রবীন্দ্রনাথ যে কত কাজে লাগেন। নার্সারিতে বাবার কাছে সারা দিন মুখে মুখে শুনে শেখা গান আর কবিতার দৌলতে ফাংশনে ডাক পাওয়া। ইস্কুলে তার মূল্যই আলাদা। ক্লাসের মধ্যে দারোয়ান রামদা এসে বলবে, আন্টি ওকে একটু ছেড়ে দিন রিহার্সাল আছে। সে উঠে যাওয়ার যে কি ডগমগ আনন্দ। আহা! সারা ক্লাস হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে। আন্টি নরম প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে, হ্যাঁ হ্যাঁ যাও…
উফ। গরম কালের সেই দিনের কোন তুলনা হয় না।
তারপর মামাবাড়িতে ফাংশনে অতিথি শিল্পী, নিজের পাড়ায় পুচকেদের নিয়ে নিজের মাতব্বরি, এমনকি আসেপাশের পাড়ায় ডাক পাওয়ার খাতির। সবই সেই রবিবাবুর দয়ায়।
নেহাৎ ছোট বেলায় আকাশবাণীর বাড়িতে গান গাইতে নিয়ে গেছেন নবনালন্দা ইস্কুলের মানুষেরা। সেও রবীন্দ্রনাথকে গলায় নিয়েই।
ইস্কুলের ছোট্ট উঠোনের সামনের সিমেন্ট বাঁধানো মঞ্চে কত নামি মানুষকে ছুঁয়ে ফেলেছি, তখন তার মূল্য ও বুঝিনি।
নইলে ছোট রবি সেজে ধুতি আর হাফ শার্ট গায়ে, আবদুল মাঝির গপ্পোখানা বলে এত যে হাততালি পেলাম, তখন পাশেই হারমোনিয়াম সামনে নিয়ে বসে যে সুন্দর মানুষটি এত আদর আর প্রশংসা করলেম, তাঁর নাম হেমন্ত মুখোপাধ্যায় জেনে ঘাবড়ে যাওয়া উচিৎ ছিল না ?
সে তো হয়িই নি, বরং তাঁর মুখের গান পাশে উইংসে দাঁড়িয়ে শোনাটাই হকের মধ্যে ছিল ফি বছর ।
ক্লাস ফোরের বৈশাখের দিনে রাধা স্টুডিওতে শ্রীমতী সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে টেলিভিশনে প্রথম বার গান গাইতে শেখাও তো সেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই।
সেই, এস হে বৈশাখ। আর সঙ্গের অপূর্ব উজ্জ্বল মানুষটির মনে করিয়ে দেয়া, তাকাবে না কিন্তু, মনিটরের দিকে, একদম নয়।
এই সব হতে হতেই ঝপাং করে প্রেমে পড়ে গেলাম।
পদাবলী ইত্যাদিতে ও মুগ্ধ। ফাঁকে ফাঁকে বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী। কিন্তু প্রেম ত একজনের সঙ্গেই।
কে আর ঘরের বাইরে পা না দেওয়া তেরোর কৈশোরকে বলবে, অয়ি প্রথম প্রণয়ভীতে, মম নন্দন অটবীতে, সখী জাগো জাগো,
মম যৌবন নিকুঞ্জে গাহে পাখি…
বুড়ো বেলা অবধি হার মেনে গেলো লোকজন। প্রথম প্রণয়ের নায়িকার যে ভীত হওয়াটাই ইউ এস পি, অদ্যাবধি আর কারো তাকে এত মূল্য দিতে দেখলাম না।