নৈবেদ্যে সুব্রত ভট্টাচার্য্য

দেবদূত – বিবেকানন্দ

বারোই জানুয়ারী আঠারোশো তেষট্টি সনের কৃষ্ণপক্ষীয় সপ্তমী ক্ষণে;
নররুপী এক দূতের হইল আবির্ভাব বিশ্বনাথ ও ভুবনেশ্বরীর বাসভবনে।
মাতা-পিতার স্নেহশীল শিশুর শৈশব পরিচিতি হইল বীরেশ্বর নামে।
অন্নপ্রাশন শুভক্ষণে শিশুর নামান্তরন হইল নরেন্দ্রনাথ নামে।
নরেন্দ্রনাথ – এ যে নররুপী ইন্দ্রের নাথ!
তবে কি এবার শুরু হবে মঙ্গলের পথ?

‘জীব সেবা পরম ধর্ম ‘- এটাই নাকি সর্বশ্রেষ্ঠ মানবতা।
দেবদূত নরেন্দ্রনাথ হইল জগতশ্রেষ্ঠ ধর্ম প্রবক্তা।
রবির আলোয় হয় প্রকাশিত নিঝুম নিরব তিমির।
বিবেকের বিচারে হয় দূরীভূত মানবজাতির নয়ননীর।
এ যে বিবেকানন্দের শ্রেয় কৃতি!
পড়িল ছড়াইয়া বিশ্বে অমর স্মৃতি।

অধ্যয়ন করিয়া সাহিত্য-বিজ্ঞান- ইতিহাস-দর্শন, ব্যাপিত হইল অভিজ্ঞান।
শাণিত হইল ধরাতল, পাইয়া মানব পুত্রের এক অদ্ভুত প্রদর্শন।
ঠাকুর রামকৃষ্ণের দর্শনপ্রাপ্তি হইল যখন।
উভয়ে উভয়ের প্রতি আকৃষ্ট হইল তখন।
এ যে ভগবানের-ই সৃষ্টি মানবলীলা!
পরমহংস হইলেন দীক্ষার আধারশীলা।

রামকৃষ্ণের তিরোধানে, নরেনের সন্ন্যাসী সংঘের পরিচালক প্রাপ্তি।
নামান্তরন হইল তাঁর স্বামী বিবেকানন্দ রূপে – সে এক বজ্র শক্তি।
লইয়া বজ্রশক্তি, স্বামী করিল পদব্রাজন কুমারিকা থেকে হিমালয়।
প্রচারিতে ধর্ম বাণী করিলেন পরিব্রাজন শিকাগো মহাসভায়।
এ যে এক ব্রহ্মচর্যের অবদান!
ম্যাডাম লুই-এর হইল শিষ্যত্ব গ্রহণ।

সময় হানিল বিবেকানন্দরে করিতে ইংল্যান্ড পরিভ্রমণ।
ভগিনী নিবেদিতা করিলেন বিবেকের শিষ্যত্ব গ্রহণ।
প্রলোভিত করিলেন ভারতবাসীরে স্মরণ করিতে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান।
আদেশও দিলেন রাখিতে সমতা স্বদেশের উচ্চ নৈতিক মান।
এ যে জন্মসিদ্ধ অধিকার!
করিবে না কভু তাহার তিরস্কার।

স্মরণীয়তার প্রলেপ প্রদান করিলেন, স্থাপনিয়া ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়।
স্থাপন করিলেন বেলুড় মঠ, গঠন করিলেন রামকৃষ্ণ মিশনালয়।
বিবেক বানী – “মন সর্বব্যাপী” তাহা হেতু সানফ্রান্সিসকোতে বেদান্ত বিদ্যালয়।
মর্মাহত হইলেন গ্রাম বাসীদের অজ্ঞতা-কুসংস্কার আর দারিদ্র্যতায়।
এ সবই তো বিবেকের নিঃস্বার্থ পথ নিদর্শন!
হইয়াছে ধন্য, কৃতজ্ঞ এ মানব প্রান স্পন্দন।

বিবেকানন্দেরই রচিত পুস্তক জ্ঞানযোগ রাজযোগ করিয়া অধ্যয়ন।
মানবজীবন প্রবেশিল এক সুরের অন্তরালে করিতে মুক্ত দুষিত বাতাবরণ।
সাঙ্গ হইলে বিবেকের জন হিতোপদেশ বানী, দেবগণ সুচিত করিল ক্ষন।
উনিশশো দুই সন চৌঠা জুলাই – স্বামীর পার্থিব কায়ার হইল তিরোধান।
এ যে কুয়াশাচ্ছন্ন নিস্তব্ধ অন্ধকার!
হানিল জনমনে এ কী হাহাকার!

হে স্তম্ভিত শোকাতুর জন ভান্ডার: শুনিতে কি পাও?
বিবেক আত্মার প্রতিধ্বনিত অমর বানী –
“জীবে প্রেম করে যে জন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।