গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ২৫)

নীল সবুজের লুকোচুরি

কিকরে সবার সহযোগিতা আপনি আদায় করতে পেরেছেন সেটা যদি বলেন!”

ডাঃ আনসারির কাছ থেকে কোনরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলনা। মিঠি শুধু দেখতে পেল তার জন্মাদাতা অবাক হয়ে তারই দিকে তাকিয়ে আছেন। এযেন হঠাৎ করেই দেখতে পাওয়া কোনো মূল্যবান বস্তু যা বহুদিন চোখ সামনে থেকেও তিনি চিনে নিতে পারেননি। ডাক্তারের দৃষ্টিতে যেন বিস্ময়ের ছোঁয়া লেগে আছে ! তাঁরও যে মনে ঝড় উঠেছে! আজ এই প্রথম কোনও মানুষ তাঁর কাছে জানতে চেয়েছে তাঁরই জীবনকথা। এইজন্যই বোধহয় মানুষ সন্তান কামনা করে! সন্তানই হল বাবা মায়ের মুক্তির প্রাঙ্গণ। সন্তানের জন্মের পরই বাবা মা নিজের জীবনের লেখচিত্রটা স্পষ্ট করে দেখতে পায়। আয়ানের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। বেদনাভরা চোখের কোণ বুঝি চিকচিক করে ওঠে! এমন সময় ঠিক কিকরা উচিত বুঝতে না পেরে মিঠি খুব আস্তে করে বলে, “excuse me, আমি এক্ষুণি আসছি।” মিঠির বড্ড কষ্ট হয় ওনাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখলে। এমনটা যে শুধু আজ হল তা’নয়! এর আগেও মিঠি দেখেছে, স্যার যখন কোনো কিছু নিয়ে মন খারাপ করে থাকেন তখন ওর নিজেরো ভীষণ কষ্ট হয়। তবে আজ মিঠি ওঁকে কিছুতেই কষ্ট পেতে দেবেনা।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। হঠাৎ করে মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ফুল হল এক নম্বরের ওষুধ যা সব রকম মনখারাপী ভালো করে দেয়। তাই ডক্টর’স প্রেমিসেসের বাংলোতে ওর মায়ের হাতে তৈরি করা বাগান থেকে নিজের হাতে কিছু ফুল তুলে একটা সুন্দর তোড়া তৈরি করে এনে স্যারের হাতে তুলে দেয়। মিঠির স্যারও তোড়াটা দেখে হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দেয়। তারপর বলে, এখন যে আমায় ফিরতে হবে! তব খুব শিগগিরই আবার আসছি তোমাদের কাছে। কোনও কথাই তো বলা হলনা। আমার যে অনেক কথা বলার আছে। সামনে উপস্থিত মাদারকে হাত জোর করে নমস্কার জানায়। মাদার প্রতি নমস্কার জানিয়ে ডাঃআনসারিকে এবছরের এনুয়াল ফাংশনে প্রধান অতিথি হিসেবে আশ্রমের স্কুলে আসার আমন্ত্রণ জানায়। আয়ান হাসি মুখে স্বীকার করে নেয় মাদারের এই নিমন্ত্রণ। তারপর ধীরপায়ে সুমিতার কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর হাত দুটো ধরে। দুজনের চোখের পাতায় অনেক কথা লেখা আছে কিন্তু মুখে কোনো শব্দ যোগায় না সেই মুহুর্তে। সুমিতার দুচোখে যেন বান ডেকেছে। মুখ তুলে তাকাতে পারছেনা। ফেলে আসা সময়ের অনেক ব্যথা , না বলা অনেক কথা, অভিমানের পাহাড় গলে চোখের কোল বেয়ে অবাধ্য ঝর্ণাধারার মতো নেমে এসেছে যেন বিরহীনি যক্ষপ্রিয়ার লিখে রাখা অশ্রুকাব্য।

আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।