পিরিচ পেয়ালার ঠুংঠাং- এ ভরে ওঠে সন্ধ্যা, সাথে ভীমসেন মেজাজী আড্ডা৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কচ্ছ থেকে কোহিমা গোটা ভারতটা ঘুরে ফেলি কিংবা বলা কি যায় গোটা পৃথিবীটাই হয়ত ঘুরে ফেলি আমরা আড্ডা দিতে দিতে৷ আর বিষয়? সম্পর্ক থেকে রসায়ন, রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি কোন বিষয়ে আলোচনা হয় না বলুন তো এই আড্ডায়! যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বারেবারে ধরা পড়ে পিরিচ পেয়ালার এই সন্ধ্যার আড্ডায়৷
তেমনই এক সন্ধ্যার আড্ডায় “অবিশ্বাস নিয়ে বাঁধল গোল৷ চলল বিস্তর তর্ক৷ একেবারে চুলচেরা বিচার৷ নিত্তি মেপে এগানো৷ সমানুপাত ব্যস্তানুপাত কিছু কি বাকি থাকল? আমার আবার হিসেব কষাকষির এমন বহর দেখলে কেশব চন্দ্র নাগের কথা ভারি মনে হয়৷ আর ঐ বাঁদরটার কথা তেল মাখা ডান্ডায় কিছুটা
উঠছে আবার স্লিপ করে ততটাই নেমে আসছে৷
অবিশ্বাস অনেকটা ক্যানসারের মত৷ ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে৷ আক্রান্ত মানুষ প্রতিনিয়ত টের পায় ভেতর ঘরে সংক্রমণ বাড়ছে৷ প্রতি মুহূর্তের যন্ত্রণা আনার দানার মত ছড়িয়ে পরে শরীরের প্রতিটি কোষে৷ এতদিনের চেনা মানুষটি হঠাৎই অচেনা হয়ে ধরা দিতে থাকে তার অবিশ্বাসের ঠুলি পড়া অস্বচ্ছ দৃষ্টির সামনে৷ এতদিনের জড়ো করা খড়কুটো, কুলুঙ্গিতে রাখা স্বপ্ন, আদুরে মুহূর্ত, বিশ্বাসী কাঁধ সব যেন ক্যানভাস থেকে মুছে যায়৷ আসলে অবিশ্বাসের গড়ল একটু একটু করে চুইয়ে পড়লে জলাশয়, পদ্মবন, অরণ্য, দক্ষিন বারান্দা সব জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায়৷
অবিশ্বাস খুব অবুজ, একরোখা, জেদি৷ পরিবারের সব চাইতে জেদি বাচ্চাটার মত৷ যাকে কিছুতেই পোষ মানান যায় না৷ শেখান যায় না, রাধেকৃষ্ণ বুলি৷ নিজের সিদ্ধান্ত সন্দেহাতীত না হলে অবশ্যই দড়িটা কিছুটা আলগা করতে হয় ভাবতে হয় আমার জন্য কোন মানুষের মন পুড়বে না তো ? দড়িটা একটু আলগা না করলে, বিচার বিবেচনায় ভুল হলে জীবনকে তার খেসারত দিতে হয়৷ যেহেতু জীবন মানেই অঙ্ক কষা, তাই সব সময় প্রমাণ থাকাটা খুব জরুর৷ সন্দেহের পেছেনে প্রমাণ থাকা জরুরি৷ সন্দেহ যদি বায়বীয় বা নিরকার হয় তবে কিন্তু অবিশ্বাস শুধু জীবনের গায়ে লেগে থাক দীর্ঘশ্বাসের মতই৷ চড়া দামে কিনে নেওয়া নিত্যদিনের যন্ত্রণা৷
থোকা থোকা যন্ত্রণারা ছায়ার আশ্রয়ে বাড়ছে৷ ভজমাট সম্পর্ক চুষছে আত্মহননের নোনা জল৷ বিষাদের বেড়ে ওঠা গাছটা আভূমি বিস্তৃত৷ জীবন জমছে নিস্তব্ধতার আধার ঘিরে৷ নেফ্রনের মত জড়িয়ে পেঁচিয়ে জীবনবোধ৷ গজিয়ে ওঠা আকাঙ্ক্ষারা ঘন হতে হতে অভিমানের রূপ নিয়েছে৷ আবার ঘুরে দাঁড়াবার আগেই সেতুটা দুলে ওঠে৷ অনায়াসে অবিশ্বাস ছড়িয়ে পরে৷ জমে যায় কংক্রিটের মতো৷ আমার অস্তিত্বকে সেই কংক্রিটে আছড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো-বালিয়াড়ি করে ফেলে৷ বালিয়াড়ি গিলতে থাকে নদী ৷ ৷নদীতে মিশতে থাকে ইপ্সা৷ ইপ্সারা নীতি মানে না৷ মানে না নিয়ম ৷ অবিশ্বাস করতে হলে আগে বিশ্বাস করতে হবে, ভালোবাসতে হবে৷ কারণ ভালোবাসাই – নিউক্লিয়াস,আ-মৃত্যু কোষে কোষে ঘুরে বেড়ায় ৷
আসছে সপ্তাহে আমাদের সন্ধ্যার আড্ডায় আবার কী নিয়ে দক্ষযজ্ঞ বাঁধে দেখি! চিন্তা করবেন না, একেবার সেই বিষয়টা নিয়েই চলে আসব আগামী সপ্তাহে ” পেয়ালা পিরিচ ও একটি সন্ধ্যা”-র পরের পর্বে৷ ভালো থাকুক সকলে৷