মার্গে অনন্য সম্মান রীতা চক্রবর্তী (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১২২
বিষয় – আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

একবার ভেবে দেখুন

আজকাল বাঙালি মায়েদের সকালের ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানকে ঘুম থেকে তুলতে হলে বলতে শোনা যায় –
বেটা, উঠো জলদি। ফটাফট রেডি হো জাও।

তিন বছরের ছোট্ট শিশুটিও ঘুম জড়ানো চোখে জানতে চায় – মাম্মি, আজ টিফিন মে ক্যা হ্যায়?

একদম তোমার মনপসন্দ ডিশ করেছি বেটু। শোনো. স্কুলে আবার তুমি টিফিন শেয়ার করতে যেওনা। ফ্রুটস যা দিয়েছি খেয়ে নেবে কেমন। আর শোনো, গাড়ির আঙ্কেলকে আমি বলে দিয়েছি। তুমি আঙ্কেলের পাশে বসবে। ফ্রেন্ডদের সাথে যেন বেশি মস্তি করতে যেও না।

বাবা মা সবসময়ই চান- তাঁদের সন্তান বড় হয়ে নামীদামী চাকরি করবে। সমাজের একজন গণ্যমান্য মানুষ হবে। সম্পন্ন পরিবার বলে লোকে তাঁদের চিনবে। এতো খুব ভালো কথা। এটা কোন দোষের নয়। তাই বলে বাংলা ভাষায় কথা বললে, হিন্দি গান না করে বাংলা গান বা রবীন্দ্র সংগীত গাইলে সম্মানহানি হবে কেন?

হিন্দি ইংরেজির সাথে বাংলা মিশিয়ে অদ্ভুত এক ভাষায় কথাবলে ছেলেমেয়েরা। বাংলায় কথা বললে তারা ‘খিল্লি করে’ । তাদের হাবভাব দেখে মনে হবে যেন বাংলায় যারা কথা বলে তারা অশিক্ষিত, মুর্খ। তারা যেন জ্ঞানগম্যিহীন আজব প্রাণী। সেইসব সাধারণ মানুষদের হেয় করে চলাটাই যেন ইংরেজি শিক্ষার মূলমন্ত্র। ইংরেজি পড়ছে বলে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদেরো নূন্যতম সম্মানটুকু দেবার প্রয়োজন মনে করেনা তারা।

বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করলে নাকি ভালো চাকরি পাওয়া যায় না।তাই ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হচ্ছে ছেলেমেয়েদের। যদিও, কিছুদিন আগেও উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলা মিডিয়াম সরকারি স্কুল কলেজই ছিল ভরসা।আর সেখানে সারা ভারতের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক স্থানে।
ইংরেজি পড়ুয়ারা এখন নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে পছন্দমতো মাইনেতে বড় বড় সংস্থায় চাকরি করছে। এটা তাদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্রে একটা বিরাট সাফল্যের দিক। কিন্তু তাই বলে কি বাংলায় কথা বলা যাবে না ?

ইংরেজি পড়ুয়া সেই সন্তান যখন চাকরির জন্য বাড়ি থেকে দূরে চলে যায় তখন কেন বাবা মা আশা করেন যে “সন্তান সব কর্তব্য ঠিকঠাক পালন করবে?”
“একদেশে চাষ আর একদেশে বাস” কি করে সম্ভব? সেই অসম্ভবের দিকের ঘাটতি পূরণ করতেই তো ইংলিশ মিডিয়ামরা তাদের বাবা মা কে দেখাশোনার জন্য বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে বাধ্য হন। অনেকক্ষেত্রে তাদের আধুনিক জীবনচর্যায় বাংলা মিডিয়াম বাবা মা পুরো ‘গাঁইয়া’ লাগে। তাই বাবা মা’র কাছে ফিরে আসার কোনো ইচ্ছেই তাদের আর থাকেনা।
সন্তানের মানসিকতার এই অধঃপতনে গুরুজনের কি কোনো ভূমিকা নেই? যদিও নিজেরা বিশুদ্ধ বাংলা মিডিয়ামের ফসল তবুও বলে গেলেন বাংলায় কিছু নেই, কোনো উন্নতি নেই। এটা যে পরশ্রীকাতরতার নয় বোঝাবেন কি করে?
বাংলাভাষা সারা পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে সকলের মাতৃভাষা। পৃথিবীর তাবৎ মিষ্টি ভাষার দলে রয়েছে বাংলা। মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্বের পঞ্চম ভাষা বাংলা। তাকে এমন বিকৃত করে অবহেলা করলে নিজেকেই একদিন অবহেলার শিকার হতে হবেনাতো? মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা যদি অস্তিত্ব হারায় তবে রবীন্দ্র, নজরুল, স্বামীজী, নেতাজীও যে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে।এটা কি একবার ভেবে দেখতে হবে না!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।