বড় একখানা লম্বাটে চৌকোনা আয়না আছে দাদুর।
দাদু দিদার বড় শোবার ঘরের সামনের বারান্দায় সকালের রোদ এসে পড়ে।
সেইখানে আয়না নিয়ে টানাটানি। ঐটাতেই নাকি সবচেয়ে সুবিধা দাড়ি কামাতে।
অফিসে যাবার আগে দুই ভাই কে আগে দাড়ি কামাবেন, রীতিমতো কম্পিটিশন। আরো আয়না আছে কিন্তু। হাত ধোবার বেসিনের ওপরে, বাথরুমে, যার যার শোবার ঘরের ড্রেসিং টেবিলে, বা মস্ত স্টিলের আলমারির গায়ে।
তাও ওই পুরোনো আয়নাখানাই লোভের।
কোন মাথামুণ্ডু নেই। এই একখানা মজা এ বাড়ির।
দাদুর মাথায় সাদা চুল দু চারগাছা আছে। সাত দশ দিন পর পর রামনাথ নাপিত আসে
দাড়ি কামিয়ে চুল কেটে দিতে।
সে দিন শোনা যায় দাদুর মেজাজি গল্প। আর কেউ সে শোনার স্রোতা নয়। এক রামনাথ এলেই তার সাথে যত গল্পগুজব।
দাদুর খাওয়াদাওয়া খুব নিয়ম মেনে।
সকালে স্টিলের লম্বা গ্লাসে চা, বিস্কুট সহযোগে। জল খাবারে গরম দুধ আর মুড়ি বা টোস্ট। দুপুরে গলা ভাত, এক পিস মাছের পাতলা ঝোল বড় চামচ দিয়ে খাওয়া। দুপুরে একটি ফল, বা একটা মিষ্টি। বিকেলে চা, তারপর সন্ধেবেলা স্টিলের লম্বা গ্লাসে গরম দুধ । রাতে আবার মাছ ভাত।
অতি সাধারণ খাওয়া। শুধু একটাই চাহিদা। সব খাবার প্রায় ফুটন্ত গরম হতে হবে।
দাদু দিদার ঘর থেকে বারান্দায় বেরোনোর দুটো দরজা। একটা দিয়ে বেরোলেই রান্নাঘর। আরেকটা দিয়ে বেরোলে সিঁড়ির মুখে নিচে নামা আসার কোলাপ্সেবেল গেট। দাদুদের পুরনো পালঙ্ক প্যাটার্নের খাট সিঁড়ির দিকের দরজার পাশেই। দাদু বিকেলে ছাদে পায়চারি আর গাছেদের পরিচর্যা সেরে হাত মুখ ধুয়ে খাটে বসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে টিভি দেখতে দেখতে হুংকার দিয়ে বলেন, দুধ!
বউমাদের কেউ দুধের গ্লাস হাতে চলে আসে এক দৌড়ে।
সে দিন ও দুধের গ্লাস এল।
দাদু হাতে নিয়েই আরেক হুংকার ছাড়লেন, এই ঠান্ডা দুধ খাইয়ে আমায় অসুস্থ করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে ? অপদার্থ সব!! সব কটাকে বাড়ি থেকে বের করে দেব!!
এই গর্জন বাড়ির লোক দিনে চার পাঁচ বার শুনে থাকে রোজ।
বউমা যিনি রান্নার ফাঁকে দুধ নিয়ে এসেছিলেন, বললেন, বাবা এত ফুটন্ত দুধ, ঢেলেই নিয়ে এসেছি।
দাদুর প্রথম প্রশ্নই হল, তবে কি আমি মিছে কথা বলছি ?
এরপর গলার আওয়াজ উত্তর উত্তর উচ্চগ্রামে উঠতে লাগল।
অন্য যে বউ রান্নাঘরে ছিল একছুটে এ ঘরে এসে বলল, দিন বাবা আমায় দিন। আমি গরম করে আনি।
বলে গ্লাস হাতে রান্নাঘরের দিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে, আবার সিঁড়ির দিকের দরজা দিয়ে গ্লাস হাতে ঢুকে বল্লেন, ” এই নিন বাবা ফুটন্ত দুধ।
দাদু সেই গ্লাসটাই হাতে নিয়ে লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন বাহ এইতো চাই!!
ঠান্ডা দুধ কি খাওয়া যায় ?
যিনি প্রথমবার দুধ এনেছিলেন রাগে বেগুনি লাল হতে থাকলেন। আর বাড়ির বাকি সবার হাসতে হাসতে পেটে খিল।