গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ৪২)

নীল সবুজের লুকোচুরি

একটু আগেওতো ভীষণ অসহায় লাগছিল নিজেকে। কি এমন ঘটে গেল এরমধ্যেই যে সব দুশ্চিন্তাগুলো ভ্যানিশ হয়ে গেল মুহূর্তেই! মিঠির এই মনকে তো নিজেই চিনতে পারছে না। এই মুহূর্তে মায়ের সামনে ডাক্তার দেশিকান রয়েছেন। আর সেটাই যেন মিঠির মনে অদ্ভুত একটা সাহস কিম্বা ভরসার উৎস হিসেবে কাজ করে চলেছে।
——
সেই কখন থেকে মিঠি একদৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে নিজেই জানেনা। যেন আজ একা একাই মনের মধ্যে ডুব দিয়েছে। চোখ দুটো কোথাও আটকে আছে ঠিকই তবে মনের সাথে তার কোন সম্পর্ক এই মুহূর্তে নেই বলে দৃষ্টিতে ভরে আছে শূন্যতা। ওকে এরকম ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিয়ান একটু ব্যস্ত হয়ে পরে। একটু জোর গলায় বলে ওঠে, “Hey Sis, don’t worry. Everything is under control. She’s now absolutely fine. Why do you worried about her. We all here with you. My mom is also here for her. So nothing much more for your thoughts now you know. I am going to join Dr. Deshikan. Mom will be with you. Please relax. মিঠির সাথে কথা বলতে বলতে আরিয়ান Dr’s desk এর দিকে পা বাড়ায়। আশ্রমের কয়েকজন ছাত্র “ফ্রি হেলথ চেকাপ” ক্যাম্পের প্রথম দিন থেকেই ডাক্তারবাবুদের সাথেই রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে তারা হাতে হাতে কাজ করে চলেছে ডাক্তারবাবুদের নির্দেশ মতো। আজকেও তারাই দুজন দুজনের গ্রুপ করে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ওষুধপত্র কিনে আনা, ডাক্তারবাবুদের খাবার এনে দেয়া ইত্যাদি কাজ করে চলেছে। আর এটা করতে ওদের বেশ ভালো লাগছে। আসলে এই সব নামকরা ডাক্তারবাবুদের সাথে এই কদিন ধরে কাজ করতে পেরে ওদের মধ্যেও একরকম আত্মবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। ওরাও ভবিষ্যতে মানুষের সেবার কাজে এইভাবেই নিরলস পরিশ্রম করতে চায়। ওরাও তাই এইরকমই ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আরিয়ানের মা ডাক্তার সাহানা আখতার অনেকক্ষণ থেকেই মিঠির পাশে বসে আছেন। তবে তার চোখও ডাক্তার দেশিকানের দিকে।
“কতদিনের পরিচয় তোমাদের? সরি! তোমাকে তুমি বলে ফেললাম!”… সাহানার প্রশ্ন শুনে মিঠি একটু হকচকিয়ে যায়। তারপর বলে, “pardon! কিছু বলছেন? আমাকে? কার সাথে পরিচয়ের কথা বলছেন বলুনতো? আমি বুঝতে পারছিনা আপনি ঠিক কী বলতে চাইছেন?”
“না, তেমন কিছু নয়, আসলে আমি জানতে চাইছিলাম তোমার সাথে ডাক্তার দেশিকানের পরিচয় কত দিনের? শুনেছি তোমরা দুজনেই এই আশ্রমেই বড় হয়েছ ! নিশ্চয়ই ছোটবেলা থেকে তোমাদের পরিচয় আছে? তাই নয় কি?
“আপনাকে ঠিক কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না। এইসব বিষয়ে আপনার সাথে কথা বলা ঠিক কতটা প্রয়োজন সেটাও আমার কাছে পরিষ্কার নয়। তবে আপনার যে আমাকে নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ আছে সেটা জেনে দারুণ লাগছে। আসলে আমারও মনে এই মুহূর্তে একটা প্রশ্ন জেগেছে আমাদের পরিচয় কত দিনের সেটা জেনে আপনার কি হবে? আপনার সাথে কি দেশিকান স্যারের কোনো সম্পর্ক আছে? মানে আপনি কি ওনার কোনো আত্মীয়? কিছু মনে করবেন না, আপনার প্রশ্নের উত্তরটা ঠিক এক্ষুণি দিতে পারছি না। তবে আপনাকে একটা ধন্যবাদ দিতে চাই। এমন অসময়ে কিছুক্ষণ অন্তত আমার কাছে ছিলেন বলে এটা আমার করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। আসছি কেমন।” বলে মিঠি মায়ের কাছে যাবার জন্য উঠে পরে।

আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।