সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব – ৫)

যাও পাখি দূরে

“ হুম,বলুন। আমি সুখেন রায়। ভিতরে আসুন।
“ নমস্কার। আমি মহিষবাথান থানা থেকে আসছি। তিন মাস আগে হওয়া একটা অ্যাকসিডেন্ট নিয়ে কথা বলতে এসেছি। যে গাড়িটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাতে আপনার মেয়ে ছিল। ওর স্টেটমেন্টটা প্রয়োজন। হাসপাতালে গিয়ে শুনলাম ও বাড়ি এসেছে। তাই আপনার বাড়ি চলে আসলাম।”
“ হুম,কিন্তু ও তো কোন কথাই বলছে না।”
“ মানে? ও তো এখন সুস্থ!”
“ না,হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছি ঠিকই কিন্তু ওর স্মৃতিভ্রম হয়েছে কিনা বা অন্যকিছু সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ও কোন কথাই বলছে না। ও ছাড়া তো আরো দুইজন আছে। তারা তো সুস্থ। ওদের কাছ থেকে তো আপনি সব খবরই পেয়ে যাবেন।”
“ আমরা তাই করেছি। কিন্তু যে ক’জন ছিল সবার স্টেটমেন্ট তো লাগবে। গাড়ির মালিক কেস করেছেন ওই ট্রাক চালকের বিরুদ্ধে। তারপর ইনস্যুরেন্স ক্লেম আছে। তাই সবটাই দরকার। আমি আগেও হাসপাতালে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তখন ও কথা বলার অবস্থায় ছিল না। ওদের দু’জনের টা আরো একবার নিতে হবে। সাথে আপনার মেয়েরটও।” সবিতা দেবী জানতে চাইলেন,
“ আচ্ছা,দিনের বেলায় ঐরকম একটা অ্যাকসিডেন্ট হলো কি করে? আসলে খবরটা পাওয়ার পর আমরা আর কোন দিকে তাকাতে পারিনি। মেয়েটাকে কিভাবে বাঁচাবো তাতেই তিন মাস কেটে গেল। আপনার কাছে একটা অনুরোধ,মেয়ে তো কথা বলছে না। কিন্তু সেদিন কি ঘটেছিল আমরা ঠিক জানিনা। আপনি ওর ঐ দুই বন্ধুর ঠিকানা আর ফোন নাম্বারটা দিতে পারবেন?”
“ নিশ্চয়ই। গাড়িটা দীঘা থেকে আসছিল। আর উল্টো দিক থেকে একটা ট্রাক যাচ্ছিল। তারপর প্রায় মুখোমুখি অ্যাক্সিডেন্টটা হয়। ছোট গাড়িটা, থামিয়ে দিয়ে সবিতা দেবী বলেন,“ আপনি ভুল করছেন, গাড়ি দীঘা থেকে আসবে কেন? ওরাতো কোলাঘাটের ধাবাতে ডিনার করতে গিয়েছিল।”
“ আমার কাছে রিপোর্ট আছে ম্যাডাম, ওই গাড়িটা দীঘা থেকে ফিরছিল।”
সবিতা দেবী ও সুখেন বাবু দু’জন দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মিস্টার হালদার বলেন,“ ঠিক আছে,আজ তাহলে আমি উঠি মিস্টার রায়। আপনার মেয়ে একটু সুস্থ হলে আমাদেরকে খবর দেবেন। আপনার ফোন নাম্বারটা দিন। কেস ফাইল দেখে ওর বন্ধুদের নাম ঠিকানা আর ফোন নং আপনাকে পাঠিয়ে দেব।”
ঘরটার মধ্যে একটা আশ্চর্য নীরবতা ছেয়ে গেল। সুখেন বাবু বলে ওঠেন,“ তুমি যে বলেছিলে ওরা কোলাঘাটে খেতে গেছিল। কিন্তু ওরা তো দীঘা গেছিল!”
“ বিশ্বাস করো,ও আমাকে তাই বলেছিল। তারপর তুমি তো সব জানো। রাতে ওরা যখন ফিরছিল না তখন বারবার ফোন করছিলাম।”
“ তুমি না বলেছিলে ওদের কোন বন্ধু কোলাঘাটে থাকে। তাই ওরা ওখানে গিয়ে ডিনার করে ফিরে আসবে।”
“ হুম। আমায় তাই বলেছিল। আমি প্রথমে রাজি হয়নি। বলেছিলাম বাবা অনুমতি দিলে তাহলে তুমি যেতে পারো। তারপর তুমি তো ওকে যাওয়ার সম্মতি দিলে। তখনই তো হাসতে হাসতে ফোনে বলেছল,‘ মা,বাবা রাজি। আমরা সবাই যাচ্ছি চিন্তা করো না।’ তবুও আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম,তোরা কিসে যাচ্ছিস আর কে কে যাচ্ছিস? ও বলেছিল,‘ আমার সাথে রঞ্জনা আছে।’ রঞ্জনার এক বন্ধু গাড়ি নিয়ে আসবে। সেই গাড়ি করে যাব। প্লিজ মা,রাগ করো না।’ “বলে ফোন কেটে দিয়েছিল। আমিও কিছু বলতে পারিনি কারণ ও তো কখনো এমন করে বলে না। পরীক্ষা শেষ। তাই সবাই মিলে একটু লং ড্রাইভে যাচ্ছে তো যাক, এই ভেবে— উফফ্! আমি আর ভাবতে পারছি না।
সুখেন বাবু বললেন,” আমারই দোষ। ওকে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু রাত্রি বারোটার সময় যখন আমরা বারবার ফোন করছিলাম ওতো বলেছিল-‘ রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে। এত রাতে মেকানিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই রাতটা ওদের ওখানে কাটিয়ে সকালে গাড়ি ঠিক করে ফিরে আসবে।’
“ হুম। সকালেও তো ফোন করেছিল। বলেছিল,‘ আমার চিন্তা করো না। রঞ্জনাদের বাড়িতে আছি। ওরা ব্রেকফাস্ট না করিয়ে ছাড়বে না। তাই ব্রেকফাস্ট করে আমারা দুপুরের মধ্যে কলকাতা পৌঁছে যাবো।’

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।