|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় রিয়া ভট্টাচার্য
by
·
Published
· Updated
মৃত্যুদূত
অনেকক্ষণ থেকে শব্দটা ভেসে আসছে।
চিলেকোঠার ঘরখানা ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর থেকে বন্ধই থাকে আজকাল। যতসব বাতিল জিনিসের আশ্রয় ওই ঘর, বাড়ির লোক সেরকম মাড়ায় না ঘরখানা। ঠাকুমাও তো মৃত্যুর আগে বাতিলই হয়ে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের কাছে। মাথার অল্প দোষ ছিলো তাঁর, সারাদিন বিড়বিড় করে ছড়া কাটতেন, আর…
ভয় পেতেন। বিষম ভয়। এত ভয় কাউকে কখনো পেতে দেখেনি মিমো। সারাদিন চিলেকোঠার ঘরখানায় বসে অদ্ভুত এক চিহ্ন আঁকতেন দেওয়ালে, তাতে নাকি ভয় পালিয়ে যায়। মা ঘরের দরজার বাইরে খাবার দিয়ে যেতেন, অর্ধেকদিন তা পড়েই থাকতো, ছুঁয়েও দেখতেন না ঠাকুমা। চিহ্নটা আজ এতদিন পরে আর ঠিকঠাক মনে নেই মিমোর, সময়ও তো কম হলোনা, দশ – দশটা বছর… ঠাকুমা ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর থেকে আর এবাড়ির কেউ ছাদে আসেনা৷ কালেভদ্রে এলেও চিলেকোঠার ঘরখানার ছায়া মাড়ায়না কেউই।
আজ আবার মেঘ করেছে। ঠিক সেইদিনটার মতো। সেদিনও ধপধপ আওয়াজ হচ্ছিলো ছাদে, সেইসঙ্গে শোঁ শোঁ বইছিলো বাতাস। আজও তাই। কিন্তু মিমোর আজ হলো কি! ধপধপ শব্দটা পেয়ে কেনই বা সে ছাদে এলো! নিয়তি ডাকছিলো কি!
পা ঘষটে হাঁটছে একটা কালো ছায়া। হাওয়ায় উড়ছে তার কালো আলখাল্লাটা, হাতের ধারালো অস্ত্রটা চকচক করছে বিদ্যুৎচমকের সাথে। পিপাসার্ত চোখে চেয়ে আছে সে মিমোর দিকে, চোখের অন্ধকার কোটরে উঁকি দিচ্ছে জ্বলন্ত ক্রোধ! মিমোর মনে পড়ে ঠাম্মার কাটা ছড়া, ” মেঘ আর না চমকা /মৃত্যুদূত থমকা…”, চিলেকোঠার ঘরখানার ভেতরের দেওয়ালে আঁকা ধুলোমাখা চিহ্নগুলো জ্বলজ্বল করছে… ওম চিহ্নকে ঘিরে আছে ছয় পাপড়ির একটা পদ্মফুল…
মৃত্যুদূত নেমে এসেছে পৃথিবীতে তার বলি গ্রহণের জন্য, চিলেকোঠার বন্ধ দরজাটা ভেতর থেকে ঠেলে খোলার চেষ্টা করছে কেউ। মিমোর দুচোখে নেমে আসছে অন্ধকার, মৃত্যুর অন্ধকার।।