গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ৪৬)

নীল সবুজের লুকোচুরি

“বাঁধনবিহীন সেই যে বাঁধন” – সে তো কর্তব্যের বাঁধন। ভালো লাগার কর্মক্ষেত্রে সেটাই প্রাণের বাঁধন। সেখানে যে বাঁধা পরেছে সেই অনন্তের পথের সন্ধান পেয়েছে। অমৃতকুম্ভ পূর্ণ হয়েছে তার। এ জগতে সে অমরত্ব লাভ করেছে। অন্তত ডাক্তার আনসারির ক্ষেত্রে বর্তমানে এটাই সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাক্তার আখতারকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখে মিঠি ভেতরে চলে যায়।

ডাক্তার সাহানা এই কয়েকদিন ধরে এখানে আছেন। সবার সাথে হাসিমুখে কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু মাঝে মাঝে কেমন এক অদ্ভুত আচরণ করেন। মিঠি আরিয়ানের কাছে শুনেছে যে ওর মা কখনো কখনো বড্ড অদ্ভুত আচরণ করেন আবার নিজের থেকেই ঠিক হয়ে যান। কারণটা বোঝা যায় না। আরিয়ান অনেকবার মা’কে মেডিক্যাল সাপোর্ট নেবার জন্য রিকোয়েস্ট করেছে কিন্তু উনি রাজি হননি। ডাক্তার হয়ে নিজেকে কেউ এরকম নেগলেক্ট করলে পেশেন্টরা ভরসা করবে কিকরে? আরিয়ান বলেছে, ওর মায়ের নাকি ছোটবেলায় পাশের বাড়ির একজন জ্যাঠাইমা ছিলেন। তিনি সাহানাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। সাহানাও সেই নিঃসন্তান জ্যাঠাইমাকে “মাগো” বলে ডাকত। তিনিই ছিলেন ওর মায়ের “মাতৃসম বন্ধু।” তার জন্য মন খারাপ হলে নাকি ওর মা এরকম আপসেট হয়ে যায়। মিঠি ভাবে, হবে হয়তো কেউ যার সাথে এমন কিছু স্মৃতি রয়েছে যেটা কিছুতেই উনি ভুলতে পারেননি। যাকগে বাবা, এসব হিজিবিজি না ভেবে আপাতত মা’র কাছে গিয়ে একটু থাকা যাক। মনের মধ্যে একটা পুরনো গানের সুর গুনগুন করে উঠছে।
“সুজন সজনী যত চলার পথের সাথী
হাতে হাত রেখে যদি এগিয়ে যেত
তবে ক্ষতি কি হত!
দুঃখ সুখের শত বাহারি ফুলের রংয়ে
চোখের কাজল যদি রঙিন হতো
তবে ক্ষতি কি হতো!
আকাশের কালো মেখে দূরের তারার দেশে
দুঃখের ভেলা যদি ভাসানো যেত
তবে ক্ষতি কি হতো! বলো ক্ষতি কী হতো!”
মিঠির মনে অকারণ আনন্দের জোয়ার বইছে। ওই যে মানুষটা এতক্ষণ ওর সাথে ছিলেন তিনিই যে ওর এই আনন্দের কারণ সেটা এখন মিঠি বুঝতে পারে। একজন মানুষ যাকে দেখলেই দুশ্চিন্তাগুলো হাওয়ায় ভেসে যায়। যার উপস্থিতি মনের অসুখ সারিয়ে দিতে পারে তিনি আজ ওর পাশেই রয়েছেন। আজ হঠাৎই মায়ের শরীর খারাপ হওয়াতে খুবই ভয় পেয়েছিল মিঠি। কিন্তু একদিকে দেশিকান স্যার অন্যদিকে আনসারি স্যারের মতো ভরসার মানুষ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। তাই তো মনের ভেতর
.. “কুহু স্বরের গুঞ্জরণে উথাল পাথাল ঢেউ জাগে।
কে এলো আজ মনের ঘরে ফাগুন দিনের রং লাগে।”…

 

আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।