কিছু অনুষঙ্গ স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়। খুব কড়া চা কিংবা প্রচন্ড ঝাল দেওয়া রান্নার মতোই তা আসলের জায়গায় দিব্যি চুপচাপ বসে থাকে। সেই কবে কোনো পিকনিকে মাংসে নুন বেশি হয়েছিল বলেই আজও মনে রয়ে গেছে। নাহলে অমন চড়ুইভাতি জীবনে অনেক পেরিয়ে এসেছি। এভাবে থাকতে থাকতে একদিন সেই স্মৃতি হয়ে ওঠে সত্য। তখন তাকে ভাঙতে চাইলে কেঁচেগণ্ডূষ করতে হয়।
মেচেদা বললেই আমার মনে পড়ে চিঁড়ে-দই। লাল লাল চিঁড়ে, তার সাথে পয়োধি। সেই যখন দীঘা যেতে হাওড়া থেকে রানিং বাস ধরে উঠে পড়ার দিন ছিল আমাদের, তখনকার কথা। হঠাৎ বাঁক নিয়ে বাস দাঁড়াতেই ঝাপটে আসা সমুদ্রের হু হু শব্দ। ঢেউ আর বাতাসের তুমুল হাতছানি। আর কোনোদিনই হয়তো ওভাবে যাওয়া হবে না। ফলে মেচেদায় দই- চিঁড়ে খাওয়ার দিনও পেরিয়ে এসেছি নিশ্চয়। তবু দীঘা বললেই আমার মনে হবে, আজীবন মনে পড়বে মেচেদায় নেমে লাল চিঁড়ে আর দই দিয়ে মেখে খাওয়ার কথা।
ডুয়ার্সের ইন্দিরছিন্দিরে গাড়ি নিয়ে ঘুরছিলাম আমরা। মূর্তি-জলঢাকা-ডায়না নদী। রঙিন জলে ভেজা পাথর। ছোট্ট ছোট্ট মাছের চুলবুলি। রোডসাইড দোকানে মোমো, থুকপার দিন। লোহার ব্রিজ পেরিয়ে গিয়ে গাড়ি থামলো। একঝলক ঝালং দেখতে নামলাম আমরা। ব্রিজের ঠিক গোড়ায় প্রাচীন প্রকান্ড বট গাছ। আকাশ ঢেকে আছে। আর সারা গাছ জুড়ে অজস্র ময়নার ঝাঁক। সাথে কিছু টিয়া। একটা অদ্ভুত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। ময়নার ডাকে, মিষ্টি সুরেলা ডাকে। টিয়ার চেঁচামেচি। সবমিলিয়ে অপূর্ব কোরাস। তাই ঝালং মানে আজও আমার কাছে এক ঝাঁক ময়না। সবুজ পাতার ফাঁকে হলুদ বিদ্যুৎ।