ক্যাফে কলামে সঙ্কর্ষণ

সম্পূর্ণ হস্তপদের অধিকারী না হ’য়েও সমগ্র পৃথিবীকে তিনি রক্ষা ক’রতে সক্ষম, দোর্দণ্ডপ্রতাপ উৎকলাধিপতি স্বয়ং তাঁর যাত্রাপথ পরিচ্ছন্ন রাখেন। সারা বছরে মাত্র একবার সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বাসগৃহের বাইরে আসেন, তাতেই শ্রদ্ধার আতিশয্যে রথ, পথ, এমনকী মূর্তি পর্যন্ত নিজেদের প্রতি ঈশ্বরত্ব আরোপ ক’রে বসে।

সাধারণ মানুষের ন্যায় তাঁরও পরিবার আছে, বয়সে ছোট স্নেহের বোনটিকে তিনি আগলে রাখেন, ঠিক যেন আমরাই। স্ত্রীয়ের অভিমানে তিনি ভয় পান, উৎসবের কালে প্রতি বছর মাসির বাড়ি যেতে তাঁর উৎসাহ দেখার মতো। অতিরিক্ত স্নান ক’রে তাঁরা ২টি ভাই জ্বর বাধিয়ে ফেলেন, খিচুড়ি, মালপোয়া খেতে বড় ভালোবাসেন।

তেমনই এঁকে ভক্ত স্মরণ ক’রলে দূর থেকে দূরতর অজ পাড়াগাঁয়ে সানন্দে অধিষ্ঠান করেন, কারো প্রতি অন্যায় হ’লে তাঁর রোষ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়, ব্রাহ্মণ থেকে শূদ্র অবধি সকলে তাঁর কাছে সুবিচার পায়, প্রয়োজনে ক্ষত্রিয়কে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে সঙ্গ দিতেও পারেন। পিতা, স্বামী, ভ্রাতা, পুত্র প্রত্যেকের ভূমিকায় তিনি পুরুষোত্তম।

সন্ধান এবং উচ্চাঙ্গ সাধনা পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মে বর্তমান থাকলেও স্বয়ং ঈশ্বর যেখানে সিংহাসন ছেড়ে ধূলিময় আসনে প্রজার পার্শ্বে নেমে আসেন, সাম্যবাদী আদর্শ সেখানে পৃথকভাবে শিক্ষার প্রয়োজন হয়না। ঈশ্বরের সম্মানহানি আমাদের মস্তিষ্কে নয়, মর্মে আঘাত করে। যে বিশ্বাস আমাদের শিখিয়েছে, তিনি সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন।

জগতের নাথ, যিনি অর্ধেক হাতে সারা পৃথিবী সুরক্ষিত রাখেন, তিনিও মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার্থে সাধারণ মানুষের ওপর নির্ভরশীল। প্রেমের এই অভূতপূর্ব বন্ধন সম্ভবতঃ পৃথিবীতে ২য় কোনো ধর্মে নেই। অন্ততঃ নবীর সম্মানে নরহন্তারক সম্প্রদায়ের তো নেইই। ঈশ্বর হিন্দু ধর্মে প্রভু নন। সর্বশক্তিমান এখানে ভালোবেসে শ্রদ্ধেয়, ভয়ে নন…

সমস্ত জ্ঞান, বিজ্ঞান, নৈতিকতা এখানে তুচ্ছ হ’য়ে যায়।

ধন্যবাদ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।