সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১০৯)

রেকারিং ডেসিমাল
ফিরে আসি বেনারসে।
রোজ একটা নতুন ধারা, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলি রেজিম, শুরু হল।
সারাদিন গাড়ি নিয়ে চলত বেড়ানো। উত্তর প্রদেশের এদিক থেকে ওদিক।
কত দেখার জিনিস, কত ঐতিহাসিক নিদর্শন। আমি কিঞ্চিৎ ইতিহাস এবং কেল্লা-পাগলা মানুষ।
যত ছোটোবেলা থেকে পড়ে আসা জিনিসপত্র দেখি গায়ে কাঁটা কাঁটা দিয়ে ওঠে।
সারনাথ, অশোক স্তম্ভ, সঙ্গের জাদুঘর।
প্যাগোডার ভেতরে একেবারে সেইসব ছবি, রঙিন ফ্রেস্কো, যেগুলি সিগনেট প্রেসের একাত্তর সালের মুদ্রিত নালকে ধরে রাখা।
এদের নিঁখুত করে কথায় এঁকেছেন অবন ঠাকুর। তারপর রেনেসাঁয়ে ধরেছেন নন্দলাল বসুরাও। বাবা মা বিদ্যার্থী রঞ্জনে কত ছড়িয়েছেন, পড়িয়েছেন আমায় সেইসব গল্প।
আমি উত্তেজিত হয়ে বাচ্চাদের, বড়দেরও, অনর্গল বলতে থাকি সেইসব। বড়োরা একটু বিরক্তই হন হয়ত।
… এই আবার ক্ষেপে গেল সোনালি।
তাও, সবাই প্রশ্রয়ের সাথেই সয়ে নেন পাগলামি।
নানান প্রকার নিরামিষ পদ খাওয়া হয়। ছোটোরা বাইরে দই চিনি আর ভাত। অন্যকিছু খাইয়ে বেড়াতে বেড়িয়ে পেটের গণ্ডগোল হতে তাদের মা ত দেয় না। কোন দোকানে আলুভাজি থাকলে ঝাল ছাড়া তারা একটু মাখন বা ডাল দিয়ে খায়।
কিন্তু সবার চাইতে আশ্চর্য এই যে, তাদের ঠাম্নাও তাদের সঙ্গে এই খাবারই খান।
যে মানুষটি আমিষ ছাড়া খেতে এবং খাওয়াতে কখনও রাজি নন, তার এই ট্রিপে আমূল-পরিবর্তন।
বলেন, আমি এই খেয়েই ভালো আছি।
সারা দিন পর আবার গলির মুখে গাড়িটা ছেড়ে দিয়ে একটু জিরিয়ে জিরিয়ে ঘরে ফিরে স্নান সেরে সবাই বিছানায় ধপাস।
ঘুমিয়ে কাদা হয় বাচ্চারা।
আমি দ্বিতীয় দিন থেকেই হাসপাতালের অভ্যাস মতো ঘুমাতে শুরু করেছি।
বেড়ালের মত। একটা কান খাড়া করে রেখে।
মাঝরাত্রে একটা ডাক আসে বাচ্চাদের ঠাকুরদার।
শিগগির আয় বাবু। মায়ের আবার পেটে ব্যথা হল।
আমি প্রথম বার খাওয়ার ওষুধ। পরের দিন আরও কড়া ব্যথার ক্যাপসুল দিলে খানিকটা সময় পরে ঘুমিয়ে পড়েন আমার রোগিণী।
সকালে যেই বলি, আজ তবে ড্রাইভারকে বারণ করি। একটা দিন রেস্ট নাও।
হই হই করে ওঠেন ঠাম্মা।
চান টান সেরে তিনি ফিটফাট।
না না না। আমি একদম ঠিক আছি। বেড়াতে এসেছি কদ্দিন পর, ঘরে বসে থাকার জন্য নাকি?
চল চল জলদি।
বেরিয়ে পড়ি সবাই মিলে।
খালি প্রথমেই গাড়ি নিয়ে আমি ওষুধের দোকানে যাই। ইঞ্জেকশন কিনি ব্যথার।
মুখে খাবার ওষুধে আর কাজ হয় না।