গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

অর্জুন
আজ শেষ বেলায় আমরা দার্জিলিং পৌঁছেছি। অর্জুন আমাদের দার্জিলিঙের হোটেলে ড্রপ করে ফিরে গেল সিকিমে নিজের বাড়িতে।
যাবার সময় যখন ওর হিসেবপত্র মিটিয়ে দেওয়া হল তখন ওর চোখে জল দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। সাতটা দিন আমাদের সাথে ছিল কৃষ্ণসখা হয়ে অথচ মনে হচ্ছে যেন কতদিনের পরিচয় আমাদের।
৪/৬/২০২৩ এ পাঁচঘণ্টা লেট করে “সামার স্পেশাল” যখন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছাল তখন ট্রেন থেকে নেমেই
সেখানকার গরমে মোটামুটি জান কয়লা হয়ে গেছে। এদিকে সকাল ১০.৩০ এ সিডিউল এরাইভাল বলে অর্জুন সকাল থেকেই গাড়ি নিয়ে স্টেশনে এসে বসে আছে।
এত গরমের মধ্যে এতক্ষণ
অপেক্ষা করার পর যখন আমরা গাড়িতে উঠলাম তখন ওর হাসিমুখ দেখে ভালো লাগলো। যদিও বলল, “সাব, ইতনি গর্মিমে রহনা আদত নহি না হমারা। তো সাব হাম তো সারাদিন ইধর উধর ভাগতে রহে। গাড়িকা এসি ভি সাব বেকার লগ রহাথা।”
আমরা গাড়িতে উঠে বসেই বললাম ” এসিটা অন কর আর চিল করে দাও।” ও তখন
সেটা করেই গাড়ি নিয়ে চলল গ্যাংটক এর উদ্দেশ্যে। তবে ডুয়ার্সের পথে এসে দাঁড়াল। বলল, ” সারাদিন গর্মিকো ঝেলনে কে বাদে আগর ঠন্ড মিলে তো আঁখ লগ যাতা হ্যায় সাব। তো থোরি দের রুককে চলেঙ্গে।” কথাটা ঠিকই বলেছে। ওর চোখ বন্ধ হয়ে এলে যে গাড়ি সটান খাদে গিয়ে পর্বে। তাই সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি থামাতে বলা হল। আমরাও কিছুটা ধাতস্থ হয়ে গেছি ততক্ষণে। রাস্তায় নেমে একটু চা খেয়ে হাঁটছি। তখন অর্জুন বলল, “ম্যাডাম, য়াঁহা হাথি কা ঝুন্ড আ যাতা হ্যায়। আপ সব গাড়ি মে বৈঠো। অব চলেঙ্গে।” তারপর শেষ বিকেলে একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খাবারের দোকানে এসে গাড়ি থামাল। আমরা নিজেদের পছন্দমতো খাবার খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম। রাতে পৌঁছালাম আমাদের বুকড হোটেল গ্যাংটকের “নরবুঘং” এ।
আমাদের রিসিভ করা থেকে শুরু করে এই দার্জিলিংয়ে ড্রপ করা পর্যন্ত ওর দায়িত্ব ছিল আমাদের গ্যাংটক, নামচি, পেলিং- এর সব দর্শনীয় জায়গা ঘোরানো। প্রতিদিন সকালে সাড়ে সাতটায় হাজির হয়ে গেছে অর্জুন। সময় মতো সব জায়গায় নিয়ে গেছে। সব জায়গায় আমাদের সাথে থেকেছে। ওর দায়িত্ব পালন করা দেখে মনে হচ্ছিল কোন আপনজন ওর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে আর তাদের সব জায়গায় ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে আর খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দিচ্ছে।
কথায় কথায় ওর বাড়ির কথাও হল। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়স থেকে ও টুরিস্ট গাড়ি চালায়। ষোলোতে নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে সংসার পেতেছে। তবে সে বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। তিনটে মেয়ে হবার পর স্ত্রী ওকে ছেড়ে চলে যায়। মা আছেন বলে বাড়ির চিন্তা করতে হয় না। বড় মেয়েটা পড়া কমপ্লিট না করে বিয়ে করে নিয়েছে। তারো এক ছেলে আছে। সেই মেয়ে এখন বাবার কাছেই ফিরে এসেছে। মেজ মেয়ে হস্টেলে থেকে পড়ছে। ছোটমেয়ে দাদির সাথে বাড়িতেই থাকে। সরকারি স্কুলে পড়ে।
ভাবছি বছর চল্লিশের এই মানুষটা জীবনের কত রং-রূপ, কত দিক দেখে নিয়েছে। যেদিন bird sanctuary তে গেলাম সেদিন আমি উঠতে পারছিলাম না। একটা সময় বললাম,” অর্জুন, যাও, সবকো রুইন্স দিখা দো ।মুঝসে চলা নহি যা রাহা তো ম্যাঁয় য়ঁহি রুক্তি হুঁ।” তখন
ওর কথা শুনে থমকে গেলাম। বলল, “ম্যাডাম, থোরিসি চড়াই হ্যাঁয়। ধীরে ধীরে চালিয়ে না। হম রুকতে হ্যাঁ না আপকে সাথ। কলসে তো হম আপকে সাথ নেহি হোঁঙ্গে। আপ
সবকো দেখকে ঘরকা ইয়াদ আগয়া। কল আপকো ড্রপ করকে ঘর যায়েঙ্গে মা সে মিলনেকে লিয়ে। বচ্চোঁসে মিলে মহিনাঁ হোগয়া। একবার মিল লেঙ্গে। আপ সবকে সাথে বহত অচ্ছা লগা। আপনে হমারা কদর কিয়া, হমকো খানাভি পুছা, পর সব লোগ এয়সে নেহি হোতে। য্যাদাতর টুরিস্ট আতে হ্যায় তো সারাদিন চিকচিক করতে হ্যায়। গর্মি কিঁউ হ্যায়, হোটেল মে পানি কিঁউ নহি হ্যায়, খানে মে কেশ কিঁউ আতা হ্যায়, বগেরা বগেরা। আব আপ হি বতাও ক্যা ম্যাঁয় ইন সবকা মালিক হুঁ? আপ লোগ যাঁহা যানা চাহতে হো হম লেযাতেঁ হ্যায়। পর উনকো লাগতা হ্যায় হোটেলয়ালোকে সাথ ড্রাইবর কা সাঁটগাট হ্যায়। ইস তরহা লোগোঁকো তো কভি কভি বিচ রাস্তে মেঁ ছোড়কর ড্রাইভার ভাগ যাতা হ্যায়। আপকা সাথ হমে ঘরকা ইয়াদ দিলা দিয়া। আপকো হম কভি নহি ভুলেঙ্গে।”