সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব – ১৫)

অমৃতায়ণ

চায়ের চুমুকের শব্দ আসছে। সময়টাকে এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে একটা চতুষ্কোণ ফ্রেমের মধ্যে – সেখানে ভাগ হয়ে যাচ্ছে আরও চারটে ছোট ছোট সামন্তরিক ফ্রেমের ভিতর। একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমি আর জ্যোতি গড়িয়া পাঁচ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি, দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে অমৃতা বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে নামছে ক্লাসে আসবে বলে, তৃতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে পারিজাত মাথার মধ্যে বুনে চলেছে পোস্টার ঠিক কি কি কারণে তৈরি হতে পারে, আর চতুর্থ ফ্রেমটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – সুলগ্না এখন ঠিক কি করছে! বলেছিল ও নাকি –
জ্যোতি ঠাং করে মাটিতে ভাঁড়টা ফেললো , সবকটা ফ্রেম আমার চোখের ভিতর ঢুকে গেলো।
– আচ্ছা তুই আজ ঠিক কোথায় কোথায় গেছিস রে? জ্যোতিকে জিজ্ঞেস করলাম ।
– কোথায় গেছিলাম মানে ? কোথায় যাওয়ার কথা বলছিস ?
ঘটনাটা সকাল থেকে যা যা হয়েছে খুলে বললাম । আস্তে আস্তে জ্যোতির ভিতর যে পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক সেগুলো সবকটাই ওর মুখের ভাঁজের উপর ছিল।
জানতে পারলাম কলেজে গেছিল ও, তবে সুলগ্না আজ আসে নি। এক চক্কর বাংলা বিভাগের রুমে গেছিল । নেই !
আপনারা ভাবছেন এতক্ষণ ধরে এই সুলগ্না কে কি কেন কি বৃত্তান্ত – তাই তো? হ্যাঁ ভাবনাটা আসতেই পারে, কিন্তু তাকে স্বাভাবিক বলে চিহ্নিত করলাম না ! কারণ এতদিন যেভাবে আপনারা জীবনকে দেখেছেন ভাষা লেখায়, জীবন সেভাবে আপনার সামনে উঠে আসে নি…. তাই বার বার জীবনের অবয়ব কে আপনার মনে হয়েছে ‘কল্পনা, ভাবালুতা, ওসব গল্প উপন্যাসের মধ্যে হয়, সাহিত্য আবার বাস্তব নাকি’ এমন সব বহুবিধ ধারনা ও যুক্তি । কিন্তু এখানে আপনাকে আমি বলে চলেছি – তা সম্পূর্ণ সত্য ও সত্যের কাছে পৌঁছনো চেষ্টা। আপনাকে আমি কষ্ট দেবো না , আমি আপনার পাশে আছি, আপনাকে বন্দি করতে নয় – আপনি আমার সঙ্গে খুঁজবেন , যেভাবে আমাদের নাকের ডগার উপর ভন্ড লোভী পরশ্রীকাতররা অবলীলায় ঘুরেতে অপর মানুষের সরলতা ও বিযুক্তির সুযোগ নিয়ে । নিজেদের কামনা সিদ্ধ করার জন্য এই মুহূর্তে আপনার পাশেই হয়তো সুলগ্না বসে আছে। পাশে তাকান …..
– “সুলগ্না হঠাৎ ব্যান্ড এর সঙ্গে যুক্ত হলো কেন রে? করতো তো আবৃত্তি! ” জ্যোতির মুখে এই প্রশ্নটা সেই প্রথম দিন থার্ড ইয়ার ফেস্টের সময় থেকে ছিল।
আবৃত্তি করলে ব্যান্ডে যুক্ত হতে পারে না এমনটা নয় তবে, নিজেকে আরও আরও বিক্রির বস্তু করে তুলতে গিয়ে কখন যেন মানুষ ভুলে যায় আসলে সে মানুষ । তখন সে ভুলে যায় নামের নেশা নিকোটিনের তীব্র প্রলেপের চেয়েও বিষাক্ত । সেই বিষ আস্তে আস্তে তার পারিপার্শ্বিক সমাজের শিরা উপশিরা দিয়ে বইতে থাকে। সে এক নির্জীব প্রাণ , শুধু চকচকে আলো আর সামনে কতগুলো লোকের চেয়ে থাকা মাত্র ।
– একটা জিনিস ভালো করে লক্ষ্য করেছিস , যেদিন থেকে ও হঠাৎ গান নিয়ে মাতামাতি শুরু করেছে সেদিন থেকে কলেজে আসে না। গানটা কিন্তু আসলে ওর মূল লক্ষ্য নয় ।
হাঁটতে হাটতে এখন আমরা শ্রীরামপুর ক্লাবের পিছনের পুকুর ধারে এসে গেছি।
– লক্ষ্যটা আসলে মুখটা সবার সামনে তুলে ধরা।
এখন ঘড়িতে সাড়ে ছ’টা। আধঘন্টা পর পারিজাত আসবে সঞ্জয় দার চা’যে়র দোকানে।
– আচ্ছা যেটা জানা হলো না, তুই আজ দেওয়ালগুলো ভালো করে পড়েছিস। কিছু দেখেছিস দেওয়ালে?
– নাহ, দেওয়াল তো পরিষ্কার করা হচ্ছে, আর তার বিভিন্ন অংশে লেখা T.M.C। ব্যস
– কিন্তু ছোট যে বললো – কলেজের গেটে পোস্টার পড়েছে ওর নামে !
– সেই খবরটা ছোটো কে দেওয়া হলো, দুদিন হলো যে কলেজে এসেছে, আর আমাদের বলা হলো না! আমরা তো আর রাষ্ট্র করতাম না নিশ্চয়ই ….
– গোলমাল তো ওইখানেই ! খুব চালাকি হচ্ছে আমাদের চারপাশ ঘিরে , একটা বিরাট চালাকির ফাঁদ পাতা হচ্ছে ! আচ্ছা শোন, তুই কি যাবি সঞ্জয় দার দোকানে ?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।