সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১১৩)

রেকারিং ডেসিমাল
সেই যে কে উপরে বসে থাকে, বলি না ?
সব সময় খুব সুবিধের লোক মনে হয় না, যে যাই বলুক।
ব্যথাসুলো অসুখ বিসুখ ত আছে, সে বাদ দিয়ে ও, কি যে খারাপ খারাপ রসিকতা করেন।
যাকে বলে প্র্যাকটিকাল জোক আর কি।
বেনারসের শেষ দিন বললেই গায়ে সেই চড়চড়ে রোদের ছোঁয়াটা আবার মনে পড়ে।
গোল গোল থামের মত, না না থামের ওপরে চাতালের মত আছে সারা ঘাট জুড়েই।
আমি দুই ছানার মাথায় টুপি পরিয়ে দু হাতে দু জনকে ধরে তিন চার ধাপ সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে ছিলাম।
সিল্কের শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা। কারণ ওই, রোদের তাত।
গোল জায়গায় বসে, মগে করে গঙ্গার জল নিয়ে মাথায় ঢালছিলেন শ্বাশুড়ি মা,শ্বশুর এবং তাঁদের ছেলে।
আমি ত হলিডে হোমের বাথরুমে নিজের এবং ছানাদের চান সেরে এনেছি।
বেরোবার পথে আগে আমি এগিয়ে এসেছিলাম বলে সবাই একটু চিন্তায় পড়ে গেছিল দেখতে না পেয়ে।
তারপর মন্দিরের চত্বরের দোকানদারেরা বলেছে, কিসে ঢুনঢতে হ্যয়?
তারা এই কদিন আমাদের সবাইকে ঢুকতে বেরোতে দেখছিল ত।
আমার কর্তা যখন বলেছেন, আরে হামারে মিসেস…
তারা সব হেসেটেসে বলেছিল, হাঁ হাঁ, উও ভাবি তো যো হামেশা দো বাচ্চে কো লেকে ঘুমতে হ্যয়?
উস তরফ মোড় লিয়ে, যা কর দেখিয়ে।
আমি বড়ই খুশী হয়েছিলাম এই বর্ণনায়।
সেইটাই ত পছন্দসই পরিচয়।
…উও ভাবি যো হামেশা দো বাচ্চে কো লেকে ঘুমতে হ্যয়।
দো বাচ্চেকে দু হাতে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
বাকি তিন জনে চান করতে করতে অনেক ডেকেছিল।
–আরে, কি আরাম।
–ওরে, কত পুণ্য, এ কেউ মিস করে?
অন্তত বাচ্চাদের পাঠা।
আমি শক্ত হয়ে ঘাড় নেড়ে মানা করে দিয়েছি।
রাতে দেখেছি না?
যত দাহ হওয়া চিতার ভস্ম, নাভি, সব ত ওই জলেই।
মা গঙ্গা মাথায় থাকুন। মাথায় জল ছিটে দিয়েছি তো।
এ দিয়ে চান তাই বলে , নৈব নৈব চ।
কলকাতায় ফিরে এসে ননদের বাড়ি গেছি সবাই মিলে।
কলকল করে গল্প। পুতুল, প্রসাদ, টুকিটাকি, বেনারসি ইত্যাদি দেয়া হয়েছে। সব্বাই মিলে হই হই। আর ওদের বাড়ির এলাহি খাওয়ার ব্যবস্থা।
এত সবের মধ্যে এত্ত গরম লেগেছে, আমি একটু জল খাবো বলে বোতল খুঁজছিলাম।
দেখলাম ফ্রিজের ওপরে একটা থামস আপের বোতলে জল রাখা।
বেশ কিছুটা ঢকঢক করে খেতে খেতেই শ্বাশুড়ি হাঁ হাঁ করে উঠে বললেন, এই এই কী খাচ্ছিস? ও ত গঙ্গাজল, ওদের জন্য কাশী থেকে আনলাম। দেখছ, এই বউকে নিয়ে কী করি ?
দুই ঢোক খাওয়া হয়েছিল। একেবারে আঁতকে উঠে ক্ষান্ত দিলাম।
তাড়াতাড়ি জগের থেকে গ্লাসে জল ঢেলে দিল ননদ। বলল, না না একটুই খেয়েছে।
আমি ব্যজার মুখে চুপ করে রইলাম।
ভাবলাম,থ্যা থ্যা ইসস!!
এটা কী রকম হল মা গঙ্গা। চান করার সময় হ্যাটা করেছি বলে খাইয়েই দিলে এই বিশ্বনোংরা জল?
ছ্যা ছ্যা। ধুত্তোর ।