সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব – ১০)

অমৃতায়ণ

রথীন আমার কলেজবেলার বন্ধু । আসলে বন্ধু বলতে যেটা বোঝায় ঠিক সেরকম নয়, তবে হাসি মজার সম্পর্ক। রথীনের একটা ব্যান্ড আছে, তবুও ঝাঁকরা চুল নিয়ে কলেজের ছেলে মেয়েদের কাছে ও রকস্টার নয়, বরং অনেকে পাঁচ ফুট তিন এর হাইট সবটা মিলিয়ে ‘ঝাঁকরা জোকার’ নামেই ডাকে। কিছুক্ষণ থেমে আবার বলল – ” একটা কেস হয়ে গেছে রে, একটু বিপদে পড়েই তোকে ফোন করছি – ”
আমি কথাটা কেটে চিন্তিত হয়ে বললাম –
” আরে কি হয়েছে সেটা তো বল!”
– দাঁড়া আমি ছোটকে দিচ্ছি, ও তোকে সব বলছে । এই নে – ( ও বলা হয় নি , রথীন আবার তোতলা , কথা বলতে গেলে সবটা গুলিয়ে গলায় আটকে যায়, রহস্যটা হল ও যখন গান গায় তখন কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না সে এ জিনিস এতটা তোতলা হতে পারে) হ্যালো …হ্যাঁ দাদা, শোনো বিশাল চাপ হয়ে গেছে। সুলগ্না দি’র নামে বাজে পোস্টার সারা গড়িয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে ।
পোস্টার- সুলগ্না- পোস্টার- সুলগ্না :পোস্টার
গড়িয়া-তে নতুন মাল : সুলগ্না
ছোটো বলে যাচ্ছে – আর আমরা পুরোটা বুঝতে পারছি এটা আর্য ছাড়া আর কেউ এ কাজ করবে না।
ছোটো , রথীন আর সুলগ্নাদের মধ্যে একটি নতুন ত্রৈমাসিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে । ছোটো রথীনের ব্যান্ডের গিটারিস্ট। সুলগ্নার ঘটনাটা শুনে হঠাৎ তুলোর মত আকাশ পরিণত হল কালো মেঘের বস্তায়। এ বস্তায় লুকিয়ে আছে অনেককালের চাপা কালো একটা মন। সুলগ্না আমার ব্যচমেট,এমন নোংরা কাজ কে করতে পারে! মাথার মধ্যে সবটাই জট পাকিযে় যাচ্ছে ।
আমি বললাম – কি উল্টোপাল্টা বলছিস! কোথায় দেখলি তুই এসব?
– আরে, সুলগ্না দি সকালে কাঁদতে কাঁদতে ফোন করেছিল। আজ ঘুম থেকে উঠে ওর বারান্দায় দেখে ওর ছবি দেওয়া পোস্টার ছড়ানো । সকাল আটটায় একটা অজানা নম্বর থেকে ফোনও আসে ওই পোস্টারে ওরা নম্বর দেখে।
– (বেশ রেগে) কি ছিল ওই পোস্টারে লেখা! কি ছিলো
– দেখো ফোনে এসব বলা যাবে না, তুমি বিকেলে আজ দেখা করতে পারবে ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশনে । আমার বেশি ব্যলেন্স নেই , ফোনটা রাখছি।
– শোন … শোন … ধুর! ফোনটা রেখে দিলো। মনের মধ্যে একটা অজানা অন্ধকার চিন্তা সবকিছু গুলিয়ে দিচ্ছে। কি আছে ওই পোস্টারটায়?
ভিআইপি রোডে বাস থেকে নেমে পারিজাত কে ফোন করলাম । ধুরর ! এ এক ছেলে বটে – ফোনটা কিছুতেই একবারে ধরবে না। আজকে ক্লাসটাও ঠিক করে নেওয়া হবে না। তবে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল এই সমাজ একটা বিরাট বড় কাঁকডা় – যার পেটের মধ্যে ছেযে় আছে অনেক ছোট বড় দাঁডা় উচু জীব , তারা দেখে উন্নতি সৃষ্টির পিছনে যে মানুষ তাদের মাংস কামড়ে কামড়ে আলাদা করে দেখতে থাকে – দেখতে পাচ্ছি …. এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো!
বাজুক ফোন , বাজুক ।
এই কারণে খাতায় লিখেছিলাম একদিন কাঁকডা়র বিরুদ্ধে – আর তাই আমরা খুব স্পষ্টভাবে যা কিছু পরম বা চরম বলে জেনেছি তার সামনে নিজেদেরকে পরীক্ষার সামনে ফেলতে আহ্বান জানাই। কিন্তু আমাদের সেই পরম সম্বন্ধে যথাসম্ভব নীরবতা অবলম্বন করতে হয়। সাবধান হতে হয় যাতে তা আমরা সর্বসাধারণে প্রকাশ না করে ফেলি। যে কোনো যোগাযোগের সময় স্মরণে রাখতে হয় যাতে তার থেকে একটা দূরত্ব আমরা বজায় রাখি যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের ব্যক্তিগত উন্মত্ততা নিয়ে সে শিল্পকীর্তিটির যৌক্তিকতা অথবা সেটা কতদূর নিয়মাবদ্ধ তা খুঁজে দেখার জন্য তার অন্দরমহলে প্রবেশ করছি, যেন একটা জন্মগত নকশা যা শিল্পীর নান্দনিকতার যে স্বচ্ছতা তার ভেতরে প্রতিভাত হওয়ার আগে পর্যন্ত গোপনই থাকে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।