গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ৪০)

নীল সবুজের লুকোচুরি

সেইজন্যই বোধহয় আগেকার দিনে “মানসিক অবসাদ” নামের কোনো অসুখের কথা কেউ কখনো শোনেনি। শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ ছিল সবাই। অবশ্য মানুষের অবদমিত কামনা বাসনা কখন যে কিভাবে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকে কেউ জানেনা। আর কখন কি ভাবে সেগুলো সামনে এসে হাজির হবে সেগুলোও আগে থেকে জানা যায় না।

তাইতো আজ সুমিতার মতো একজন ধীর স্থির শান্ত, আপন কর্তব্যে নিবেদিত প্রাণ – মানুষের মনেও উঠেছে তুমুল ঝড়। যে মানুষ একদিন অবলীলায় সব প্রলোভন জয় করেছে সে আজ কেমন করে নিজের কাছেই হেরে বসে আছে! কোনো এক সময়ের শারীরিক ও মানসিক চাহিদাগুলো কিভাবে কেমন করে যেন নিজেদের কায়া পরিবর্তন করে এতদিন লুকিয়ে ছিল মনের ঘরে! আজ সেগুলো তারুণ্যের এক ধাক্কায় বেরিয়ে আসতে চাইছে। চাহিদার ঘরে এতদিন ধরে যে রাশি রাশি ইচ্ছেরা হাত পেতে লুকিয়ে রয়েছে আর পাওয়ার ঘরে হাঁড়ি ভরা গোল্লারা লুটোপুটি খাচ্ছে, তারা আজ সবাই একেবারে নিজেদের সমস্ত না’পাওয়াগুলো পূর্ণ করে নিতে চাইছে। তাই বুঝি সুমিতার রক্তচাপ এই মুহুর্তে মারাত্মক রকমের বেশি হয়ে বসে আছে। নিজের মন মস্তিষ্কের ওপর আজ আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। বাঁধ ভাঙা চোখের জল ধুয়ে ফেলা গেলেও মনের গভীরে যে না পাওয়ার দহন রয়েছে সে জ্বালায় আজ বুঝি জ্বলে পুড়ে “ছাই” হয়ে যাবে অদৃশ্য সুতোয় গাঁথা সম্পর্কগুলো। মনের যন্ত্রণা বাড়তে বাড়তে আজ তাই মন ছাড়িয়ে মাথায় গিয়ে বাসা বেঁধেছে। তাইতো চোখের সামনেটা হঠাৎই অন্ধকার করে মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল সুমিতার। তক্ষুণি মিঠি মা’কে ধরে ফেলেছিল বলে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। ভাগ্যিস মিঠি তখন সুমির কাছাকাছি ছিল আর ডাক্তার দেশিকানকে সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা করতে পেরেছিল যা’হোক করে। একা ঠিক এই সময়ে মা’কে নিয়ে কি করবে সেটা ভেবেই বড্ড অসহায় লাগছিল মিঠির। ডাক্তার দেশিকানও ঠিক সময়ে আরিয়ানকে সাথে নিয়ে এসে পরেছিলেন। তাই সবাই মিলে একটা ব্যবস্থা করে সেই ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে ডঃসুমিতা মৈত্রকে আশ্রমেরই হেল্থ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। পরিস্থিতির ধাক্কায় অস্থির মিঠিকে ডাক্তার দেশিকান বলেন, “চিন্তা করবেন না মিস মৈত্র, আপনার মা’ ঠিক আছেন। ভয় পাবার কিছু নেই। আপনি নিজেওতো একজন রিনাউন্ড কার্ডিওলজিস্ট। তাছাড়া এখানে তো আরো একজন বিখ্যাত হার্ট স্পেশালিষ্ট রয়েছেন। তেমন কোন প্রবলেম হবে না আশা করি। আপনি একদম রিল্যাক্স থাকুন। আমরা তো আছি আপনার পাশে। এত ভাববেন না প্লিজ”.. এই বলে মিঠিকে আশ্বস্ত করেন।

আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।