প্রবন্ধে রতন বসাক

সময় এসে গেছে বুদ্ধের মতবাদকে মেনে চলার জন্য

বুদ্ধ কথার অর্থ হলো জ্ঞানপ্রাপ্ত ও জাগরিত মানুষ বোঝায় । বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিবারণের উপায় । বাসনাই সব দুঃখের মূল কারণ বুদ্ধের মতে বলা হয় । নির্বাণ কথাটি বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে নিভে যাওয়া । অর্থাৎ ভোগ বাসনা লালসা থেকে নির্বাণ পেতে হবে জীবনে দুঃখকে সরিয়ে রাখতে গেলে ।
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি এর অর্থ হলো আমি বুদ্ধদেবকে স্মরণ করি । তিনি দেখেছেন এই সংসারে কেউই সুখী নয় । প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই দুঃখ ভরে আছে সারা জীবন ধরে । এই দুঃখ কষ্টের কারণ জানার জন্যই তিনি একদিন সংসার ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়েন । তিনি বুঝতে পারেন যে দুঃখ জীবনের একটা অংশ । এবং তার থেকে মুক্তি পেতে হলে বাসনা ত্যাগ করে আধ্যাত্বিক উপায় নিজেকে জাগরিত করতে হবে ।
আজও সমাজের কোন মানুষই সুখী নয় সবার মনে চাই আরো চাই শুধু । এই শুধু আরো চাই ইচ্ছেটাই মানুষকে দুঃখী করে চলেছে দিনের পর দিন । কেউই নিজের অবস্থানে সুখী কিংবা খুশি নয় । যার নেই সেও ছুটছে পাওয়ার জন্য, আর যার আছে সেও ছুটছে আরো পাওয়ার জন্য । পাওয়ার আগে পর্যন্ত মনে ভাবনা থাকে যে আমি সুখী হব ওটা পেলেই । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে যে, পাওয়ার পরেও সে সুখী হয় না । ভোগের পিছনে সবাই ছুটছে । আর যত ছুটছে ততই ভোগের পরিমাণ বেড়েই চলেছে ।
মানুষকে ভাবতে হবে যে ভোগে কোন সুখ নেই । একবার ত্যাগ করে দেখো তাতেই সব সুখ রয়েছে । ভোগ বাসনায় কোন সময়ও মন ভরে না, যতই করো না কেন । তবে নিজের অতি প্রিয় কিছু জিনিস কখনো ত্যাগ করে দেখো মনে কত শান্তি মেলে । সবাই ত্যাগ করতে পারেনা মোহের জন্য, ত্যাগ করা বড়ই কঠিন কাজ । তবে একবার যে ত্যাগ করেছে কোন কিছু, সেই বোঝে ত্যাগের মাহাত্ম্য ।
আজকের যুগে কারো মনেই শান্তি নেই সবার মনে হিংসা বিদ্বেষ ভরে আছে । অন্যের থেকে আমি আরো ভালো থাকতে চাই । কোন সময়ও ভাবি না যে ওকে আমি ভালো রাখতে চাই । নিজে ভালো থাকার চেয়ে কাউকে ভালো রাখতে পারলে ; মনে যে কত খুশি হয় তা সেই জানে । সংসারে থেকেও আমরা মায়া, মমতা, মোহ, ভোগ, বাসনা, লালসা ত্যাগ করতে পারি । এগুলোর নির্বাণ করে আমরা অনেক শান্তিতে থাকতে পারি ।
বুদ্ধের মতবাদ গুলো আমরা যদি মেনে জীবনে চলি তাহলে অনেক সুখ ও শান্তি পেতে পারি ও দুঃখ থেকে অনেক দূরে থাকতে পারি । তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন তবুও তিনি সব ছেড়ে দুঃখ ও কষ্টের কারণ খোঁজার জন্যই বেরিয়ে পড়েন । আর একদিন অবশেষে বোধিসত্ব লাভ করে তিনি সব বুঝতে পারেন । আর মানুষকে বোঝাতে থাকেন তার মতবাদ । এখন সত্যিই সময় এসে গেছে আমাদের বুদ্ধকে স্মরণ করার ও তার মতে চলার ; যদি আমরা জীবনে দুঃখ কষ্টকে না পেতে চাই ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।