়েছে চন্দ্রভাগা বিচ। এখানে প্রায় পাঁচ দিন ধরে চলা আন্তর্জাতিক স্যান্ড আর্ট ফেস্টিভ্যাল খুব জনপ্রিয়। চন্দ্রভাগার জলে আজকাল প্রচুর এডভেঞ্চার জলক্রীড়া হয়, অনেকে শুধু সেটা উপভোগ করতেই পুরী থেকে চন্দ্রভাগার তীরে যান।
বাস থেকে সবাই নেমে এসেছিলো কিছুক্ষনের জন্যে। একজন গাইড প্রতিটা টুরিস্ট বাসে রাখা বাধ্যতামূলক। বল্টুদাও নিয়ে গিয়েছিলেন গাইড। তার কাছ থেকে ইতিহাস আর জায়গার বর্ণনা শুনতে শুনতে সবাই চলেছে দলবেঁধে। এবার কোনারকের সূর্যমন্দির।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।