কবিতায় বিজন মণ্ডল

২০১০ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি । বর্তমানে কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে নিয়োজিত । কবিতা লেখার পাশাপাশি ভৌতিক কাহিনী লেখা এবং পড়ায় বিশেষ আগ্রহী । প্রিয় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

আজও ভালোবাসি তোমায়

তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম
বসন্তের অন্তিম লগ্নে ।
বারান্দার রেলিং-এর ধারে
এলো চুলে তুমি দাঁড়িয়েছিলে ।
তুমি রোজ বিকেলে
তোমাদের দক্ষিণ বারান্দার পশ্চিম কোণে দাঁড়িয়ে
কোকিলের গান শুনতে ,
একটি কোকিল রোজ এসে বসতো
রাস্তার ধারে জাম গাছটির ডালে
তোমাকে গান শোনাবে বলে ।
কয়েকটি পরিযায়ী পাখিও ছিল
ওরা বোধ হয় তোমাকে দেখার ছলে
ভুলে গেছে আপন দেশে ফিরে যেতে ।
তুমি মায়াবী চোখে উদাস মনে তাকিয়ে থাকতে ।
কী যেন ভাবতে তুমি !
আমিও রোজ লুকিয়ে দেখতাম তোমায় ।
এমন ভাবে কেটে গেল
কত কত বসন্তের বিকেল বেলা ।
তুমি একদিন মুচকি হাসলে
বোধ হয় আমাকে দেখে ।
সে দিনের পর থেকে আর লুকিয়ে নয়
একেবারে তোমার সামনে এসে
তোমাকে দেখতাম ।
তুমিও বিভোর হয়ে লাজুক চোখে
আমাকে দেখতে ।
একদিন বিকেলে তুমি নদীর পাড়ে
বুড়ো পলাশ গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে
আমি তোমার সামনে ।
তুমি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে আমাকে বললে,
কেন দেখো আমায় ?
আমি কোন উত্তর দিতে পারেনি সেদিন ।
শুধু চোখে চোখ রেখে বুঝিয়ে ছিলাম
ভালোবাসি তাই ।
তুমি আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে
লজ্জায় মাথা নিচু করেছিলে ।
পলাশ ফুল ঝরে পড়েছিল
বাতাসের মৃদু ছোঁয়ায় ।
ছুঁয়েছিলাম তোমায়
যখন তুমি ছুট্টে পালাতে চেয়েছিলে ।
আমি তোমার আঁচল
ভরিয়ে দিয়েছিলাম বসন্তের গন্ধে ।
এমনি করে তোমার প্রেমের গন্ধে
ভরিয়ে রেখেছিলাম নিজেকে ।
তার পর হঠাৎ করে
কোথায় যেন হারিয়ে গেলে তুমি ।
তোমাকে আর রেলিং- এর ধারে
দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি না ।
কোকিলের গান আর শুনতে পাই না ।
আমি আজও রোজ নদীর ধারে যাই
তোমাকে খুঁজি বুড়ো পলাশ গাছটার নিচে ,
একটি বার তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য..
কিন্তু তোমাকে আর পাই না ।
এমনি করে কেউ হারিয়ে যায় বলো ?
একটুও কষ্ট হয়নি তোমার ?
তুমি আমার বুকে মাথা রেখে কথা দিয়েছিলে
কোন দিন আমাকে ছাড়া থাকবে না !
তবে কি করে আছো তুমি !
একটুও ভাবলে না আমার কথা ?
আমিও যে তোমার হয়েই থাকতে চেয়েছিলাম ।
আমার ভালোবাসাকে ছেড়ে
কী করে পালিয়ে গেলে তুমি !
আজ বড্ড একা হয়ে গেছি তোমাকে হারিয়ে,
হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে ।
আর একটি বার তোমাকে কাছে পেতে চাই
আর একটি বার তোমার আঁচল ধরে বলতে চাই
খুব ভালোবাসি তোমায় ।
দু’হাত তুলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে
ফিরে এসো আমার কাছে
যদি পারো মরণের ওপার থেকে !

এখনো ওরা কাজ করে

এখনো ওরা কাজ করে ।
সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে অশান্ত জগতে ।
কারো ঘরে ওদের ছোট্ট শিশুটি
তিন দিন না খেয়ে,
কেউ অসুস্থ স্বামীর ওষুধের টাকা জোগাড় করতে ।
মরন ওদের বার বার আসে,
মরনের আগে ।
এখনো ওরা কাজ করে ।
কেউ কয়লা খনিতে,
আবার কেউ অন্যের জমিতে ।
কোমর বেঁধে পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে
ধানের বোঝা মাথায় করে ।
দু’মুঠো ভাতের আশায়
অন্ধকার খনিতে নামে জীবন হাতে করে ।
এখনো ওরা কাজ করে ।
পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল গিয়ে,
অন্যের বাড়িতে বাসন মাজে ।
খিদের জ্বালায় পেটে গামছা বেঁধে,
বাবুদের বাড়িতে রান্না করে ।
সময়ের করাল গ্রাসে
অশ্রু লুকিয়ে কেবল কাজ করে ।
মহামারীতে মানব জীবন যখন ঘরবন্দী,
ওরা মুখ ঢেকে লজ্জা বিকিয়ে
দোরে দোরে কাজ খুঁজে বেড়ায় ।
হয়তো সারা দিনে একটুও হয়না রোজগার ;
দিন শেষে শুধু জল ফোটে,
ফোটে না ভাত ।
তবু ওরা কাজ করে ।
আদি অনন্ত কাল ধরে
এখনো ওরা কাজ করে ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।