|| বাইশের বাইশে শ্রাবণ একটু অন্যরকম || বিশেষ সংখ্যায় রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

আমি ও রবি

আকাশের ঘনীভূত রহস্যে তুমি ঘিরে থাকো৷ কে যেন আমার বোধকে অমানিশার মত গ্রাস করে ৷ তোমাকে কতদিন গেরুয়া উঠোনের তুলসী তলায় নামাবলি গায়ে দেখেছি ৷ প্রতিদিন ভোরের আগলে যখন ঘাসের ডগার হীরের কুঁচিগুলো আমার গোড়ালিতে চুমু খায়, তোমার অনাবৃত পায়ের পাতায় আমি ফুলের স্তবককে ফুটতে দেখেছি ৷ তারপর আমরা এক সাথে হেঁটে গেছি আল পথ ধরে ৷ দেখেছি প্রজাপতিদের গান্ধর্ব বিবাহ ৷ গাছেদের উৎসব ৷ বাতাসে তখন তোমার গন্ধ “ম” “ম” করছে ৷ কতবার উৎসাহী প্রেমিকের চোখদুটোয় তোমারই ভালোবাসা ভেসে উঠেছে ৷

যখন ঝড়ের সূচনায় দিগম্বর আকাশের বুকে হঠাৎ দামিনীর বিচরণ, আমি অকুতোভয়ে মুখ গুঁজি তোমারই গীতবিতানটাতে ৷ তুমি ধীরে এসে, কপালে যেই এঁকে দাও চুম্বন চিহ্ন, আমি তখন বরাভয় ! আমি মুহূর্তে বীর্যবতী হই ৷ চিত্রাঙ্গদা হই ৷ বনভাসি জোৎস্নায় তোমাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া আমার বহু কালের সুকুমারি চাল ৷ আমার ঠোঁটে তর্জনী রেখে মিহিন স্বরে বলে ওঠো ” Hold your tung and let me love ” স্বপ্ন মদির নেশায় শিরায় শিরায় যেন মদিরা ছুটে বেড়ায় ৷ নিঃস্ব রিক্ত করে নিজেকে সাজিয়ে দিই, নৈবেদ্যের থালিতে ৷ শরীরে কলঙ্কের জালকাঠি বেঁধে অপাপবিদ্ধ সারসের মত বারবার বদল করি বাসা ৷ .
ঘর বাঁধার আশে বারবার আগুন ক্রীড়া ৷ “নষ্ট নীড়”, চরিত্রহীনা ৷ বোঝাতে পারিনি প্রতিটি ভোরে, প্রতিটি প্রেমে তোমার প্রতিভূ খোঁজা আমাকে বহুচারী করেছে ৷ তোমার কাছে আশ্রয় চেয়ে “ছিন্নপত্রে” ঢেকে দিয়েছি প্রশস্ত আকাশ, নদীর কলেবর ৷ তুমি আসবে বলে বিলি কেটে চুল বেঁধেছি ৷ বেল ফুলের মালা লাগিয়েছি খোঁপায় ৷ সুগন্ধী আতর মেখে নদীর ঘাটে নিষ্পলক চেয়ে থেকেছি তরঙ্গের দিকে৷ ইহ জগতে… পরপারেও…

তবু যেন, কাদম্বরীরা মরে না! প্রতিটি সফল রবির পেছনে, তাঁরা নিঃশব্দে বেঁচে থাকে আজীবন ৷

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।