সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১৪)

রেকারিং ডেসিমাল

১৪
আরেক জন ছোট মানুষ বন্ধু হতে এগিয়ে এসেছিল একেবারে শুরুতেই ।
বড়রা একতলার ঘরে দরকারি কথায় ব্যস্ত। রেজিস্ট্রার এসেছেন। দুই বাড়ির বড়রা, দুই জোড়া বাবা মা সবাই সইসাবুদ করেছেন। কিনা আশীর্বাদ এবং রেজিস্ট্রি ম্যারেজ একসঙ্গে হল।
তিন ননদিনীই উপস্থিত। নতুন নন্দাই ও। এ দিকের কাকি ও দিকের মাসি।
তার মধ্যে রানি পিঙ্ক ঘাঘরা আর ছোট্ট ওড়না পরা অতি ক্ষুদ্র এক মানুষ গুটগুট করে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায়।
এ বাড়ির সিঁড়িতে উঠতে কষ্ট হয় না। তিন ভাঁজ করা বাহারের সিঁড়ি। ছোট পা অনায়াসেই চলে এসেছে। উপরে উঠেই আর্চ দেওয়া রান্নাঘর আর বসার জায়গা।
একজন দিদাকে দেখতে পেয়ে ছোট মানুষটির প্রশ্ন , ও কোথায় গেলো গো ?
দিদা হেসে বললেন, কে ?
ঐ যে মালা পরা ?
দিদা বুঝলেন, ইনি আজকের নতুন বউকে খুঁজতে এসেছেন।
বললেন , সোনালি?
গম্ভীর মুখে ছোট মানুষ বলল , হুঁ, সুনিলি।
এরমধ্যেই এই ভদ্রমানুষটির মা এর খোঁজে উপরে উঠে এসেছেন।
তিনি তাড়াতাড়ি বলে দিলেন, না না সোনালি বলে না, মামি বলে।
সেই থেকে মুখস্থ হয়ে গেল পড়া।
নতুন বউকে শ্বশুর বাড়িতে যেই কেউ ডাক দেয়, সোনালি ই, অমনি দৌড়ে যায় ক্ষুদ্র মানুষ।
না না, সুনিলি বোলে না। মামি বোলে।
সেই রোগা পাখির ছানার মত মানুষকে দেখলে মামি হাত বাড়ায়। আর মামিকে দেখলেই সে টকাস করে কোলে উঠে পড়ে। একদিকের কোমরে একে বসিয়ে নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ায় নতুন বউ। টের ও পাওয়া যায় না প্রায় যে কোলে একটা জলজ্যান্ত ট্যাঁকঘড়ি বসে পুটুস পুটুস করে গল্প করছে।
কিনা এনার মুখের খাবার চট করে গিলতে দেরি হয়। মুখে খাবার টোপলা করে নিয়ে বসে থাকে বলে বকুনি খায় বিস্তর।
মামি তাকে নিয়ে বসে গল্প বলবে বলে। গল্পের সঙ্গে গেলাটা দ্রুত গতিতে এগোয়। গ্রাসটা চট করে গিলে তবে ত বলবে, তারপর ?
নতুন বউ এ পুতুলটিকে সাজাতেও ভালবাসে খুব।
মামির বউভাতের বেনারসি, গয়না, লিপিস্টিক সব পড়ে লক্ষী হয়ে চুপটি করে খাটে বসে থাকেন পুতুল। মামি ক্যামেরা এনে ছবি তুলে রাখে।
সাদা ফ্রিল দেওয়া পেন্টুল পরা মানুষটি খালি গায়ে দৌড়ে বেড়ায় মামাদের বাড়ির বারান্দায়। মাসিরা বলে, মুঘলি, চাড্ডি পেহেনকে ফুল খিলা হ্যয়। তখন টিভিতে কার্টুন হত কিনা, তার জিঙ্গল।
মামা বিচিত্র নাচ শেখাতে চেষ্টা করে। বলে ঃ হাদাগদা। বিরাট লম্বা মামা আর খুদে ভাগ্নীকে নাচতে দেখে হেসে কুটিপাটি হয় সবাই। মামাকে নিজের সমগোত্রীয়ই মনে করে ভাগ্নী।
মামা সকালে দোতলায় টেবিলে বসে, অফিসের গাড়ি ধরবে বলে তাড়াহুড়ো করে রুটি ঠুসছে মুখে।
ট্যাঁকে চড়ে তিনতলার থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামছে পুচকে মানুষ।
মামির কাছে নালিশ পৌঁছায়, মামি মামি মামা মুখে পোটলা করছে। বকো ত। বকো বকো।
হুঁ হুঁ বাবা। মুখে খাবার পোটলা করা খুব বড় অপরাধ।
ছোট হলেও, এ মানুষটির সে জ্ঞান আছে।

চলবে…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।