মার্গে অনন্য সম্মান রাণা চ্যাটার্জী (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার
পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১৮
বিষয় – বিজয়া
তারিখ – ৩১/১০/২০২০
বিজয়া দশমী
এ কি বলছো গো তুমি এবারও দুগ্গা পূজায় মেয়েটাকে ওরা বাপের ঘরে পাঠাবে না! বলে চোখে জল চলে এলো চাষী বউয়ের।
ওগো তুমি আর একবার গিয়ে রায় কত্তার পা ধরে অনুরোধ করো, অন্তত পুজোয় দুটো দিন যদি মেয়েটাকে পাঠায়
গিন্নি ওদের অপমান ভুলে গেলে! শক্ত হও,ওরা পিশাচ।পুজোয় সব মেয়ে বাপের বাড়ি এলেও সে কপাল আমাদের মেয়ে লক্ষ্মী করেনি,ওর নিস্তার নেই।
তিন বছর আগে রায়কত্তার ছোট ছেলে অঞ্জন, বখাটে বন্ধুকে নিয়ে মঙ্গলার জঙ্গলে ঘাপটি মেরে ,লক্ষ্মী পড়ে ফেরার পথে পাশবিক অত্যাচার চালায়। অমন ঠাকুর প্রতিমার মতো গড়ন,সুন্দরী লক্ষ্মীর বিপদ সবাই টের পায়, দুই গ্রামবাসী অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার করলে। স্পটে অঞ্জনের ছবি যুক্ত মানি ব্যাগও খুঁজে পায়। ক্ষমতার দাপটে বিষয়টি ধামাচাপা দেবার চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু ফুলকির বেঁচে যাওয়া,প্রমান ,উত্তেজনা সামাল দিতে,রায়কত্তা ছেলের সাথে লক্ষ্মীর বিয়ে দেন। কিন্তু শুরু হয় মেয়ের বন্দিজীবন,শারীরিক,
মানসিক অত্যাচার যা, ঝি চাকরদের মুখে প্রকাশ পেত।
গতবছর পুজোয় লক্ষ্মীকে আনতে গেলে ঘাড় ধাক্কা জোটে গরীব মা বাবার।চৌধুরীদের দালানে মৃৎশিল্পী যতো প্রতিমাকে জীবন্ত রূপ দিচ্ছেন,ততো সবিতার মন হু হু করছে মেয়ের জন্য।
নবমীর সন্ধিপূজা শেষ ,আরএকটা দিন। কিন্তু সবিতার প্রতীক্ষার অবসান যে কবে! অক্টোবরের শেষ, বাতাসে হিমেল হাওয়া ,পুব আকাশে আলোর দিশায় সবিতা ধরফর করে উঠে বসে!একি, লক্ষ্মীমা তুই!ওমন করে মুখটা পুড়লো কি করে বলে লম্ফের আলো ঘুরিয়ে যত দেখছে,ভারী কান্নায় গলা শুকিয়ে আসছে । মেয়েকে দেখে অশোক ভুত দেখার মতো চমকে। পায়ে হাত দিয়ে শুভ বিজয়ার প্রণাম করলো মেয়ে। ঝুঁকতেও খুব কষ্ট হচ্ছে ।মিষ্টি, হাসি-খুশি শান্ত স্বভাবের মেয়ের একি অবস্থা। তুই বোস, যেতে দেব না, ডাক্তার দেখাবো -বাবার কথা থামিয়ে,না গো আলো ফোটার আগেই ফিরবো বলে লক্ষ্মী এগোয়। দৌড়ে রান্নাঘরে থেকে দুটো নারকেল নাড়ু মেয়ের হাতে দিয়ে স্বস্তি পায় সবিতা।
সন্ধ্যায় বিজয়ার বিসর্জনে ঢাক-ঢোল,ব্যান্ড পার্টি হরেক আয়োজন। বিসর্জনের পর্ব শুরু হতেই একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে খবর দিল,” রায় বাড়ির ছোট বউ লক্ষ্মী রায়দিঘিতে ডুবে মরেছে ,মরার আগে সে নাকি বাড়িতে অঞ্জন দাকে,হেঁসোতে কুপিয়ে খুন করে। বিজয়া দশমীর সন্ধ্যায় আজ হ্যাজাকের আলোয় দুর্গা মায়ের চোখ গুলো অসুর বধের দাপটে ভীষণ উজ্জ্বল ।