সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৬)

পুপুর ডায়েরি

রেলব্রিজ
ছোট বেলা থেকে রেলব্রিজ টাই আমার আইডেন্টিটি। ওকেই সবচে বেশি চিনি।
প্রতাপাদিত্য রোড থেকে রেলব্রিজ এর তলা দিয়ে এসে ডান দিকে গলিতে ঢুকলেই, বাড়ি এসে গেছি।
ও ব্রিজের ইঁটগুলোকে অব্ধি চিনি।
প্রতাপাদিত্য রোডের দিকে ব্রিজের ও দিকটা ভারি আপন জায়গা। সামনেই একটা মস্ত উঁচু কদম গাছ।তার ডালপালা ছুঁয়ে একটা বড় বাড়ি। নীচে ফার্নিচারের দোকান। একটা মনিহারি দোকান ও।দোকানের পাশে সরু প্যাসেজ। ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে উঠলে দোতলার ঘর। ভিতরে বারান্দা,খাবার টেবিল,রান্নাঘর। বাঁ হাতের ঘরের মধ্যে দিয়ে গেলে বাইরের খোলা বারান্দা।সেখানে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হরপার্বতীর মূর্তি।
এ বাড়িতে থাকতেন ঠাকুরদা ঠাকুরমা, তাঁদের আমি সন্তোষকাকুর বাবা মা বলেই চিনতাম। দাদুর সংগে বিশেষ দেখা হত না।ভিতর দিকের শোবার ঘরে থাকতেন। কিন্তু দিদাকে দেখতাম সব সময়েই।
খুব গোলগাল, দাপুটে মানুষ ছিলেন।ভারি ভালবাসতেন বাবা কে।খুব গল্প হত।আমি বাবার পাশে চুপটি করে বসে শুনতাম সে গল্প।বাবার পাশে আছি,এইতেই ভারি ভাল লাগত।
আগে সেখানে দেখা হত মীনাপিসি, তাঁর ডাক্তার বর রজনীকাকু আর মেয়ে কৃষ্ণকলিদির সংগে। মীনাপিসি বলতাম, কারন তিনি বাবার বন্ধু সন্তোষকাকুর বোন।প্রফেসর, ভারি সুন্দর দেখতে,বিরাট লম্বা বেণী।
আর তাঁর বর রজনীকাকু ও বাবাদের বন্ধু,কিন্তু পরে মীনাপিসিকেই বিয়ে করে ছিলেন।রজনীকান্ত চতুর্বেদী। অলইন্ডিয়া রেডিওর জনপ্রিয় সেতারবাদক, ভাল চিকিৎসক, আর সাহিত্য, বিশেষত ইংরেজি সাহিত্যে অসাধারণ দখল।টকটকে সোনার মত গায়ের রং, টিয়া পাখির মত নাক, পাতলা লাল ঠোঁট। মেয়ে কৃষ্ণকলিও এই রকম সাংঘাতিক সুন্দরী। দেখলে উত্তর ভারতের রাজকন্যা মনে হত।অনেক অনেক পরে,খুব সুন্দর একটা ভাই ও হয়েছিল।
এ বাড়ির নিচে, পাশের এক তলায় এক চা আর আড্ডার বড় দোকান ছিল।এখন আর নেই।আর তার পাশে, উঁচু তাক পেতে রামবিলাসের পান সিগারেটের দোকান। সেটা এখন ও আছে।
বাবারা চারমিনার আর চা দিয়ে সেখানে যে আড্ডা তৈরি করতেন এই জায়গাটুকু ঘিরে, তাতে স্বদেশ আর বিদেশের সাহিত্য,সিনেমা, সংগীতের অপূর্ব নির্যাস আমায় বুদ্ধিজীবী বাচ্চা করে তুলেছিল।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।