কর্ণফুলির গল্প বলায় রবীন জাকারিয়া

ঈবাদাহ্’র ঈবাদাত

আমাদের একমাত্র কন্যা৷ বাইয়াতুন ঈবাদাহ্৷ সকলে ঈবাদাহ্ নামেই ডাকে৷ ছোট্ট মেয়ে৷ ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথা বলে৷ মিষ্টি লাগে৷ তাই সকলে ওকে খুব ভালবাসে৷ এমনকি ওর স্কুলের শিক্ষকরাও৷ ও শহরের একটি মান সম্মত স্কুলের নার্সারিতে পড়ে৷ স্কুলটির নাম নর্থ ব্রিজ স্কুল৷ ওর ক্লাশে ও সবচেয়ে ছোট৷ কিন্ত পড়াশুনায় খুব ভাল৷ মেধাবি৷ সকল Exam-এই সে সেরা তিনে থাকে৷ ওর স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের প্রায় সকলেই সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে জড়িত থাকার কারণেই বোধ হয় স্কুল ছুটির পর বিকেলে সহপাঠক্রমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে চিত্রান্কন, গান ও ধর্মিয় শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন৷ আমার মেয়েটিও আনন্দের সাথে নিয়মিত উপস্থিত থাকে৷ কোন ক্লাশ মিসড করে না৷ অবশ্য করলে জরিমানা দিতে হয়৷

প্রতিদিনের ধর্মিয় ক্লাশ করার পর ওর মনে প্রশ্ন জাগে “ঈবাদাত কী?” বাসায় এসে একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “বাবা ঈবাদাত কী?” ও ছোট মানুষ তাই এ প্রশ্নের উত্তর এক কথায় বলা কঠিন৷ আমি তাই সহজ করে বললাম, ঈবাদাত মানে হচ্ছে এই ধরো নামাজ, রোজা, সত্য কথা বলা, অন্যের ক্ষতি না করা এইসব৷
আচ্ছা! আমিতো তোমার সাথে নামাজ পড়ি (মাঝে মাঝে ও আমার সাথে নামাজ পড়ে৷ কখনো পিঠে উঠে৷ কখনো কোলে বসে থাকে৷ কিন্ত রাগ করিনা কখনো৷)৷
তাহলে আমাকে রোজা থাকতে হবে তাই না বাবা? ক”দিন পর পবিত্র রমজান শুরু হবে৷ আমি ভয়ে ভয়ে বললাম এখন তোমাকে রোজা থাকতে হবে না৷ একটু বড় হও মা৷ তখন রোজা রেখো৷ কিন্ত সে রোজা থাকবেই জেদ ধরলো৷ চিন্তা করলাম রোজা আসতেতো আরো কিছুদিন বাকি আছে৷ এর মধ্যে ও ভূলে যাবে ভেবে বললাম ঠিক আছে৷ রোজা থেকো৷
ক’দিন পর রমজান শুরু হলো৷ প্রথম রমজান৷ সবাই সেহরি-ইফতারের ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ রাতে সে হুট করে বললো রোজা সে থাকবেই৷ কী আর করা সেহেরির সময় ডেকে তুললাম৷ সেহেরি করলো৷ তখনো আমরা জানি এটা শুধু ওর জেদ৷ আর কিছু নয়৷ ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমোতে গেলাম৷ সকালে উঠে শুনি মেয়ে কিছু খায়নি৷ রোজা আছে৷ ভয়ংকর কথা৷ আবার ভাবলাম কিছুক্ষণ পর ও নিজেই খেয়ে নেবে৷ তাই কথা বাড়ালাম না৷
ঠিক চারটা কিংবা সাড়ে চারটার দিকে আমার মেয়ে শুধু একটু পানি খেতে চাচ্ছে৷ মুখ মলিন৷ খারাপ লাগছে৷ কষ্ট হচ্ছে৷ তবুও সিদ্ধান্ত নিলাম৷ যেভাবেই হোক এ মাসুম বাচ্চাটার রোজাটা পরিপূর্ণ হোক৷ তাই মটর সাইকেলে করে ওকে শহরে ঘুরতে বেড়ালাম৷ আরতো দুইটা ঘন্টা৷ চিড়িয়াখানা, সুরভী উদ্যান, ঘাঘটের পাড় দেখাতে নিয়ে গেলাম৷ কিন্ত যেখানেই যাই৷ সেখানেই ইফতারের দোকান৷ খাবারের দোকান দেখলেই সে খাবার কিনছে৷ আমিও এভাবে অনেক ইফতার কিনে ফেললাম৷ সময় প্রায় কেটেই গেল৷ বাড়ি ফিরে এলাম৷ ও একটা বড় প্লেটে সব ইফতার নিয়ে বসলো৷ একাই খাবে৷ আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছি৷ যেন মেয়েটা রোজাটা পূর্ণ করে৷
অবশেষে মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি শুনতে পেলাম৷ আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর…৷
বিসমিল্লাহ্ বলে মেয়েটা এক ঢোঁকে এক গ্লাস শরবত পান করলো৷ মুখে একটু নাস্তা দিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো৷ বিশাল প্লেটে পড়ে থাকলো সমস্ত ইফতার৷ আর ঈবাদাহ্ নিজেই বুঝিয়ে দিল ঈবাদাত কী?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।