সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৪৫)

রেকারিং ডেসিমাল

আশেপাশে ঘুর ঘুর করে,  শ্বাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে, দাও আমি চা টা নিয়ে যাই, বলে, অন্যরকম মিত এবং মৃদুভাষী মানুষটির কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করে নতুন বউ।
মুখে সব সময় স্মিত হাসি টেনে রাখা মানুষটি নিশ্চয়ই টের পান।
দিন দুয়েক পরে একটু একটু করে কথা এগোয়।
কি পড়াশোনা। বাবা মা বাড়িতে কি করেন। অবসর সময় কি করতে ভালো লাগে। খুব ধীরে জেনে নিতে থাকেন প্রাজ্ঞ মানুষটি।
তারপর ইংরেজিতেই কথা চলে।
দু জনেই আরামে গল্প চালান।
নাতবউ জানতে পারে সে অঙ্ক নিয়ে  ভয়ানক আতঙ্কে থাকলেও দাদু অঙ্কে তুখোড়। বড় ভালোবেসে এখনো বিষয়টা পড়ান ছোটদের।
দেরাদুন শহর দুন স্কুল আর হস্টেলের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। সেই ইস্কুলের ছাত্ররা দাদুভাইয়ের কাছে হাকুপাকু করে অঙ্ক শিখতে আসে।
বড়মাসি মেসোমশাইয়ের কাছে দেরাদুনেই থাকেন কিনা মানুষটি।
এক ফাঁকে গর্বিত বড় মেয়ে এসে বলে যান,  বুঝলে, এত দিন হল রিটায়ার্ড,  তবু বাবার ছুটি নেই।
উফ ছাত্রদের জ্বালায় তিষ্ঠানোর উপায় আছে নাকি ? আবার কিনা যারা পয়সাও দিতে পারে না তাদের তো পড়ায়, ফের তাদের জন্মদিন হলে মাস্টারজী নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে তাদের জন্মদিনের পার্টি করে। আর বল কেন।
একটা বাক্যে ছবি পরিষ্কার ফুটে ওঠে।
মানুষটি বিদ্বান শুধু নন। দেহে যত দীর্ঘ মনের দিক দিয়েও ততটাই বড় মাপের।
অতীতের পেশায় তিনি যে আইনের মানুষ, এককালের তুখোড় জজসাহেব সে কথা জানিয়ে,  এইবারে বিয়েবাড়ির লোকে থইথই বাড়ি নিয়ে হিমসিম খাওয়া মেজমেয়ে, নতুন শ্বাশুড়ি পাশে এসে বলেন,  বুঝেছ বউ,  এইজন্য লেখাপড়া জানা বউ এনেছি। দেখ আমার বাবাকে। এত বয়েসেও বিদ্যার জোরে এত সম্মান পাচ্ছেন,  অর্থের কথা ত বাদই দিলাম। সারা দেরাদুন এক ডাকে মাস্টারজীকে চেনে আর নমো করে,  বুঝলে। স্বদেশে পূজ্যতে রাজা বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে।
বড় মাসির মুখখানাও আলো আলো হয়।
নতুন বউ আগেই জেনেছে, তাঁর স্বামী, মানে বড় মেসোমশাই, যাঁকে কিনা তাঁর গিন্নী সারাক্ষণ ব্যানার্জি মশাই বলে উল্লেখ করেন প্রতি দুই মিনিট অন্তর,  তিনি এদেশে এবং বিদেশে অজস্র সম্মান পাওয়া পন্ডিত মানুষ। মস্ত জিওলজিস্ট।
বিদ্যোৎসাহী মানুষদের দেখে বইপোকা বউয়ের মন ভালো হয়ে যায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।