গল্পের জোনাকি রাখী সরদার

আঁখিনুর
সূর্যাস্তের কোল ঘেঁষে মাগরিবের আজান ছড়িয়ে পড়ছে। ঘরের চালের উপর সম্পূর্ণ আকাশটা নেমে আসছে একটি ডাগর পানোখির মতো। এই বুঝি সে বিশাল কালো ফণা মেলে ধরিত্রী শরীরে ছোবল মারল বলে! মাটির দাওয়ায় বসে আজহার। রুগ্ন শরীরে পুবের ঘরটার দিকে তাকিয়ে।
এবার ভেঙেই পড়বে। অকালের শাপ লেগেছে। অনেকটা তার মতো। ক’বছর আগেই ঘরটি বানানো। ঘরটি ও সে দু’জনেই বড় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাচ্ছে। ছোটভাই বসিরকে উঠোন পেরিয়ে আসতে দেখে আজহার বলে ওঠে,
“বসির, পুবের ঘরটা ইবার সারিয়ে লে।’’
“ভাইজান তুমার চোখটাও কি আল্লা কেড়ে লিচে! উ’য়ার সারাই করলে থাকবে?”
“দু’চারটে বাঁশের ঠেকনা দিলে তো ক’বচর টেকে।”
“দিনভর ওসুদ খাও আর ভাবির সনে ঝগড়া লাগাও। ইত ওসুদের টাকা কুতা থিকে আসে তার
খপর লাও?’’
বসিরের কথায় মা সাহিদা বেওয়া বলে ওঠে,
“বড় ভাইজানের সঙ্গে ইমনপানা কতা?’’
“আঃ, মা চুম্ মরো। বসির তো হক কতাই কয়েচে।’’
সাহিদা বেওয়া সংসারের অবস্থাটা বোঝে। চুপচাপ ঘরের বাইরে চলে যায়। বউ আঁখিনুর পাড়ার টেপাকল থেকে জলের ঘড়া নিয়ে রান্নাশালে ঢোকে। কালো আকাশপানে তাকিয়ে থাকে আজহার। একসময় এই সংসারে তার কত কদর! দাওয়া জুড়ে চার-চারটে ঢেড্ডা। কত কারিগর সেই ঢেড্ডায় চিকনের শাড়ি বুনত। তার কাছে শাড়ি, চুমকি, রেশমি সুতো কিনতে আসত লোকজন। তখন তার নামই ছিল উস্তাগার আজহার। আজ সব স্মৃতি। পাশের গ্রামের আমিন মোল্লার সুন্দরি ঝিউড়ি আঁখিনুর। তাকে মা সাহিদা নিজে পছন্দ করে আনে। আজহার তাকে পেয়ে খুবই খুশি ছিল। কিন্তু আঁখিনুর তাকে মন দিতে পারেনি। আল্লাও
তাদের সাদিতে খুশি হয়নি। হলে তাদের একটা বেটা বা বেটি দিত। এরমধ্যে শরীরে কঠিন রোগ এসে জুটল। আজহারের ভাবনার মাঝে আঁখিনুরের চুড়ির রিনিঝিনি। তার খুব তেষ্টা পায়। আঁখিনুরের উদ্দেশ্যে হাঁক দ্যায়,
“নুরবিবি, একটু পানি দ্যাও…”
আঁখিনুরের কোনো সাড়া নেই,
“ও নুরবিবি জোর তেষ্টা লেগেচে।’’
আঁখিনুর বসিরের ঘর থেকে বের হয়ে আসে আলুথালু কাপড়ে। আজহারের সামনে ঠক করে পানির মগটা
রাখতে রাখতে বলে,
“গতর কী ইকেবারে গ্যাচে? একটু পানি গইড়ে লিতে পারো লাই! চিল চেঁচায়!”
আজহার একদৃষ্টে আঁখিনুরের আধখোলা বুকের দিকে তাকিয়ে। ডানদিকের বুকের উপরিভাগে স্পষ্ট লালচে নখের দাগ। আঁখিনুরের চোখ যায় আজহারের দিকে। ভীতচোখে বুকের কাপড়টা টেনে ঢাকতে যায়। আজহার
খপ করে আঁখিনুরের ডানহাতটা ধরে ফ্যালে। হাতটা নিষ্ঠুরভাবে মোচড়াতে থাকে। লাল কাঁচের চুড়িগুলো টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ে। আঁখিনুর যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে ওঠে,
“আঃ, লাগতিচে ছাড়ান দ্যাও।’’
আঁখিনুরের চিৎকারে ভাই বসির ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে আসে,
“ভাইজান কী হয়েছে? ছাড়ান দ্যাও, ভাবির লাগতিচে।’’
আজহার ফোঁস করে ওঠে,
“ইকেবারে চুম্ মেরে যা।’
সেই সময় বাড়িতে প্রবেশ করে সাহিনা বেওয়া। আঁখিনুর ককিয়ে ওঠে,
“আম্মি, দ্যাখো মোর হাত মুচড়ে ধরিচে।’’
সাহিনা বেওয়া তাড়াতাড়ি ছেলের হাতটা জোর করে ছাড়িয়ে দিতে দিতে আজহারের উদ্দেশ্যে বলে,
“কী হয়েছে বাপজান! এই শরীলে এত রাগ ভালো লয়।’’
“ ইমন বেহায়া বিবির দরকার লাই। খানিকটা বিষ এনে দেও। মুই মরলি তো…”
আজহারের কথা শেষ হওয়ার আগেই সাহিনা বেওয়া আর্তস্বরে বলে,
“বাপজান ইমনধারা কতা কেনে! ঠাণ্ডা হ।’’
ছোট ছেলে বসিরের দিকে ফিরে অত্যন্ত শীতল গলায় উচ্চারণ করে,
“বসির মামুদভাই তোরে ডাকতিচে। কি কামের কতা কয় শুনে আয়।’’
আঁখিনুর দাওয়ার একধারে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। সাহিনা বেওয়া তার দিকে ফিরে ক্রুদ্ধ স্বরে বলে,
“কি করিচিস লা? একটা ছাওয়ালও বিয়োতে পারলি লাই। সে শরম লাই! রান্নাশালে যা। মেঘ করিচে। তাড়াতাড়ি রেঁধে লে।’’
আঁখিনুর কাঁদতে কাঁদতে রান্নাঘরে ঢোকে। এই সংসারে তার সম্মান নেই। যখন তখন বাচ্চা
হয়নি বলে খোটা দেয়। কিন্তু তার সোয়ামীর যে শরীরে দোষ তা বলার উপায় নেই। সবসময় বসিরকে
নিয়ে সন্দেহ। তার মত নেই জেনেও আজহার তাকে সাদি করেছিল। এটা তো সত্যি যে বসিরই তার
ভালবাসা। মনে পড়ে গেল বসিরের সঙ্গে তার স্কুলজীবনের প্রেমের কথা। তখন সে এইট ক্লাসে পড়ে। ক্লাসেরই একজন ছেলে রোজ ছুটির সময় তার পিছু পিছু আসত। একদিন সে হাঁটতে হাঁটতে ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়ে,
“হররোজ মোর পিচু লাও কেনে?
“ভাললাগে তুমাকে।’’
“মোর আব্বাকে চিনো? ইমন ব্যাভার জানলে জবাই করে দিবে।’’
“চিনি, আমিন মোল্লা তো?’’
“মুরুব্বি মানুষের নাম ধরতিচ!”
“চিনি কিনা জিগাইলে। তাই কইলুম।’’
“তুমার ভাইজান যদি জানতে পারে তকন?”
“বসির কাউকে ডরায় না। ভাইজান কিচু বললে বলব আঁখিনুরকে মুই ভালবাসি।’’
সেই শুরু। ক্লাসে কাছাকাছি বসা। মাস্টারমশাইয়ের পড়ানর সময় ঠারেঠোরে দু’জন দু’জনের দিকে তাকানো। সুযোগমতো দরগাতলার ফাঁকা জায়গায় দেখা করা। বেশ চলছিল। হঠাৎ কদিন বসিরের দেখা নেই! সে
অস্থির চিত্তে একদিন স্কুল থেকে ফিরছে, দেখে বসির দাঁড়িয়ে। তাকে ইশারা করে দরগাতলার দিকে যেতে। দুপুরের খাঁ খাঁ রোদ্দুর পেরিয়ে আঁখিনুর দরগাতলায় পৌঁছায়। বসিরকে দেখে ঝাঁঝিয়ে ওঠে,
“ইতদিন কুতায় ছিলে! জানো তুমার তরে মোর পরানডা কি হইছিল?”
আঁখিনুরের হাতটা বসির নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে অত্যন্ত বিষাদকণ্ঠে বলে,
“মুই কাল বোম্বে কাজে যাচ্ছি।’’
“কি কও! পরীক্ষাটা দিবে লাই!’’
“তুমি পরীক্ষা দিয়ে লও। টাকা ইনকাম না করলে তুমারে সাদি করব ক্যামনে!”
সেদিন আঁখিনুর কিছুতেই বসিরের হাত ছাড়তে চায়নি। ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে। তার কান্নার সুরে
গনগনে আকাশটাও হঠাৎ ঝিম মেরে যায়। মেঘ ঘনিয়ে আসে।
“ঘর যাও। পানি এল বলে। কাঁদো কেনে! তুমার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দিতে ঘরে ফিরব। তকন খালুকে জানাব মোদের সাদির কতা।’’
বসিরের কাজে যাওয়ার দিন পনেরর মধ্যেই তার দাদা আজহারের সঙ্গে আঁখিনুরের বিয়ে হয়ে যায়।
বসিরের মা নিজে সম্বন্ধ নিয়ে যায়। আঁখিনুরের আব্বাজান মহাখুশি। শাড়ির উস্তাগার বলে কথা। মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্ত সময়ই দেয়নি। এমন খবরে বসির খুব ভেঙে পড়েছিল। এদিকে কীভাবে যেন তাদের সম্পর্কের কথা বসিরের মা ও তার ভাইজান জানতে পারে। শুরু হয় আঁখিনুরের উপর অত্যাচার। এদিকে বসিরও আর বিয়ে করে নি। প্রায় চার বছরেও যখন আঁখিনুর মা হতে পারল না আজহার আবার সাদি করার তোড়জোড় শুরু করে। ঠিক সেই সময়ে আজহারের শরীরে কঠিন রোগ বাসা বাঁধে। দিনে দিনে শুকিয়ে যেতে থাকে। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ছেলের রোগের জন্যও শাশুড়ি তাকেই দিনরাত দোষারোপ করতে থাকে।
“কি গো আবাগীর বেটি ভাত রাঁধা হল?’’
শাশুড়ির হাঁকডাকে আঁখিনুরের ঘোর কেটে যায়। ভাত নামিয়ে মশলা দিয়ে তরিবৎ করে তরকারি রান্না করে। রাতে সবাইকে খেতে দ্যায়। সন্ধে থেকে লোডশেডিং। আজহারকে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে থাকে। আজহারকে আজ অতিরিক্ত যত্ন করছে দেখে বসির ভিতর ভিতর জ্বলে ওঠে। আধ খাওয়া ভাতের থালা ফেলে উঠে যায়। বসিরকে উঠতে দেখে আঁখিনুর চটুল কণ্ঠে উচ্চারণ করে,
“ভাইজান, উঠে পড়লা যে! গোস্তকষা ভাল হয় লাই!”
বসির আঁখিনুরের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি ছুঁড়ে চলে যায়। আজহার ও সাহিনা বেওয়া আঁখিনুরের ‘ভাইজান’ সম্বোধনে খুশি। সাহিনা বেওয়া বলে ওঠে,
“ইত রাগ ভালো লয় বাপ। দ্যাখ বউড়ির হাতে কালসিটে পড়িচে! চুড়িগুলান ও ভাঙলি!”
“আম্মি কাল সকালেই হামিদা খালাকে ডেকে লিয়ে এসো। উয়ার হাত ভইরে লাল চুড়ি পিন্দিয়ে দ্যায় যেন।’’
কথাকটি বলে আজহার বউয়ের দিকে গভীর ভালাবাসাপূর্ণ চোখে তাকায়। আঁখিনুরও দু’চোখে ঝড় তোলে। অনেকদিন পর আজহারের হৃদয় তোলপাড় করে ওঠে।
রাতে শোবার ঘরে আজহার বউয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আঁখিনুর কাজকর্ম গুছিয়ে ঘরে ঢোকে। তাকে দেখে আজহারের চোখে পলাশফুলের রং। আঁখিনুর স্বামীকে সযত্নে ওষুধ খাইয়ে নিজের আঁচল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলে,
“মিঞা ইবার শোও গিয়া।’’
“নুরবিবি মোর পাশে একটুকুন বসবে?”
আঁখিনুর আজহারের পাশে বসে। আজহার তার কালসিটে পড়া হাতটা হাতের মধ্যে নিয়ে
ধরা গলায় বলে,
“মোরে ক্ষেমা দ্যাও।’’
আঁখিনুর চুপ করে থাকে।
“চুম্ মেরে আছো যে! কতদিন তুমার টিকলি পরা মুখ দেকি লাই। আজ একটিবার পরবে? মুই
দু’চোখ মিলে দেকব।’’
আঁখিনুর উঠে যায়। টিনের ট্রাঙ্কটা খুলে সোনার টিকলিটা বের করে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিকলিটা মাথার সিঁথিতে পরতে থাকে। মুখে এক চোরা হাসি খেলে যায়। খুলে ফেলে বেণীবন্ধন। এই মুহূর্তে তার দিকে দেখলে মনে হবে যেন কোনো হিংস্র সাপিনী বিশেষ! সুযোগ পেলেই ঝাঁপি খুলে বের হবে! যাকেই সামনে
পাবে বিষাক্ত ছোবলে মরণ বিষ ঢেলে দেবে!
বাইরে প্রবল ঝড় বৃষ্টি। ঘরের স্তিমিত আলোয় আঁখিনুরের টিকুলি পরা মুখ দেখে আজহারের হৃৎপিণ্ড নড়ে ওঠে। তার শিরা উপশিরা নেচে উঠছে। এক ঝটকায় আজহার আঁখিনুরকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আঁখিনুর
ভীতকণ্ঠে বলে,
“করো কী! ডাগদার এখন মানা করিছে ইসব…”
কথা শেষ করতে না দিয়ে একটানে শাড়িটি খুলে ফেলে। একে একে ব্লাউজ, পেটিকোট কিছু থাকে না। বিবসনা আঁখিনুর তখন যেন চরের কাদামাটি। আজহার সেই মাটি ঘেঁটে মাছের নরম মাংস খোঁজায় ব্যস্ত।
অতি উত্তেজনায় হঠাৎ আজহারের শরীর কাঁপতে থাকে। আঁখিনুরের বুকের থেকে তার হাতের পেষণ শিথিল হতে থাকে। সেই সময় আঁখিনুর এক ঝটকায় আজহারের রুগ্ন শরীরটা নিজের দেহের উপর থেকে বিছানায় ফেলে দেয়। আজহার বিছানায় শুয়ে কাতরাতে থাকে। তার শরীরের আগুন নিভে ছাইয়ের মতো পাংশুটে হয়ে আসছে। ইশারায় আঁখিনুরকে ইনহেলারের পাম্পটা দেখায়। বিবসনা আঁখিনুর বিছানা থেকে নেমে স্থির মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে। আজহারের শরীরটা যখন ধনুকের মতো বেঁকেচুরে যাচ্ছে তখন আঁখিনুর ইনহেলারের পাম্পটা হাতে ধরিয়ে দ্যায়। আজহার মুখের কাছে নিয়ে নিঃশ্বাসের প্রথম বাতাস নিয়েছে কি চিলের মতো ছোঁ
মেরে আঁখিনুর সেটি নিয়ে নেয়। আজহার ছটফট করতে করতে যন্ত্রটি কেড়ে নিতে যায়। পারে না। শেষ নিঃশ্বাস নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় ছটপট করতে করতে একসময় স্থির হয়ে যায়। তার বিস্ফারিত দু’চোখ
আঁখিনুরের দিকে তাকিয়ে! আঁখিনুর এক পৈশাচিক উল্লাসে ঘরের মেঝেতে একপাক নেচে নেয়। তারপর একটা চাদরে আজহারের শরীর ঢেকে দেয়। মেঝেতে নিজের জন্য বিছানা পেতে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল সকাল সাহিনুর বেওয়ার গলা,
“বউ…, ও বউ উঠে পড় লো। হামিদা বুন এয়েচে।’’
শাশুড়ির ডাকে আঁখিনুর উঠে পড়ে। শাড়িটা ঠিকঠাক করে বাইরে আসে,
“লে বসদিকি। চুড়ি পিন্দে লে।’’
“তুমার বেটাকে ডাকি? কি চুড়ি পসন্দ করে দেখি।’’
“ডাকবি, তা ডাক।’’
আঁখিনুর ঘরে প্রবেশ করে। কিছুপরেই তার আকুলকরা কণ্ঠস্বর শোনা যায়,
“হায় হায়, ই আমার কী হল! হায় খুদা!”
সাহিনুর বেওয়া ঝড়ের বেগে ঘরে ঢোকে। দেখে বিছানায় ছেলের নিঃস্পন্দ দেহ। চোখ দুটো যন্ত্রণায় যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। মা ছেলের স্থির শরীর জড়িয়ে ধরে আছাড় খেতে থাকে। কান্নার শব্দে বসিরের
ঘুম ভেঙে যায়। সেও ছুটে আসে। পাড়ার লোকজন জড়ো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মসজিদে শোনা যায়,
“হাজী পাড়ার আজহার সেখ আজ ভোরে এন্তেকাল করেছেন। উনার জানাজা হবে সকাল নটায়।’’
আঁখিনুরের হাতের চুড়ি ভাঙতে হবে। চুড়িওলি হামিদা বেওয়া চুড়ি পরাতে এসে চুড়ি ভাঙার দায়িত্ব পেয়েছে।
আঁখিনুর কিছুতেই চুড়ি ভাঙবে না। ছুটে গিয়ে নিজের ঘরে খিল দিয়েছে। এদিকে জায়নামাজ পড়ার সময় হয়ে আসছে। তার আগে আঁখিনুরের চুড়ি ভাঙতে হবে। কিন্তু কারো কথাতেই আঁখিনুর দরজা খোলে না। অগ্যতা বসির ডাকতে থাকে,
“ভাবি দরজা খুলো, জানাজার সুময় হয়ে এল যে।’’
অনেক ডাকাডাকির পর আঁখিনুর দরজা খোলে। বসিরের হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
বসির আঁখিনুরের হাতে হাল্কা চাপ দিয়ে অনুরাগভরা কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে ওঠে,
“ভাবি, এত কান্না করো কেন! মুই তো আচি। তুমাকে লাল চুড়ি পিন্দিয়ে রানি করে রাকব।’’