মুখ ফেরায় অন্তু,চশমার কাঁচ পেরিয়ে তার বিষণ্ণ দৃষ্টি এসে পড়ে মেধার মুখে -সত্যিই এর চেয়ে বেশি আর কিছুই বলার নেই এই মুহূর্তে,অন্তত আমার কাছে নেই।
খেয়াল করেনি মেধা এতক্ষণ,অন্তুর গালে একটা ব্রণ উঠছে এবং গালে কয়েকদিনের না কামানো দাড়ি পেরিয়েও সেটা বেশ স্পষ্ট। অন্তুর অগোছালো চুলের গা ঘেঁষে একটা নীলচে ফড়িং উড়ে গেল বিকেলের নরম আলোর দিকে।
এই মুহূর্তে অন্তুর অগোছালো চুলে লেগে থাকা শুকনো ঘাসগুলো ঝেড়ে দিতে খুব ইচ্ছে করছিল মেধার…অন্তুর ঈষৎ কালচে ঠোঁট অথবা ঠোঁটের গায়ে ঘন হয়ে আসা অভিমান –এসবের ওপর আঙুল ছুঁইয়ে রাখতে বড় ইচ্ছে করছিল, অন্ততঃ কিছুক্ষণের জন্য…
হাওয়া দিচ্ছে। মেধার লাল ওড়নায় ঝরে ঝরে পড়ছে নরম শালফুল।
ওরা অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। কারণ-বলা যায় এরকম কোনো কথা ছিলনা ওদের কাছে।
একটা সময় অন্তু উঠে দাঁড়ায়,কাল ভোরে ট্রেন তো তোমার। চলো,তোমায় ড্রপ করে দিয়ে আমি মেসে ফিরব।
দূরে মেঘ জমেছে। ঘোলাটে আকাশের গায়ে কাটাঘুড়ির মত লাট খেতে খেতে নেমে আসছে সন্ধে। শহরতলি সেজে উঠছে মায়াবী নিয়নে।
…ওরা পাশাপাশি হাঁটে,সমান্তরাল সরলরেখার মত।
অন্তু বলে,চাকরিটা বোধহয় এই মুহূর্তে অতটাও জরুরি ছিলনা তোমার জন্য।
মেধাও জানে,চাকরিটা অজুহাত। নৈঋতকে,নৈঋতের বিশ্বাসভঙ্গ,নৈঋতের দেওয়া আঘাত সবটুকু ভুলে থাকার জন্য এই শহর থেকে দূরে চলে যাওয়াটা জরুরি ছিল। আসলে সে পালিয়ে যেতে চায়,হয়ত বা নিজের থেকেই।
এতটাই দূরে চলে যাচ্ছ,হয়ত দেখাই হবেনা আর কখনও…
অন্তুর গলার স্বর কি সামান্য ভারী লাগে?
মেধা বুঝতে পারে ঠিক এই মুহূর্তে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।সেটা কি অন্তুর জন্য?
জানেনা মেধা। শুধু জানে ততটাই কষ্ট হচ্ছে তার,যতটা কষ্ট হলে পা ভারী হয়ে আসে। কঠিন হয়ে আসে ছেড়ে যাওয়া।