কর্ণফুলির গল্প বলায় রবীন জাকারিয়া (দ্বিতীয় পর্ব)

ন্যাম্পোত ত্যাল নাই-গল্প

(রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা)

পইস মাস৷ এব্যার ক্যানব্যা জার পইড়ছে বেশি৷ কী আর করিম৷ তাওতো বিয়ানবেলা উঠপ্যার নাগবে৷ বাড়ির কী আর কামের অভাব আছে? গায়োত একনা পুরান কাপড়া ভাঁজ করি আলোয়ানের নাকান পরিয়া চকিত থাকি নামি পড়িল ওকেয়া৷ কইতর, হাঁস, মুরগি ছাড়ি দিয়্যা কয়ল্যা দিয়্যা দাঁত মাজিয়া হাত মুখ ধুইল৷
এক সানকি পান্তা ভাত আর নুন-আকালি নিয়্যা সোয়ামিক ডাকে তুলিল৷ বিয়ান বেলা উঠি খাবার না পাইলে এই ম্যানশেটা এলা চিল্লাচিল্লি করবে৷ খারাপ খারাপ গাইলাইবে৷
সোয়ামি দোলা বাড়ি গেইলে ওকেয়া ধান উশা শুক্যা করবে৷ সেইগল্যা ফির উরুন গাইন দিয়্যা চাউল বানেয়া দোপরের ভাত আন্না করা নাগবে৷ ওকেয়া জানে ম্যানশেটা দোলাবাড়ি থাকি আসিয়্যা ভাত না পাইলে বাপ-মাও ধরি গাইলাইবে৷ হালুয়্যা পেন্টি দিয়া মাইরাবারো পারে৷ ওমাক খুব ডর লাগে৷
ওকেয়া ওমার ছোট বউ৷ বড় সতীন মরি গেইছে৷ তামারগুল্যার চাইরট্যা ডাঙ্গর ডাঙ্গর ব্যাটা আছে৷ সগায়গুল্যা ওকেয়ার চায়্যা বয়সে বড়৷ সগায় বিয়্যা করিয়্যা মাইয়া, ছাওল-পোল নিয়্যা আলদা খায়৷ ওকেয়া এই বুড়্যা সোয়ামিক নিয়্যা পড়ছে এক জ্বালাত৷ ম্যানশেটার চরিত্রটা যেমন ভাল না তেমন বদমেজাজী৷ কতক সময় সোগ কিছু থুয়্যা পালে যাবার মন চায়৷ কিন্ত যাইবে কোনটে৷ উইয়ারতো কায়ো নাই৷ ফির ম্যানশেটার জন্যে মায়া হয়৷ যতই মারুক৷ গাইল্যাক তাওতো সোয়ামী৷
ওকেয়া জানে বাইরের দুনিয়্যাটা কত খারাপ৷ এই প্যাটটার জন্যে কতনা কিছু করতে হইছে ওয়্যাক৷ কায়ো কোনকিছু ছাড়া এক আনাও হেলেপ করে নাই৷ সারা গতরে এলাও ঐ পাপ নাগি আছে৷ শ্যাষে একটা সার্কেস পার্টিতে ঢুকি যায়৷ স্যাটে থাকি যাত্রা পার্টিত৷ তখন দেখতে শুনতে ছিল মাশাআল্লাহ্৷ উইয়ার জন্যেই লোকজন যাত্রা দেইখপার আসতো বেশি৷ ওকেয়ার দাম আর ঢক দুইটায় বাড়ি গেইল৷ সেই যাত্রা পালা দেখিয়াই ওই ম্যানশেটা পিছ পিছ লাগিল৷ শ্যাষে বিয়্যা করিল৷ ওকেয়াও মাথা গোঁজার একনা জায়গা পাইল৷
হায়রে জনম৷ হায়রে কপাল৷ মাইয়্যা হয়্যা জনমিবার শাস্তি৷
ওকেয়া এইটাকেই মানি নিছে৷ তাছাড়া ম্যানশেটা যে একনাও পিরিত করে না তাও নোয়ায়৷ এলাও মাঝে মাঝে চুড়ি, গয়না, শাড়ি নিয়্যা আসি দ্যায়৷ ত্যাল-সাবুনের কথা না হয় না-ই ধরনু৷

গঞ্জত শুননু যাত্রা নাকছে৷ ম্যানশেটা পতিদিন স্যাটে যায়৷ নয়া ধান নামছে৷ এমার কোন চিন্তা নাই৷ খালি বস্তায় বস্তায় ধান বেচতোছে৷ আর পাইস্যা নষ্ট করতোছে৷ কুনদিন যে হায়্যা হইবে আল্লাহ্ই জানে৷
আইজ সাঁজের ব্যালা ম্যানশেটা একখান নয়া পিরান আর নয়া তবন পরি ব্যাড় হইছে৷ গায়োত আঁতরও লাগাইছে৷ ভাবসাব একনা অন্য রকম৷ কী জানো! কী করতোছে এই বুড়্যা বয়সোত ওকেয়া ভাবে৷

অনেক রাইত পর্যন্ত ওকেয়া বসি থাকিল৷ ম্যানশেটা যদি আইসে৷ ঐ অবস্থায় কখন যে নিন্দ আসছে টের পায় নাই ওকেয়া৷

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।