কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রবীন জাকারিয়া (পর্ব – ১)

(এই ধারাবাহিক গল্পের প্রত্যেকটি পর্বই স্বতন্ত্র৷ বলা যায় একেকটি গল্প৷ তাই একটি পর্বের পর অন্য পর্ব না পড়লেও পাঠকদের অসুবিধা হবেনা৷ তবে প্রত্যেকটি পর্ব পাঠ করলে একটা উপন্যাসের স্বাদ পাবেন বলে আশা করি৷)
ভাই
আমরা দুই ভাই৷ সাজু এবং রাজু আমাদের নাম৷ বড় ভাই আমার চেয়ে সাত বছরের বড়৷ ওকে আমি বড়দা বলে ডাকি৷ ও আমাকে “ছোট” বলে৷ ভাই হলে হবে কী? আমরা হচ্ছি গুরু-শিষ্য৷ ও যা বলবে আমাকে তাই শুনতে হবে৷ ব্যতিক্রম হলে আমার খবর করে ছাড়ে৷
আমাদের বাবা নেই৷ খুব ছোট বেলায় মারা গেছেন৷ আসলে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন৷ সার্টিফিকেট নামক এক খন্ড কাগজের জন্য যুদ্ধ করেননি৷ যুদ্ধ করেছেন দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য৷ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন৷ কোন উপঢৌকনের জন্য নয়৷ কোন্ সেক্টর কমান্ডার কী আদেশ দিয়েছেন তাঁর জানা ছিল না৷ বরং গ্রামের কিছু সংগঠিত মানুষের সাথে তিনিও বল্লম হাতে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট দখল করতে গিয়ে শহীদ হন৷ যেহেতু তাঁর কোন সার্টিফিকেট নেই তাই তাঁর নামের সামনে শহীদ নয় মরহুম বসে৷ আমরা গর্ব করি বাবাকে নিয়ে৷ উনি আমাদের অনুপ্রেরণা৷ আমাদের অমানিশায় ভরা জীবনের বাতিঘর৷ বাবার কবরটা দাদার ভিটের খুলিবাড়ির এককোণে৷ আমাদের তাড়িয়ে দেয়ার কারণে বাবার কবরটা জিয়ারত করতে পারি না৷ তবে দোয়া করি৷ আল্লাহ্”র কাছে দু”হাত তুলে বলি “রব্বির হাম হুমা কামা রব্বা ইয়ানি সগীরা”
বাবার মৃত্যুর পর চাচা-ফুপুরা মা’কে স্থান দেননি৷ তাই আমরা নানা বাড়িতেই মানুষ৷ নানার আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়৷ অন্যদিকে মামা-মামিরা খুব বেশি আন্তরিক নয়৷ আমাদেরকে আপদ মনে করে৷ আমার মা দাসীর মত সংসারের সকল গৃহস্থালি কাজ করে পুষিয়ে দেয়৷ মা শুধু স্বপ্ন দেখেন আমরা যেন লেখাপড়া শিখে মস্ত কিছু হতে পারি৷ কিন্ত নিরাশ হন আমাদের কান্ড কারখানা দেখে৷ লেখাপড়ায় ভাল হলেও দু”জনে খুব দুষ্টু৷ মা বোঝান৷ স্বপ্ন দেখান৷ কিন্ত কে শোনে কার কথা? তাই মা প্রায় সময় মুখ গোমরা করে থাকেন৷
আমার খারাপ লাগে৷ কিন্ত বড়দা’র কথার অবাধ্য হওয়া যাবেনা৷ ও খুবই দূরন্ত৷ আবার স্বার্থপর আর বদরাগি৷ তাই আমি সমীহ করে চলি৷ প্রায় সময়েই আমাদের সকালের নাস্তা হলো ছোট একবাটি মুড়ির সাথে একখন্ড গুড়, খই-মুরখি, বাসি ভাত হলুদ-মরিচ দিয়ে বানানো ভূনা ভাত অথবা শীতের সময় একটা ভাঁপা পিঠা৷ সঙ্গে টিনের কাপে এক কাপ চা৷ কিন্ত বড়দা এখান থেকে ভাগ বসাতো৷ উপায় নেই৷ অন্যদিকে আমি যেন না নিতে পারি৷ সেজন্য ও নিজেরটাতে থুথু ছিটিয়ে দিত৷ এটা খেয়েই স্কুলে যাই৷ আমাদের কাপড় ছিল খুবই সীমিত৷ সেগুলোও খুব মানসম্মত নয়৷ স্পঞ্জের স্যান্ডেল৷ বয়স কত হবে জানিনা৷ শুধু জানি এগুলোকে আরো অনেকদিন চালাতে হবে৷ ছিঁড়ে যায়৷ জোড়া দেই৷ কুপির আগুনে বোতামের দুই মাথা গলিয়ে লাগিয়ে দেই৷ জোড়া লাগে৷ আবার ছেঁড়ে৷ তার দিয়ে বাঁধি৷ বড়দা সব সময় পকেটে তার ভাঁজ করে রাখে৷ পথে যদি স্যান্ডেল ছিঁড়ে যায়?
আমাদের স্কুলটা গঞ্জে৷ বাড়ি থেকে অনেক দূর৷ দুভাই হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাই৷ বড়দা স্কুলে যাওয়ার শর্টকাট একটা রাস্তা বের করেছে৷ গ্রামের পাশ দিয়ে যে ছড়া নদীটা চলে গেছে৷ ওটা পার হলে পথটা অনেক কমে যায়৷ বেশিরভাগ সময় নদীতে এক কোমর পানি থাকে৷ আমরা দুই ভাই পাট ক্ষেতের ভেতর দিয়ে আইল ধরে ধরে পথ চলি৷ ওই সময়টুকু আমার ভয় লাগে খুব৷ কেমন অন্ধকার গা ছমছমে নিঝুম পরিবেশ৷ কোথাও কেউ নেই৷ যদি বাঘ ধরে? আবার মনকে সান্তনা দেই বড়দাতো আছে৷
নদীটা অদ্ভূত উপায়ে পার হই৷ বড়দা পকেট থেকে রুমালের মতো ভাঁজ করা একটা শাড়ির টুকরা বের করে৷ লুঙ্গির মতো পড়ে৷ ওর প্যান্ট আর বইগুলো আমাকে ভাল করে ধরতে বলে৷ তারপর আমাকে কাঁধে করে আস্তে আস্তে নদী পার হই৷ ওপাড়ে পোষাক পাল্টে স্কুলের পথ ধরি৷ প্রচন্ড খিদে নিয়েই কাটিয়ে দেই স্কুল টাইম৷ তবে বেশির ভাগ সময় বড়দা স্কুলের কিংবা আশেপাশের গাছ থেকে ফল পেড়ে নিয়ে আসে৷ দু’ভাইয়ে মনের সুখে খাই৷ ক্ষুধার কষ্ট ভয়ঙ্কর কষ্ট৷ খুধা স্বাদ বোঝেনা৷ বোঝে পেটে কিছু দিতে হবে৷ পেটের জ্বালা মিটলে ভাল লাগে৷ মনে হয় আহ্ জীবন কত সুন্দর! তখন বড়দা’কে আপন মনে হয়৷ ও অবশ্য আমাকে ছাড়া খাবেনা৷ কান্না পায়৷ ভাল লাগে৷ আর বড়দা’র প্রতি ভালবাসা বাড়তে থাকে৷ আসলে ও ছাড়া আমি অচল৷ ও বাঁনরের মত গাছে উঠতে পারে৷ বড়দা যখন গাছে উঠে তখন আমাকে বলে “ছোট” তুই নীচে দাঁড়িয়ে থাকবি৷ আমি ফল ফেললে তুই ধরে ফেলবি৷ তাহলে শব্দ হবে না৷ মালিকও টের পাবে না বুঝলি৷ আমার খুব ভয় ভয় করে৷ কিন্ত বড়দা’র অবাধ্য হতে পারিনা৷ একদিন একটা লম্বা গাছ থেকে বড়দা ডাব ফেললো৷ কথামতো আমি সেটা ধরতে পারলাম না৷ বরং মাথার সামনের অংশে লাগলো৷ আমি জ্ঞান হারিয়ে পরে গেলাম৷ এরপর কিছু বলতে পারি না৷ জ্ঞান ফিরলে দেখি বড়দা ওর স্যান্ডো গেঞ্জি দিয়ে আমার মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছে৷ আমরা স্কুলের বারান্দায় বসে আছি৷ মেঝেতে রক্ত দেখে ভয় পেলাম৷ শরীর কাঁপতে থাকলো৷ বড়দা বললো চল এখন বাড়ি যাই৷ মা জিজ্ঞেস করলে বলবি৷ পড়ে গিয়ে মাথায় লেগেছে৷ আমি মলিন কন্ঠে বললাম ঠিক আছে৷ সেদিন আমার প্রচন্ড জ্বর এলো৷ প্রলাপ বকতে থাকলাম৷ সারারাত ঘুমাতে পারলাম না৷ ঘোরের মধ্যে যেন বসবাস৷ মাঝে মাঝে চোখ খুলে দেখি৷ মা আর বড়দা জেগে আছে পাশে৷ ওদের দেখে সাহস পাই৷ ভাল লাগে৷ ওদের ভালবাসায় কেঁদে ফেলি৷ মনে মনে বলি শুধু মাকে নয়৷ বড়দা তোমাকেও খুব ভালবাসি৷
এভাবেই দিন কাটতে লাগলো৷ মেঘে মেঘে অনেক বেলা৷ এসএসসি পরীক্ষায় বড়দা বোর্ডে থার্ড স্ট্যান্ড করে পাশ করলো৷ ও অবশ্য ফাইভ ও এইটেও বৃর্ত্তি পেয়েছিল৷ বাড়িতে লোকের ভীড়৷ ওকে দেখতে দূর গ্রাম থেকেও লোক সমাগম হলো৷ খবরের কাগজের লোকেরা রিপোর্ট করলো৷ কাগজে ছবি ছাপা হলো৷ সে এক এলাহী কান্ড৷ মা’র সাক্ষাতকার নিতে গেল৷ কিন্ত মা কিছুই বলতে পারলো না শুধু কান্না ছাড়া৷ আমার ভেতর একটা জেদ তৈরি হলো৷ আমাকেও বড়দা’র মতো হতে হবে৷ আমার মায়ের দুঃখ ঘোচাতেই হবে৷
কিছুদিন পর বড়দা কলেজে পড়তে জেলা শহরে চলে গেল৷ আমাদের যে আর্থিক অবস্থা তাতে করে বড়দাকে শহরে পড়ানোর খরচ দেয়া অসম্ভব৷ তাই বড়দা একটা বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকবার একটা ব্যবস্থা করে ফেললো৷ স্কলারশীপের টাকা ও দু’একটা টিউশনি করে চালিয়ে নিতে পারবে বলে মাকে আশ্বস্থ করলো৷ শহরে থাকবে৷ কলেজে যাবে৷ তাই ভাল কিছু জামা কাপড় লাগবে বলে মা তার হাতের একমাত্র সোনার চুরিটা বেচে দিলো৷ জামা-কাপড়, মশারি, বেডিংসহ প্রয়োজনীয় জিনিষ কিনে কিছু টাকা বড়দা’র হাতে দিয়ে বললো, “এটা রেখে দে৷ বই-পত্র কিনতে ও প্রয়োজনে কাজে লাগবে৷” একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম মামা-খালারা কেউ কেন যেন খুশি নয়৷ তারা কোন সহায়তাই করলো না বরং বলতে লাগলো দাসীর ছেলের আবার লেখাপড়া! ছোটলোকের ঘোড়ারোগ!
দু’দিন ধরে মা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে৷ শুধুই কাঁদে৷ মা’র কান্না দেখে বড়দা’র মতো শক্ত মনের ছেলেটাও কাঁদে৷ আমি অবশ্য কাঁদছি না৷ বরং খুশিই লাগছে! কেননা ও চলে গেলে আমি ওর রুমটা দখল করতে পারবো৷
আমরা যে ঘরটাতে থাকি৷ সেটা পাটখড়ির বেড়া দিয়ে ঘেরা৷ উপরে খড়ের দোচালা ছাউনি৷ সামনে বারান্দা৷ বারান্দায় নানার আমলের একটা জলচৌকি৷ গরমে ওখানেই বসি৷ মা বারান্দাসহ পুরো ঘরের পিড়ালি সব সময় মাটি দিয়ে লেপে রাখে৷ সাদা৷ চকচকে৷ পরিষ্কার৷ ঘরটাতে একটা পার্টিশন দিয়ে করা হয়েছে বড়দা’র রুম৷ আমি ছোট তাই মায়ের বিছানায় এক সাথে থাকি৷ আমাদের বিছানা মানে একটা কাঠের চৌকি৷ তার উপর শুধুমাত্র একটা কাঁথা বিছানো৷ দিনের বেলা কাঁথাটা তুলে রাখা হয়৷ যাতে নোংরা না হয়৷
অন্যদিকে বড়দা’র বিছানা হলো বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচা৷ বড়দা খড় বিছিয়ে কাঁথা দিয়ে এমনভাবে গুছিয়ে রাখে৷ শুইলে কী আরাম! এখন মা’র সাথে শক্ত চৌকিতে থাকতে ভাল্লাগেনা৷ তাছাড়া বড়দা রুমটাকে কী যে সুন্দর করে সাজিয়েছে! দেখলে লোভ হয়৷ মায়ের শাড়ির ছেঁড়া টুকরোগুলো সেলাই করে ছাদ বানিয়েছে৷ চারিদিকে বাঁশের বাতা দিয়ে বক্ম করে সেখানে ক্যালেন্ডারের বিভিন্ন ছবি লাগিয়েছে৷ পুঁই শাকের বিঁচি ফাটিয়ে রং নিয়ে বাতাগুলো রং করেছে৷ এটাই সুযোগ আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বড়দা’র রুমটা দখলে নেয়ার৷ তাই আমি কাঁদছি না৷ বরং খুশি৷
বড়দা চলে যাওয়ার কিছু দিন পার হয়ে গেল৷ এ ক’দিন রুমের প্রেমে মুগ্ধ হয়ে খুশিতে কাটালাম৷ আজ কেন জানি খারাপ লাগছে৷ খুব খারাপ৷ কাউকে বলিনি৷ আজ অনেক্ষণ একা একা কেঁদেছি৷
মা খেতে ডাকছে৷ কিন্ত ক্ষিদে নেই৷ আমার এখন স্কুলে যেতে ভাল লাগে না৷ ভীষণ ক্ষিদে লাগে৷ কেউ আর এসে বলে না, “ছোট এই নে আঁতা ফল, তাড়াতাড়ি খেয়ে নে৷ খুব ক্ষিদে লেগেছে তাই নারে ছোট?”
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকি৷ বিড়বিড় করে বলতে থাকি, “বড়দা তুই চলে আয়৷ তুই ছাড়া আমি অচল৷ তোকে আমি বড্ড ভালবাসি৷” কখন যে মা এসেছে টের পাইনি৷ মা আমাকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা কী দেবে বরং নিজেও জোড়ে জোড়ে কাঁদতে থাকলো৷ আর বলতে বলতে থাকলো, “কাঁদিস না ছোট৷ সোনা বাবা তোদেরকে অনেক বড় হতে বাবা৷ অনেক বড়৷ বল্ আমার এই স্বপ্নটা তোরা দুই ভাই পূরণ করবি? মায়ের কথাটা বুকে তীরের মতো লাগলো৷ আসলেতো আমার মা-তো জীবনে কিছুই পেল না! দুঃখ, কষ্ট আর লাঞ্চনা ছাড়া৷ নিজেকে শক্ত করলাম৷ মনে মনে লক্ষ্য স্থীর করলাম৷ যে করেই হোক মায়ের এই স্বপ্নটা পূরণ করতেই হবে৷
আবেগকে ঝেড়ে ফেলে পুরোদমে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করলাম৷ ফলাফল হাতেনাতে৷ ফাইভের বৃর্ত্তি পেলাম৷ মা ভীষণ খুশি৷ বড়দা আমার জন্য একটা জামা পাঠিয়েছি৷ দামি জামা৷ তাই খুব কম পরি৷
সামনে পহেলা বৈশাখ৷ আর বেশিদিন নেই৷ পহেলা বৈশাখে আমাদের এখানে মাছ ধরা প্রতিযোগিতা হয়৷ এদিন ছড়া নদীটাতে সকলেই একযোগে মাছ ধরবে৷ যে সবচেয়ে বেশি ধরে তার জন্য পুরষ্কার থাকে৷ তবে শর্ত একটাই শুধু পলাই দিয়ে মাছ ধরতে হবে৷ প্রতিবার বড়দা’ই ফার্স্ট হয়৷ ও যে চালাক আর ডানপিঠে? ও জানে কোথায় মাছ বেশি পাওয়া যাবে৷ তাই ওর সাথে কেউ পারে না৷ আমি খলাই (বাঁশের পাতলা বাতা দিয়ে তৈরি মাছ রাখার পাত্র) আর একটা ব্যাগ নিয়ে পাড়ে বসে থাকি৷ ও মাছ ছুঁড়ে দেয়৷ আর আমি টপাটপ খলাইয়ে রেখে দেই৷ বড়দাকে চিঠি পাঠিয়েছি৷ তাড়াতাড়ি চলে আসতে৷
বড়দা বহুদিন পর বাড়ি আসবে৷ এজন্য মা খুশি৷ আমি খুশি৷ মা ওর পছন্দের বেশ কিছু খাবার তৈরি করে রাখলো৷ আমি সময় গুনি৷ এখনো আসে না কেন? মাছ ধরার জিনিষ পত্র ঠিক ঠাক করতে হবে৷ নাহলে তো ফার্স্ট হতে পারবো না!
পয়লা বৈশাখের দু’দিন আগে একটা চিঠি আসলো৷ বড়দা লিখেছে ও আসতে পারবে না৷ নতুন বছরের বর্ষপূর্তি কলেজ থেকে করা হবে৷ তাই কলেজের অনুষ্ঠানে তাকে থাকতে হবে৷ চিঠিটা পড়ে মা এবং আমার দু’জনেরই মন খারাপ হয়ে গেল৷ কিন্ত কিছু করার নেই৷
আজ পয়লা বৈশাখ৷ নদীতে মাছ ধরা উৎসব চলছে৷ আমি একটা পলাই ও খলাই নিয়ে নদীর পাড়ে৷ কয়েকবার নদীতে নামার চেষ্টা করলাম৷ মাছ ধরবো বলে৷ কিন্ত পানি অনেক বেশি৷ আমিতো ঢুবে যাবো৷ তাই বিষন্ন মনে নদীর পাড়ে বসে আছি একাকী৷ পাশে পড়ে আছে অব্যবহৃত পলাই আর খলাই৷ যেগুলো গতবার শেষ ব্যবহৃত হয়েছিল বড়দার চৌকষ হাতে৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি৷ আজ গরমটা খুব বেশি৷ এই রোদ কিংবা গরম কোনটাই আমার ভাল লাগে না৷ কিন্ত কেন যেন আজ লাগছে৷ কেননা চোখের জলগুলো গোপনে মুছে ফেলার আগেই তা সহজেই শুকিয়ে যাচ্ছে৷ পানিতে মাতামাতি করবার এই দিনে নোনা পানিটুকু থাক না চোখের গহ্বরে৷