সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রিতা মিত্র (পর্ব – ২)

হিমালয়ের কোলে

আম্বালা ক্যান্টনমেন্টে আমাদের জন্য সুরেশজী বোলেরো গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। সাদা রঙের। আমাদের সব লাগেজ গাড়ির মাথায় তুলে , প্লাস্টিক সিট দিয়ে ঢেকে ভালো করে বাঁধা হল। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। চন্ডীগড় শহরের উপর় দিয়ে যাচ্ছি। এক জায়গায় গাড়ি দাঁড় করানো হল। চা বিরতি। ব্যাগে রাখা স্ন্যাক্স দিয়ে চা পান করে আবার পথ চলা আরম্ভ। সুন্দর সাজানো শহর চন্ডীগড়। বড়ো বড়ো বাড়ি। গাড়ি। শহরের বাইরে , হাইওয়ের ধারে একটা তিন তারা হোটেলে গাড়ি থামালো ড্রাইভার। দুপুরের খাবার এখানেই সেরে নিতে হবে। সকাল থেকে বসে – বসে কোমর ব্যথা হয়ে গেছে। গাড়ি থেকে নেমে একটু ওয়াশ রুমে গিয়ে হাতে মুখে জল দিতেই ঝরঝরে অনুভব হচ্ছে। যে যার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করে আমরা চারপাশের দৃশ্য দেখতে গল্প করতে, ফটো তুলতে ব্যস্ত হলাম। এরমধ্যে আমাদের খাবার টেবিলে সার্ভ করে দিয়েছে। ভোজন পর্ব শেষে আবার চলা।
হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণের কথা শুনলেই সকলের মনে সিমলা, কুল্লু মানালি নাম আসে। কিন্তু আমরা অন্য পথ ধরব।
গাড়ির জানলা দিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি পাহাড়ের সারি। ধুসর রঙ মেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। পথের ধারে নীচের দিকে ক্ষীণ ধারা দেখা যাচ্ছে। ভেড়ার পাল চরছে। প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছি কখন সন্ধ্যা নেমে এলো বোঝাই গেল না। রাত আটটা নাগাদ আমাদের গাড়ি সমরহীল নামক জায়গায় পৌঁছলে হোটেল খুঁজতেই তিনটে রুম পাওয়া গেল তিন পরিবারের জন্য। কিন্তু সমস্যা রাতের খাবারের ব্যবস্থা নেই। আবার সেদিন দশমীর দিন ছিল। সাথে থাকা মিষ্টি দিয়ে দশমী পালন করা হল আর ইলেকট্রিক কেটলিতে বানানো ম্যাগি খেয়ে সকলে নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিলাম। এই সমরহীলে ন্যারো গেজ লাইনে ট্রেন চলে। আমাদের হোটেলের জানালা দিয়ে ন্যারো গেজ লাইনটি দেখা যাচ্ছিল।
পরের দিন সকালে ফ্রেস হয়ে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে পড়া হল। কুফরির চিড়িয়াখানা দেখা হল।ভালুক, বার্কিং ডিয়র,লেপার্ড আরও অনেক জন্তু জানোয়ার আছে এখানে। নালদেড়ার অপার্থিব সৌন্দর্যে মন কানায় কানায় পূর্ণ করে সারাহানের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলাম।
অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চলছে। পলক ফেলার সময় নেই যেন। খচাখচ ক্যামেরার সাটার পড়ছে। যেকোনো জায়গায় থেমে যাওয়া যায়। নিজেকে বলা যায়। দাঁড়াও পথিকবর। হে প্রকৃতি তোমার এমন ধারা পার্শিয়ালিটি কেন? যাকে দাও দু-হাত ভরে দাও। গোটা হিমাচল প্রদেশকেই অধরা মাধুরী দিয়ে ভরে তুলেছ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।