গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ২১)

নীল সবুজের লুকোচুরি

তবে ওইযে ছোটরাই ওর ওপর গার্জেনগিরি করে, এখানেও তাই।
—–
সুযোগ পেলেই অরমানও একটু ‘দাদাগিরি’ করে নিতে ছাড়তনা। আর মিঠিও সেটা এনজয় করত। তবে ওর যেটা সবথেকে বেশি ভালো লাগত সেটা হল অরমান দুষ্টুমিষ্টি ভাবখানা। যেদিন যেটা করবে বলে ঠিক করে নেবে সেদিন সেটা করেই ছাড়বে। কোনো কিছুতেই থামানো যাবে না ওকে। ক্লান্তিহীন এই এক ছেলে যাহোক । অরমানের কথা মনে পড়তেই মনটা আরো ভালো হয়ে গেল মিঠির। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল নিজের অজান্তেই। সাথে সাথেই বিদ্যুতের মতো একটা চিন্তা ঝিলিক মেরে গেল। ডঃ আনসারি তো বলছিলেন যে ওঁর ছেলেও কার্ডিওলজিতে আছে। সেবার ফ্লোরিডায় কি তবে মিঠি ওর বাবার সেই ছেলেকেই দেখেছে! মনে পড়ে যায় ওদের একটা গ্রুপ ফটো তোলা হয়েছিল তখন। সেটা খুঁজে দেখতে হবে, আজই, এক্ষুণি। মিঠি হঠাৎই রুমে গিয়ে আলমারি খুলে এলবামগুলো বের করে বসে।
ছোটবেলা থেকে কত ছবি এই এলবামে রয়েছে। ওগুলো দেখতে দেখতে মনটা আনন্দে ভরে যায়।
সেই যেবার ও ক্লাস এইটে পড়ে সেবার ওর জন্মদিনে আশ্রমটাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। একটা ইয়া বড়ো সাইজের তিনতলা কেক কাটা হয়েছিল। স্কুল যাবার আগেই সেলেব্রেশন শুরু হয়েছিল। আর এই পাগলামিটা বাস্তবে ঘটিয়েছিল ‘বিলি’, অসাধ্য সাধনের মাস্টারপিস। জন্মদিনে স্টুডেন্টদের জন্য কালারফুল ড্রেস এলাউড, তাই সেদিন মায়ের আনা নতুন রেডস্কার্ট উইথ স্কার্ফ এন্ড ইয়োলো টপ পরে গিয়েছিল স্কুলে। ফ্রেন্ডরা সবাই ওকে উইশ করেছিল। মা সেবার ওর ক্লাসের বন্ধুদের জন্য একটা করে টিফিন প্যাকেট দিয়েছিল। মা সেবার স্কুলের টিচিং-ননটিচিং অলস্টাফের জন্য লাঞ্চের এরেঞ্জমেন্ট করেছিল বলে সবাই খুব খুশি হয়েছিল। এই জন্মদিনটা স্মরণীয় কারণ এবছরই মিঠির যৌবনের সাথে পরিচয় ঘটে। মেয়ের নারী হয়ে ওঠায় মা খুব খুশি হয়েছিল। সত্যিই সাধারণতঃ মায়েরা মেয়েদের “পিরিয়ডস্” ব্যাপারটা নিয়ে কতো রাখঢাক করে। কিন্তু ওর মা’যে কতটা খুশি হয়েছিল সেটা মিঠি বুঝতে পেরেছিল মায়ের সেই বিশাল আয়োজনে। ওর নারীত্বকে সম্মান জানাতে মায়ের জুড়ি নেই। মেয়ে বড় হয়ে গেছে এই আনন্দ সংবাদ জানানো হয়েছে সবাইকে। এটা কোনো লজ্জার বিষয় নয় কিম্বা কোনো গোপনীয় বিষয়ও নয় বরং সৃজনশীল এই পৃথিবীতে এক বালিকা প্রকৃতিসম্ভবা হয়েছে এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়, অন্তত ওর মায়ের কাছে।

আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।