নেহাৎ গদ্যে রতন বসাক

 স্বাধীনতার মূল্য সেই বোঝে যে সত্যি কারের স্বাধীন । 

কোন এক স্থানে থাকতে থাকতে সেখানকার সব কিছু নিজের অায়ত্বে করে নেয় মানুষ কেনো ও যে কোন জীবই । সেই স্থানটি যতই খারাপ হোক না কেন, সেই স্থানে তার থাকতেই ভালো লাগে । দিনের পর দিন থাকার ফলে সেখানকার সবকিছুই তাঁর নজরে এসে যায় । সেখানে তার থাকতে ভালো লাগে । সেই ভালো লাগাটা অন্য কোনো স্থানে আর সে পায় না । খোলা আকাশে ওড়া পাখির মতো নিজেকে মুক্ত মনে করে ।
এইভাবে থাকার পর এক সময় ধীরে ধীরে তার অজান্তে সেই স্থানটি অন্য কেউ এসে নিজের আয়ত্বে করে নেয় । সে বুঝতেও পারেনা একসময় যে সেই আগেকার মতো সে আর মুক্ত নেই । তার সবকিছুতেই যেন অন্য কেউ একটা বাধ্যবাধকতা করে দিয়েছে । সে নিজের ইচ্ছা মতো আর কোন কিছুই করতে পারে না । ধীরে ধীরে সে একসময়ে পরাধীন হয়ে যায় । অন্যের কথা মতো তাকে চলতে হয় । আগেকার মতো আর তার মনে খুশি থাকে না ।
এইভাবে দিনের পর দিন পরাধীন থাকার পর । এক সময়ে সে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে । এক সময়ে সেই মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিল । এখন অন্যের ইশারা মতো তাকে চলতে হয় । নিজের ইচ্ছা খুশিমতো না চলতে পেরে মনের মধ্যে একটা আক্রোশ সৃষ্টি হতে থাকে । এরপর একদিন সে হঠাৎই নিজের থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করে । এতদিন যার ইশারায় চলছিল তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করে দেয় । মনের শক্তি ও সাহস যুগিয়ে তাকে প্রত্যুত্তর দিতে শুরু করে ।
আসলে এটা তো তার নিজের স্থান । বাইরের অন্য কেউ এসে ধীরে ধীরে সেই স্থানটিকে নিজের অায়ত্বে করে নিয়েছে । আর সেখানকার সব সুবিধা ভোগ করে নিজের শাসন চালাচ্ছে । পরাধীন থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো । তাই সে স্বাধীনতার জন্য উঠে পড়ে লাগে, সে ভয় পায় না এর জন্য যদি মৃত্যুও অাসে । সে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে নেয়, হয় স্বাধীনতা নয়তো মৃত্যু । আর সেই ভাবেই সে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য এগোতে থাকে ।
এরপর একদিন সে অন্যায় ভাবে আসা আগন্তুককে বাধ্য করে তার নিজের স্থান থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য । কেননা সে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে যে তাকে এখান থেকে ফিরিয়েই ছাড়বে । তারপর সেই পরাধীন ব্যক্তির আক্রোশের সামনে থেকে অন্যায় ভাবে আসা আগন্তুক ব্যক্তি বাধ্য হয় ফিরে যেতে । আবার নতুন করে সেই পরাধীন ব্যক্তি স্বাধীন অনুভব করে নিজেকে । যদিও এই স্বাধীনতা পাওয়া অত সহজ হয় না তার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয় ও অনেক বলিদান দিতে হয় ।
স্বাধীনতার ফল যে কত মিষ্টি সে একমাত্র সেই জানে যে স্বাধীন । পরাধীনতার শৃঙ্খলে থাকলে মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট লুকিয়ে থাকে । সে মানুষ কিংবা যে কোন জীবই হোক না কেন । একটা পশু কিংবা পাখিকে আমরা যখন বাড়িতে বেঁধে রাখি নিজেদের শখ পূরণ করার জন্য । যতই সুযোগ-সুবিধা দাও না কেন তাকে তখন সে কিন্তু পরাধীন থাকে । নিজের ইচ্ছা মতো আর কিছুই সে করতে পারে না । তাকে যখন আমরা মুক্ত করে দিই কোনো খোলা স্থানে । তখন সে নিজে অনেক সুখে ও খুশিতে থাকে আমাদের দেওয়া সব সুখ সুবিধা না পেয়েও ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।