গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ২৬)

নীল সবুজের লুকোচুরি

সুমিতার দুচোখে যেন বান ডেকেছে। মুখ তুলে তাকাতে পারছেনা। ফেলে আসা সময়ের অনেক ব্যথা , না বলা অনেক কথা, অভিমানের পাহাড় গলে চোখের কোল বেয়ে অবাধ্য ঝর্ণাধারার মতো নেমে এসেছে যেন বিরহীনি যক্ষপ্রিয়ার লিখে রাখা অশ্রুকাব্য।
———-

মিঠি ওর মাকে কোনোদিন এতটা দুর্বল হয়ে পড়তে দেখেনি। আজ যে কি সব এলোমেলো কান্ড হচ্ছে বুঝতে পারছেনা! মায়ের চোখে জল দেখে ও গিয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে। ওর একান্ত শান্তিপ্রিয় সুমি’মায়ের মনে এত কষ্ট এতবছর ধরে জমা হয়ে ছিল, ভেবেই ওর চোখেও জল চলে আসে। মিঠি তখন মাকে শান্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আদুরে গলায় “মা, বলে ডাকছে।
মাকে জাপটে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমো দিয়ে আদর করছে আর পাগলের মতো বলছে,”Ooh Maa, Maa, oohh Maaaa… My dear mom, my lovely mom, you are great. You are only the noble person in my life. মাগো, তুমি আমার মুক্তির আকাশ, মা তুমিই আমার দশভূজা দুর্গা, আমার সব রকমের পূজার দেবতা শুধু তুমি। Love you so much darling, তুমি বোঝোনা কেন, আমি যে তোমায় খুব খুব ভালোবাসি! এই দুর্বলতা যে তোমাকে মানায় না my queen, after all You are my Love dear.
এতদিন একভাবে একা একা সময়ের সাথে, সমাজের সাথে, নিজের একাকীত্বের সাথে যুদ্ধ করে মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে সুমিতা যেন যন্ত্র হয়ে গিয়েছিল। আজ ওর সেই ছোট্ট মেয়ের স্নেহের ছোঁয়ায় ফেলে আসা দিনগুলির দুঃখ কষ্টের স্মৃতিরা মনে ভিড় করে এসেছে। তাই হঠাৎ করেই কান্নাটা যেন আরো বেড়ে যায়। মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে খানিকটা সময় খুব কেঁদে নেয়। তারপর নিজেকে কোনোমতে সামলে নিতে নিতে চোখ মেলে তাকায় মেয়ের দিকে। আহ্লাদি মেয়ের আদর গায়ে মেখে সুমিতার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। চোখের জলের সাথে কপট রাগ মিশিয়ে বলে, “আচ্ছা, মা জননী! তোমাকে আর অতকিছু ভাবতে হবেনা। এখন তোমার অতিথিকে সসম্মানে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসো। উনি কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠেননি এখনো।”
মাদার এগিয়ে এসে বলেন,” আমরা খুব শিগগিরই ডাক্তার আনসারিকে আমাদের সাথে পাবো বলে আশা করছি। আশ্রমের ‘সেবাসদন’ ওনার যদি ভালো লাগে তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওখানকার স্টাফ যারা আছেন তারা আগামী সময়ে ওনার সাথে মাঝে মাঝে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এতে আমাদের আশ্রম এলাকার মানুষের জীবনের মান উন্নত হয়ে উঠবে।

আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।