Cafe কলামে রাজদীপ ভট্টাচার্য – ৬

প্যাস্টেল কালার – ৬ 

ফ্লোরাল ডিজাইন

পুরনো ইঁট বসানো রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম লক্ষ্যহীন। দুপাশে প্রাচীন ইঁটের দেওয়াল, তার কোমলাঙ্গে পঙ্খেরকাজ। সাপ-লতা-পাতা, স্থবির ময়ূর। পথচারীরা কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছে না মুখ তুলে। সবাই নিজস্ব হেঁটে চলায় মগ্ন হয়ে আছে। মাঝে মাঝে দেওয়াল ফুঁড়ে উত্তুঙ্গ পোর্টিকো। দু’একটি ঝুলন্ত টবে উপচে পড়া অর্কিড। তীব্র রঙিন ফুল।

এমন উপচে পড়া পোর্টিকোর ফ্লোরাল ডিজাইনের আড়াল থেকে সহসাই এক সোনালি চুল নারী ইশারা ছুঁড়ে দিল। আমাকে! আমাকেই। সরাসরি তাকাতেই ভ্রূপল্লবে ডাক। চন্দনের বনের খোঁজে আমি ফিরলাম। আলো-আঁধারি সিঁড়ি বেয়ে উঠে চলেছি। গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে উঠছি। প্রতিটি ধাপ ত্রিকোণাকার। নির্দিষ্ট জ্যামিতি পাক খাওয়াচ্ছে আমায়। ক্রমশ উৎরাই বেয়ে চলেছি। মানুষজনের উপস্থিতি কানে বাজছে। আমার মায়ের কন্ঠস্বর। ভেসে আসছে টিভিতে সংবাদপাঠের একটানা শব্দ। বাবার খুসখুসে কাশি। হারমোনিয়ামে বোনের ওঠানামা। পাশের বাড়ি থেকে ছিটকে আসা শাঁখের আওয়াজ। বাজারের আন্তরিক দরদস্তুর। ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্ট। শ্রীধর স্যারের রোলকল। লেফট উইং থেকে বাদল চিৎকার করে বলটা পাস করতে বলছে বারবার। অথচ আমি অবিরাম খুঁজে চলেছি সেই সোনালি চুল, বাদামী চোখ।

কানে ভেসে আসছে আমার বউ এর গলায় গুনগুন সুর। ডালে সম্বরা দিচ্ছে কোথাও, উড়ে আসছে ঝাঁঝ। আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠে চলেছি। কোনো দরজা বন্ধ, কোনোটা খোলা। ঘরে ঢুকে দু’পাঁচ মিনিট কাটালেই মনে পড়ছে ভ্রূপল্লবে ডাক। কোথাও তিষ্ঠোতে পারছি না। না ঘরে না বাইরে। মনে পড়ছে কত পথে পা রাখা হল না আজও। অবিরাম হাওয়া কেটে উড়ে যাচ্ছি। ট্রেনের জানলা থেকে দেখা প্রকৃতির মতো চারপাশ। ছিটকে ছিটকে জীবন থেকে সরে যাচ্ছে চেনা-অচেনা দৃশ্য। মেঘ-বৃষ্টি-ফুল-পাখি-লতা দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছি। অবসন্নতার চূড়া ছুঁয়ে বুঝেছি সব সিঁড়ি একদিন শেষ হয় আকাশমুখো দরজায়। বুঝেছি এ জীবন এক অন্তহীন অভিসারপথ। সেই মায়াবী চোখের খোঁজে সিঁড়ি ভেঙে চলা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।