আন্তর্জাতিক || পাক্ষিক পত্রপুট || এ সঙ্কর্ষণ

মিথ্যুক

ছোটোবেলায় ‘সদা সত্য কথা’ বলতে শিখেছিলাম।
মা বলতো ঠাকুর নাকি মিথ্যে বললে পাপ দেয়।
দিদি একবার “মিথ্যুক” বলেছিলো বলে
ঠাস করে এক দিয়েছিলাম বসিয়ে গালে…
চেঁচিয়ে বলেছিলাম, “সত্যি সত্যি আড়ি, যাহ।”

ঘরের কোণায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে দিদি কাঁদছিলো।
গলা জড়িয়ে বলেছিলাম, “খুব লেগেছে রে? ”
অমনি চোখ মুছে ভাব করে নিয়েছিলো,
একটু আগের আড়িটা কীরম মিথ্যে হয়ে গেছিলো…
টুক করে।

সামান্য একটা অফিসে ক্লার্ক ছিলো বাবা।
তাপ্পি দেওয়া একটা নীল শার্ট, বুকপকেটে
একটা পুরোনো পেন আর বাড়ি এসে,
“মণি, একটু চা করো তো।” এই ছিলো বাবার জীবন।
পুজোতে একদিনই নীল শার্টটা পরেই বেরোতো।
কিছু বললেই হেসে বলতো,”দিব্যি আছি তো রে।”
মা কেন জানিনা উঠে চলে যেতো মুখ ঘুরিয়ে।

ভালো শাড়িটা কিছুতেই বের করতো না মা।
কিছু বললে মুচকি মুচকি হাসতো দিদিকে দেখে।
আমি একবারের জায়গায় দুবার ভাত নিলে
কেমন বোকা বোকা মুখ করে চেয়ে থাকতো বাবা।
মা বলতো, “কী রে আট্টু নিবি তেলচচ্চড়ি? ”

এখন, এসি-র তলাতে শুয়ে কীসব প্রশ্ন আসে মাথায়।
ভাইবোনের আড়িগুলো কিন্তু সত্যি ছিলো খুব,
আর মিশবোই না যা।
বাবাও হয়তো দিব্যি ছিলো এক জামাতেই।
সত্যিই হয়তো নিজেরটুকু রেখেই ভাতটা দিতো মা,
ওরাই তো বলেছিলো মিথ্যে বলাটা পাপ।

দিদি, একবার মিথ্যুক বলে ডাকনা রে…

সত্যি বলছি রে মারবো না।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!