সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৩৯)
পুপুর ডায়েরি :
পু দাদাদের , মানে চঞ্চল বাবুদের বাড়ি থেকে আমরা পাশের বাড়িতে চলে এসেছিলাম ।
সেটাই পাপুদের বাড়ি ।
আগের বাড়ির চেয়ে এটা বড় ছিলো একটু । রান্না ঘর ছিলো পিছন দিকে লম্বা গলি দিয়ে গিয়ে । আর তার পাশে বাথরুম।তাতে ছোট পুপুর গলা সমান উঁচু বাঁধানো সিমেন্টের চৌবাচ্চা । আগে তাতে বালতি দিয়ে দিয়ে পাশে থাকা কল থেকে জল ভরতে হত । এ বাড়িতে আসার কিছু দিনের মধ্যেই বাবা প্লাস্টিকের পাইপ আর তার কায়দার মুখ ফিট করে দিলেন কলের মুখে ।
ব্যস ।
ভারি মজা । সেই পাইপ দিয়ে রোজ পরিষ্কার জলে ভরতি হতে থাকল চৌবাচ্চা । এক দিন গেলেই মা নিচের দিকের ছিপি খুললে সব জল বের করে দিয়ে ঠিকে কাজের মাসিকে দিয়ে ভেতরে পরিষ্কার করিয়ে রাখতেন ।
কে সি নাগের চৌবাচ্চার অঙ্ক বুঝতে কোনো অসুবিধেই নেই ।
ওপরের পাইপ দিয়ে জল ঢুকছে আর নিচে দিয়ে কুলকুল করে বেরিয়ে যাচ্ছে দিব্যি ।
করো না কত অঙ্ক করবে ।
আর যারা জল ঘাঁটুনি পাজি বাচ্ছা , বাড়িতে বাবা মা না থাকলে তার কীই আনন্দ !
সে হুরহুর করে জল ভরে । ঝুঁকে পড়ে খলবল করে জল্ ঘাঁটে । তাতে সাবান ফেলে । কাগজের নৌকো বানিয়ে ভাসায় ।
জামাকাপড় ভিজে চুব্বুড় হয়ে থাকে । সারা দুপুর গড়িয়ে গেলে নিচের প্যাঁচ খুলে জল বের করে দেয় ।
বিকেলে ফের পরিষ্কার জলে চৌবাচ্চা ভরে নেয় ।
মা আসার আগে শুকনো জামাটামা পরে ভদ্র হয়ে থাকলেই ত্ হল ।
খালি কান ব্যথা , গলা ব্যথা , সর্দি , সাইনাসের যন্ত্রণা , জ্বর , টন্সিল ফুলে ঢোক গিলতে কষ্ট ।
মা অস্থির হয়ে ছুটি নিয়ে কোলে করে বসে থাকেন ।
বিকেলে ডাক্তার বাবুর চেম্বারে , মানে অরুণ ভট্টাচার্য ডাক্তার বাবুর যে চেম্বার চারু মার্কেটের সামনের দিকে , ঢোকার গেটের পাশেই , সেইখানে নিয়ে যান ।
ডাক্তার বাবু শুধু ত চিকিৎসক নন , বাবা মায়ের আত্মীয়সম বন্ধু ।
তিনি ও চিন্তিত হন ।
আহা, মা গো , আবার ঠাণ্ডা লাগিয়ে ফেললে ? পার্টিশনের ওদিকে সবুজ রেক্সিনে মোড়া রুগি দেখার বিছানা ।
টক করে লাফিয়ে উঠে শুয়ে পড়ে পুপু ।
এত নিত্যদিনের কাজ তার ।
সে জানে লম্বা শ্বাস নিয়ে হয় , স্টেথোস্কোপে পিঠ ও দেখবেন ডাক্তারবাবু ।
তারপর , জিভ বের করো , অ্য্যা বলো …
পিছন দিকে আরেকটা পার্টিশন দেয়া জায়গায় নিজে ওষুধ বানিয়ে দিতেন ডাক্তারবাবু , মিক্সচার , পুরিয়া ।
তখন এত ওষুধের কম্পানি ছিল না । ডাক্তাররা কম্পাউন্ডিং ও জানতেন ।
জ্বর হলে কান কটকট করলেও ভাল লাগে পুপুর ।
মা বাড়িতে । দুপুরে মায়ের কোল ঘেঁষে খাওয়া মায়ের হাতে । জ্বরে নো ভাত । পাউরুটি আর পেঁপে কাঁচকলা দিয়ে মাছের ঝোল । মা খাইয়ে দিলে আদা জিরের ঝোল যে কী ভালো ।
আর তার সাথে , সর্দি নিয়ে নাকি সুরে , গল্প বলোওঁ , বললে, মা খাওয়াতে খাওয়াতে অনেক গল্প বলেন।
আর অনেক গল্পের শেষে মাকে রোজ এক বার বুদ্ধু-ভুতুম বলতেই হয় ।
নইলে খাওয়া শেষ হয় না ।