আমাদের দেশে জলাতঙ্ক রোগে বছরে ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। ভাইরাসজনিত র্যাবিস জীবাণু দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হলে যে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় জলাতঙ্ক রোগ। এটি একটি মারাত্মক রোগ। যা একবার হলে রোগীকে বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বা বাঁচানো সম্ভব হয় না। প্রথমদিকে অনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ যেমন জ্বর, ক্ষুধামন্দা, কামড় স্থানের অনুভূতিতে পরিবর্তন যেমন চিনচিন, ঝিনঝিন ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়। কয়েকদিন পর থেকে তন্দ্রা, কনফিউশন,অনিয়ন্ত্রিত উত্তেজনা, লালারসের ক্ষরণ বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ঢোক গিলার সময় ডায়াফ্রাম, রেসপিরেটোরি মাসল ও কণ্ঠনালির তীব্র ব্যথাযুক্ত সংকোচন হয় বিশেষ করে পানি পান করার চেষ্টা করলে ডায়াফ্রাম ও অন্যান্য ইন্সপিরেটোরি মাসলের তীব্র সংকোচন ও ব্যথা হয় ফলে রোগীর মধ্য হাইড্রোফোবিয়া বা পানভীতি তৈরি হয়। তাই বাংলায় একে জলাতঙ্ক বলে ৷
তবে আমাদের মত অর্ধশিক্ষিত দেশে যেখানে এখনও মানুষ এত কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে যে ডাক্তারের থেকে ওঝার ওপর বেশি বিশ্বাস করে ৷ কুকুর কামড়ালে এখনও কেউ কেউ চিকিৎসকের পরিবর্তে ওঝা-গুনিন, কবিরাজ, হাতুড়েদের কাছে গিয়ে তুকতাক ও ঝাড়-ফুঁক করান। কিন্ত কোন মানুষ যদি জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়, তবে এত সব কিছুর ফল মৃত্যু। কারণ জলাতঙ্কের অন্য কোনও চিকিৎসা নেই। এক বার আক্রান্ত হলে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত মৃত্যু।বৈজ্ঞানিক প্রতিষেধকই একমাত্র প্রতিকার।
এই রোগ প্রতিরোধের উপায় হলো টিকা নেওয়া। এই ভাইরাসের অনেকরকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে তবে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন(HDCV)। অন্যান্য টিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পিউরিফাইড চিক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, ডাক ইমব্রিও সেল ভ্যাকসিন, নার্ভ টিস্যু ভ্যাকসিন ইত্যাদি। ফরাসী বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর প্রথম আবিষ্কার করেন জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন ৷
আজ এতগুলো কথার অবতারণা করলাম দুটি কারণে ৷ প্রথমত আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস ৷ দ্বিতীয়তঃ একটু হলেও মানুষ তার মনের অন্ধকারকে জয় করে যদি আলোর পথযাত্রী হতে পারে, যদি ওঝা-গুনিন, কবিরাজ, হাতুড়েদের কাছে গিয়ে তুকতাক ও ঝাড়-ফুঁক না করিয়ে অতি সত্তর আহত মানুষগুলোকে প্রথমেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, তবে মিছিমিছি এত মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে না আগামী দিনে ৷
আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক ৷ অশিক্ষার প্রভাবে আর যেন মানুষ ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তী হয়ে মৃত্যুর কারিগর হয়ে না ওঠে ৷
বিজ্ঞানের হাত ধরো ৷ অন্ধকারের নয় ৷