গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ২৮)

নীল সবুজের লুকোচুরি

ছোটবেলা থেকে সে যেখানে বড় হয়েছে সেখানকার জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেবার জন্যই সে এবার ফিরে আসছে। তার আমন্ত্রণে বিদেশ থেকেও অনেকেই আসবেন। সেখানে আপনি থাকলে আমাদের এলাকার মানুষজন খুবই উপকৃত হবে। তাই অন্তত সাতদিনের জন্য আপনাকে আসতেই হবে।
——————
আয়ান মাদারের কাছে এসে ধীরে ধীরে বলে, “আপনার কাছে জেনে ভালো লাগলো যে দেশিকানের মতো একজন স্বনামধন্য ডাক্তার মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য, তাদের সেবা করার জন্য নিজের দেশে ফিরে আসছেন। শুনেছিলাম ওঁর ছোটবেলাটা উত্তরবঙ্গে কেটেছে। তবে সেটা যে আপনার সান্নিধ্যে এটা জেনে যেমন ভালো লাগছে তেমনি একটু আশ্চর্যও হচ্ছি বৈকি।”
মাদারের মুখে করুণ এক হাসির রেখা ফুটে ওঠে। ইস্পাত কঠিন গলায় বলেন,”এতে আশ্চর্য হবার কি আছে ডাক্তার সাহেব? পরাগ মিলন হলে গাছে ফুল ফোটে, ফল ধরে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে প্রকৃতির খেয়াল বলুন বা পরিস্থিতির চাপ অথবা সামাজিক কিম্বা ধর্মীয় বিভাজন-এরকম অগনিত কারনে মানুষের জীবনের সে’ফুল কখনও মহান ঈশ্বরের চরনে অর্পণ করা হয় আবার কখনও অবহেলায় মাটিতে ঝরে যায়। এমনই হতভাগ্য ঝরাফুল যখন পরম করুণাময়ের আশীর্বাদ পেয়ে যায় তখন সেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে। পিতৃপরিচয়হীন সকল নবজাতকের জীবনে তো সুমিতা মৈত্রের মতো দৃঢ়চেতা, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী গর্ভধারিণী থাকেনা। অনেক মেয়ের জীবনেই নেমে আসে দরিদ্র অথবা ধনাঢ্য হবার অভিশাপ। গরিব হোক বা মধ্যবিত্ত অথবা বড়লোক বাপ-মায়ের চাপে পড়ে বহু অবিবাহিত নারী সন্তানের জন্ম দিতে পারলেও, সন্তানের পরিচয় দিতে পারে না। তখন তারা ওই একরত্তি কচি প্রাণকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সেজন্যই আমরা কখনো ডাস্টবিনে, কখনো পথের ধারে জীবিত বা মৃত নবজাতকের খোঁজ পাই। আমার মিঠি হোক কিম্বা দেশিকান – এমনই সামাজিক কোনো বাধ্যবাধকতার শিকার। তবুও ঈশ্বরের চরণরেণুর ছোঁয়া পেয়েছে বলে ওরা নিজেদেরকে যোগ্যতার সাথে প্রকাশ করতে পেরেছে। মানুষের কাছে, সমাজের কাছে এবং দেশে-বিদেশে ওরা আদৃত। ওরা ঈশ্বরের সেবায় নিবেদিত মহৎপ্রাণ। ওরা নিজেরাই নিজেদের পরিচয়। ধর্ম-অর্থ, জাতির নামে যে হিংসা,বিভেদ-বিভাজন আজ সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে সেখানে ওরা মানুষ হয়ে ওঠার সুযোগ্য জবাব বলতে পারেন! মনুষ্যত্বের চলমান দলিল আমার এই সন্তানেরা। ওরা কেউই ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়, শিয়া-শুন্নি, ধনীদরিদ্র হয়ে জন্মায়নি, কেবল মানুষের সন্তান হয়ে জন্মেছে। ওদের স্পর্শে কতশত অসহায় যন্ত্রণাময় জীবনে শান্তির পূণ্য পরশ লেগেছে। ওরাই তো আগামী ঊষার নতুন পথের অগ্রদূত। ওরাই প্রকৃত মানবতাবাদের বার্তাবাহক। পবিত্র জীবন পথের দিশারী। চোখের সামনে ওদের দেখলে ঈশ্বর দর্শনের পূণ্য হয়।”
আসছি পরের পর্বে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।