গল্পবাজে রতন বসাক

” মানুষ বিশ্বাস, আস্থা ও কল্পনা করেই ভগবানের মূর্তি মাটি দিয়ে তৈরি করে । “

পৃথিবীতে ভগবান আছে কি না কিংবা কেউ দেখেছে কি না সেটা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয় । তবে আমার মনে হয় এই পৃথিবীতে প্রাণীদের মধ্যে মানুষই কল্পনা করে ভগবানকে তৈরি করেছে । আসলে আমার মনে হয় ভগবান হলো একটা মহা শক্তি । যে শক্তিকে আমরা বিভিন্ন রূপে দেখি ও কল্পনা করি । মানুষ তার নিজের নিজের কল্পনা, শ্রদ্ধা, ভক্তি উপর বিশ্বাস করে নিজের ভগবানকে বানিয়ে নিয়েছে ।
আর তাই জন্যেই এই পৃথিবীতে এক এক গোষ্ঠীর মধ্যে এক এক ধর্মের অবস্থান দেখা যায় ।
যাই হোক আমরা অর্থাৎ হিন্দুরা কল্পনা করে ভগবানের রূপ বানিয়েছি মাটি, পাথর কিংবা অন্যান্য কিছু দিয়ে । ভগবানের সুন্দর একটা মূর্তি তৈরি করে আমরা তাকে পূজো করি । তার ওপর আমাদের অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আছে । আমরা বারো মাসে তেরো পার্বণ করে থাকি । তিথি, নক্ষত্র ও সময় অনুযায়ী আমরা ভগবানের মূর্তি বানিয়ে তার পূজা করি ।
বিশেষ করে কুমোর গোষ্ঠীর মানুষেরা ভগবানের মূর্তি মাটি দিয়ে বানায় । তার ওপর রং ও কারুকার্য করে সুন্দর একটা মূর্তি তৈরি করে দেয় আমাদের । সেই মূর্তি আমরা বাড়ির মন্দিরে কিংবা প্যান্ডেলে বসিয়ে তাতে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের দ্বারা প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে আমরা পূজো করি । কোন মুর্তির পূজো একদিনে হয়ে যায় আবার কোন কোন মূর্তির পুজো বেশ কয়েকদিন ধরে চলে । আমরা সেই মাটির মূর্তিকে সরস্বতী, লক্ষী, দূর্গা, শিব ও বিভিন্ন দেবদেবীর নামে পুজো করে থাকি ।
আসলে একটা ভগবানের মূর্তি আমাদের মন ও ধ্যানকে স্থির করে আস্থা, বিশ্বাস ও ভক্তির দিকে নিয়ে যায় । মুর্তি পূজোতে আমরা বিশ্বাস করি আর এই বিশ্বাস ও পুজো যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আর আগামীতেও চলতে থাকবে । এই পুজো উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করা হয় আর যেখানে সর্ব ধর্মের মানুষ এসে আনন্দ উপভোগ করে । ধর্ম যার যার হতে পারে কিন্তু উৎসব তো সবার ।
তবে যারা এই মাটির মূর্তি বানায় তারা কঠোর পরিশ্রম ও অনেক অর্থ ব্যয় করে এই মূর্তি বানিয়ে থাকে । এত সুন্দর ও ভালো একটা কাজ করার পরেও তারা আজও সেই তিমিরেই রয়ে গেছে । তাদের কারোরই আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই । কেননা এই কাজ করে তারা বারো মাস সংসার চালাতে পারে না । পুজোতো বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিনেই হয় মাত্র । ওদের পুজোর সময় কিছু অায় হলেও বছরের বাকি সময় খুবই খারাপ অবস্থায় দিন যাপন করতে হয় ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।