সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৮৩)

রেকারিং ডেসিমাল
আমার ছেলে টালিগঞ্জ বাড়িতে চতুর্থ প্রজন্ম।
দাদু তাকে দেখেই মহাখুশি হয়ে চেঁচিয়ে ডাকেন, ওরে আমার ফোর্থ জেনারেশন!!
সেই হাফপ্যান্ট পরা ক্ষুদ্র ব্যক্তি পিলপিল করে দৌড়ে চলে বারান্দা দিয়ে। তুরতুরিয়ে দিদির সাথে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে দাদুর গাছের পাতায় টান লাগায়।
ছাদে কত গাছ। দাদু আর সেজকাকু অজস্র গাছ বহু যত্নে বড় করেন। বনসাই ও আছে। খুদি লাল টুকটুকে লঙ্কা, আম, টমেটো।
টবের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ায় লাল নীল ফ্রক, আর হলুদ সবুজ মিকি মাউস আঁকা হাফ প্যান্ট।
দিদা নাতির ঘরের পুতি দেখেই স্বর্গে গেছেন। কিন্তু তাঁর চিহ্ন ছড়িয়ে সারা বাড়িতে। চোখে কম দেখেন, সুগার বেড়ে দুর্বল হয়ে পড়েন অনেক সময়, তাই দেয়ালে হ্যান্ডেল লাগিয়ে দিয়েছিলেন দাদু। যাতে দু ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাথরুমে যেতে গিন্নির অসুবিধে না হয়।
সে হ্যান্ডেল ধরে ঝুলতে থাকে খুদে মানুষ।
পর্ণশ্রী বাস স্ট্যান্ড পেরিয়ে পার্কে যাবার সময় সে যে খুব উত্তেজিত হয়ে দেখার চেষ্টা করে কন্ডাক্টর আর হেল্পার কাকুদের।
কি সুন্দর বলে ওরা, ধর্মতলা, ধর্মতলা, ডালহাউসি ডালহাউসি।
অত কিছু ছোট মানুষ এখনো আয়ত্ত করতে পারেনি।
তাই বলে চেষ্টার ত্রুটি নাই।
প্রাণপণে ঝুলে ঝুলে বলে, ধামলাতলা! ধামলাতলা!
দাদুর ভাঙ্গাচোরা ফোকলা মুখখানা আলো আলো হাসিতে ভরে ওঠে।
বলেন, আররে ফোর্থ জেনারেশন, তুই যে বাসটাই চালিয়ে দিলি আমার বারান্দায়। দ্যাখো দ্যাখো সবাই। কি কান্ড দ্যাখো।
নাতবউ মনের খাতায় টুকে রাখে, এইসব কত দামি এন্টিক মুহূর্ত।
চারটি প্রজন্ম এক সাথে থাকা, আনন্দ করা ; আজকের যুগে এ যে ডোডো পাখির মতই বিরল।