আধিপত্য মূলতঃ গণমাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলেও নিয়মিত লেখক হিসাবে হৃদয়ে এক অহৈতুকি জাত্যাভিমান ক্রিয়া করে আমার। দুয়েকস্থানে প্রাথমিক বিচ্যুতি ব্যতীত আজ অবধি কখনওই এমন কোনো পত্রিকায় আমি লেখা দিইনি যেখানে গ্রন্থ প্রকাশনার ব্যয় নিজেকে বহন ক’রতে হয়। আমার ধারণা, আপন কলমের প্রতি মানুষের সেটুকু বিশ্বাস রাখা অবশ্যই প্রয়োজন যাতে সারস্বত সাধনায় কমলার বেশে দুষ্ট সরস্বতীর অযাচিত অনুপ্রবেশ না ঘটে।
আমন্ত্রিত বা অতিথি লেখক হিসাবে কলম ধ’রেছি এহেন কোনো পত্রিকার কথা এই মূহুর্তে স্মরণে না আসলেও বেশ কিছু স্থানে আমি লেখা পাঠিয়েছি কেবল স্বক্ষমতা পরিমাপ ক’রতেই। সেসব সম্পাদকেরা সম্পর্কের শুরুতেই সৌজন্য সংখ্যা প্রদানের বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করায় তাঁদের সাক্ষাতে যথেষ্ট আপ্যায়ন প্রাপ্তিতেও কোনোদিন অতিরিক্ত সুবিধা দাবি ক’রিনি, লেখকসূচিতে আপন নামটি দেখেই আনন্দিত হ’য়েছি মাত্র। গৃহীত জীবনাদর্শবশতঃ সংখ্যাগুলি সংগ্রহ করা হ’য়ে ওঠেনি কোনোদিনও।
অসংগৃহীত গ্রন্থসমূহের এই তালিকাটি কিন্তু দৈর্ঘ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য না হ’লেও নিতান্ত তুচ্ছ নয়। মহানগরের স্বনামধন্য পত্রিকাগুলিতে আত্মপ্রকাশে এখনও অবধি কলমের সক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়ায় মূলতঃ মফঃস্বল ও গ্রামাঞ্চল হ’তে প্রকাশিত পত্রিকাসমূহকেই সমৃদ্ধিশালী করবার আমি প্রতিনিয়তঃ প্রচেষ্টায় থাকি। অধিকাংশেরই বিনিময় মূল্য ২০/- থেকে ৫০/- হওয়া সত্ত্বেও পূর্বোক্ত মিথ্যা স্বাভিমানবশতঃ সেগুলি সম্পর্কে উৎসাহ দেখাইনা, ফলস্বরূপ সম্পাদকগণেরও কিঞ্চিৎ সাশ্রয় হয়।
এখন কথা হ’চ্ছে যে এহেন স্বার্থপর মানসিকতার পোষক তো কলমচী বৃত্তে কেবল আমি একা ন’ই, এমন বহু মানুষের সংস্পর্শে আমি এসেছি যাঁরা আমারই ন্যায় ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তিতে রীতিমতো বিরক্ত হ’লেও পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যায় যথাসময়ে লেখা পাঠিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ সম্পর্ক ব্যতীত এই কৃতজ্ঞতাবশতই পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁদের কিছু অতিরিক্ত সম্মাননা প্রাপ্য হয়, যদিও সেই আলোচনার পরিসর এখানে নেই।
অনুভূতির মৌখিক প্রকাশ না ঘ’টিয়ে কেবল নিজস্ব ব্যবহারে এভাবে একটি সাহিত্যকেন্দ্রিক সংস্থার দীর্ঘায়ু কামনা করা জনৈক আদর্শবান সাহিত্যিকের পক্ষেই সম্ভব। অতএব সৌজন্য সংখ্যার অপ্রাপ্তিতে গোপনে প্রকাশনা সংস্থার আর্থিক ক্ষতি করবার প্রচেষ্টা (সংস্থার মূল উদ্দেশ্য আপাততঃ উহ্যই থাকলো) আদ্যোপান্ত মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় ব্যতীত অন্য কিছুই নয়। অনৈতিকতা যে মানুষ বংশানুক্রমে বহন করে এই হ’চ্ছে তার জ্বাজল্যমান প্রমাণ।
সম্পাদক হিসাবে এখনও অবধি যে দু’টি পত্রিকার সঙ্গে আমি যুক্ত, প্রকৃতিগতভাবে সেগুলি পরস্পরের তুলনায় সম্পূর্ণ পৃথক হ’লেও অন্তর্ঘাতের প্রশ্নে অনেকাংশে সমান। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ ক’রতে বহু মানুষ দুই পক্ষেরই সাহিত্যসেবা অথবা সমাজসেবা ব্যাহত ক’রতে উদ্যত হ’য়েছে। ‘টেক-টাচ-টককে’ আমি প্রতিনিয়তঃ পরিচিতবৃত্তের প্রশংসা লাভের মঞ্চ হিসাবে তৈরী ক’রতেই পারতাম, বিনামূল্যে প্রাপ্ত ‘পেট্রোনাস’ তো আমার সংগ্রহে ছিলোই…
যার ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা সম্ভব সে সমাজকে ঠিক কোন বার্তা প্রদানে প্রত্যাশী?